একদিন এই উনুনেই রাঁধতাম খাবার
ক্ষুন্নিবৃত্তির প্রয়োজনে তোদের সবার।
জনে জনে থালা ছিলো, গ্লাস-মগ ছিল,
খাবার পরে একসাথে গল্প করাও ছিল।


একে একে তোরা রুমগুলো খালি করে গেলি,
যার যার পথ ধরে বাড়ি ছেড়ে গেলি।
রান্নাবাড়ার তৈজসগুলো সব ছোট হয়ে এলো,
উনুনের আগুন ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে এলো।


যেদুটো হাত একদিন আগুনে পুড়েও পোড়েনি,
চুলোর গনগনে আগুন যে মুখ ঝলসাতে পারেনি,
আজ সে দুটো হাত কোন কিছু না ধরেও কাঁপে,
সে মুখ আজ শুধু তোদের পথপানে চেয়ে থাকে।


তোরা একে একে চলে গেলি যার যার পথে,
এ টেবিলে আর কখনো হয়না খাওয়া এক সাথে।
তোরা নেই বলে গাছগুলোও যেন ফলহীন হয়ে গেলো,
বর্ণিল পাতাবাহারগুলো ধূলি ধূসরিত হলো।


এত বড় বাড়ী, সাথে কেউ থাকার কথা নিরর্থক ভাবনা।
আপন হাতে গড়া সংসারে আমি সহি নীরবতার যাতনা।
সময় হয়েছে আজ নিজ হাতে এই সংসারে তালা লাগাবার,
নিরুদ্দেশে যাবার আগে, ফুরসৎ নেই আর কিছু ভাবার।


পাদটীকাঃ  আমাদের বাড়ীর দক্ষিণে লাগানো পাতাবাহারের গাছগুলো অতীত স্মৃতির প্রতীক। ফলহীন গাছগুলো পরিত্যাক্ত বর্তমানের প্রতীক। অন্তহীন ঘুঘুর ডাকগুলো যেন অনিবার্য ভবিষ্যতের প্রতীক। একদিন এই ভিটেবাড়ীতে আমাদের আর কেউ বসবাস করবেনা, একথা মনে হলেই মনটা হুহু করে উঠে! মায়ের এই আক্ষেপটুকু হৃদয় দিয়ে অনুভব করি, কিন্তু এটাই নিয়তি!


আদিতমারী, লালমনিরহাট।
০৮ অক্টোবর ২০১৪