সকালের হাঁটা বেশ অনিয়মিত হয়ে গেছে আজকাল,
কালে ভদ্রে যাই, প্রায়শঃই একা। আগে স্ত্রীও যেত,
এখন আর যেতে চায়না যখন তখন। যদিওবা যায়,
দূরত্ব বাড়ে পায়ে পায়ে, তাই বিরক্ত হয়ে কেটে পরে।


সঙ্গীহীন হাঁটা বেশ ক্লান্তিকর। সেটাকে হাঁটা বলেনা,
বলা যায় শরীরটাকে ঠেলে নেয়া। এভাবেই হাঁটি।
আগে মাঝে মাঝে কানে ইয়ারফোন লাগাতাম,
শুনতাম বিবিসি'র খবর বা কোন এফ এম ব্যান্ড।


এখন লাগাইনা কোন ইয়ারফোন, কান খোলা রাখি।
নিঃসঙ্গ হাঁটাকে উপভোগ করার উপায় পেয়ে গেছি।
খোলা কানে হাঁটতে হাঁটতেই পাই বিবিসি'র খবর,
সহগামী হাঁটুয়া ভাইবোনদের কত যে জ্ঞানের বহর!


কেউ কেউ হাঁটেন কেতাদুরস্ত পোষাকে, চুল পরিপাটি,
যেন হাঁটা শেষে কেডসটা বদলে নিয়েই চলে যাবেন,
কোন আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথি হয়ে।
তাঁরা একাই হাঁটেন, দৃপ্ত পায়ে, সবার নজর কেড়ে।


আবার কেউ কেউ হাঁটেন, একই পোষাকে প্রতিদিন,
যেন হাঁটার জন্যই তোলা থাকে তাদের এই পোষাক।
মুখে শয্যাত্যাগের শোক নিয়ে ঢুলুঢুলু চোখে হেঁটে যান,
স্পাউস আর ডাক্তারের কঠিন শাসনে নিষ্পেষিত তারা।


কিছু স্মার্ট গৃহবধূ হাঁটেন পরিপাটি হয়ে, মেকাপ নিয়ে,
গানের তালে তালে হেঁটে যান, একেবা্রেই বেখেয়ালে।
কেউ হাঁটেন শাড়ীর শাথে কেডস পড়ে, হম্বিতম্বি করে,
সঙ্গী পেলে ভুলে যান, আরো অনেকে হাঁটেন ওপথ ধরে।


এক প্রখ্যাত হৃদ-সার্জন বলেছিলেন, হৃদরোগী মহিলাদের
দুই আনা ভোগেন স্বামীর পরকীয়া প্রেমের আশঙ্কা থেকে,
আর দুই আনা অবাধ্য সন্তানের জ্বালাতনে, আর বাদ বাকী
বার আনা ভোগেন আয়া-বুয়া চাকর নকরের অত্যাচারে।


এ তথ্যের সারবত্তা খুঁজে পাই কান খুলে হাঁটার সময়।
বুয়া নিয়ে বিপত্তি সবার, ঘরে ঘরে। অভিজ্ঞ যারা, তারা
বুয়া সম্পর্কিত জ্ঞান দান করে যান অবলীলায়, আর যত
পাংশুমুখ বুয়াহীন শ্রোতারা শুনে যান প্রতিকারের আশায়।


জাগতিক এসব সমস্যা নিয়েই নারীদের বেঁচে থাকা, এসব
ছোটবড় সমস্যা সামাল দিয়েই একজন গৃহবধু সাজায় তার
সোনার সংসার। ঝামেলার যতকিছু সবই নিতে হয় তার
নিজের দুটি কাঁধে। তবুও কত খুশী তারা নিজ সংসারে!


ঢাকা
২৮ মার্চ ২০১৩
কপিরাইট সংরক্ষিত।