বেড়াতে গিয়েছিলেম মার্কিণ মুলুকে, ফ্লোরিডার
নেপলসে, এক বন্ধুর বাড়ীতে। সেখানে থাকতেই,
তার এক মিসরীয় বন্ধুর অকস্মাৎ মৃত্যুর খবর আসে।
চটজলদি সহগামী হই তার সাথে। দাফন হবে টাম্পা
বে'র কাছে। 'স্কাইওয়ে মেমোরিয়াল গার্ডেন্স' এর
এক সমাধিস্থলে, শ্যামলিমায় ঘেরা নীরব প্রান্তরে।


বন্ধুর বাড়ী থেকে প্রায় ঘন্টা তিনেকের ড্রাইভ।
বব গ্রাহাম সানশাইন স্কাইওয়ে ব্রীজের পর আরো
কিছুদূর যেতে হয়। পৌঁছে দেখি দাফন-পর্ব প্রায়
শেষের পথে, মাটি দেওয়া হচ্ছে। নিঝুম নিরিবিলি
পরিবেশে আমিও একমুঠো মাটি ছড়িয়ে দিলাম,
আর শান্তি কামনা করলাম শায়িত সকলের জন্যে।


অনতিদূরেই একটি সমাধিফলক নজর কেড়ে নিল।
সবুজ ঘাসে প্রায় চাপা পড়া প্রস্তর ফলকে উৎকীর্ণ
ছিল এক বাঙালী মায়ের নাম, 'নাজমা বেগম'।
জন্ম-মৃত্যুর তারিখ দেখে ঠাওর করেছিলাম, ৭৫
বছর বয়সে এ মায়ের মৃত্যু হয় স্বদেশ থেকে দূরে,
বিদেশ বিভুঁইয়ে। সেখানেই রয়ে গেলেন, চিরতরে।


হয়তোবা তিনি কোন সন্তানের ডাকে বিদেশে পাড়ি
জমিয়েছিলেন। হয়তো পরিণত বয়সে রোগাক্রান্ত হয়ে
স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছিলেন। হয়তো কোন কারণে
তার দেহ দেশে পাঠানো সম্ভব হয় নাই। ষোল কোটি
বাঙালীর দেশের কবরস্থানগুলোর মত জনারণ্য নয়
তার শেষ নিবাস। তারতম্য কি কিছু হবে তাতে?


সেখানে আরও অন্যান্য ধর্মালম্বীদেরও সমাধি ছিল।
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক অনন্য নজির। ধারণা হলো,
শুধু পরিদর্শক আর গোরখোদক ছাড়া সেখানে তেমন
কারো যাতায়াত নেই। তাই নাজমা বেগমের কবর দেখে
মনটা ব্যথিত হলো। এখানে কেউ কখনো আসে কিনা, জানিনা।
তাই তার জন্য রেখে এলাম, নীরব কিছু আকুতিভরা প্রার্থনা।


পাদটীকাঃ মনের মাঝে এ কবিতার জন্ম হয় ২৭ মে ২০১৩ তারিখে, স্কাইওয়ে মেমোরিয়াল গার্ডেন, টাম্পা বে, ফ্লোরিডায়। নাজমা বেগমের সমাধি ফলকের ছবিটিই হলো আমার আজকের প্রোফাইল পিকচার। সেখানে লেখা আছেঃ
নাজমা বেগম - মার্চ ২৩, ১৯৩৭ - অগাস্ট ১১, ২০১১


ঢাকা
০৯ মার্চ ২০১৪
কপিরাইট সংরক্ষিত।