কিশোর বয়সে এক ঝড়ো সন্ধ্যায়,
ছাতা হাতে এসে তুমি দাঁড়ালে দরজায়,
চেয়েছিলে ধার নিতে কিছু গল্পের বই,
ছিলনা তোমার আর বলার কিছুই।


ছিলনাতো সে সময়ে হুমায়ুন, মিলন,
তবে ছিল তারাশঙ্কর, নীহার রঞ্জন।
সমরেশ বসু আর বিমল মিত্র,
নিপুনভাবে আঁকতেন সমাজ চিত্র।


তাদেরই একটা বই দিলেম তোমাকে,
পকেটের রুমাল দিয়ে প্রচ্ছদটা ঢেকে।
বলেছিলেম, দেখো যেন দুরন্ত হাওয়ায়,
ভিজে না শরীর তোমার বৃষ্টির ঝাপ্টায়।


কিছুই না বলে তুমি সেই বরিষনে,
পিছু ফিরে চলে গেলে আপন মনে।
রেখে গেলে প্রশ্ন কিছু, ভাবাতে শুধুই,
ছিলনা কি আর তোমার বলার কিছুই?


তাকিয়ে দেখছিলাম আমি দৃষ্টি অপলকে,
আঁধারে মিলিয়ে যাওয়া সেই ছায়াটিকে।
দৃষ্টির অগোচরে তুমি যেই চলে গেলে,
অমনি ফিরে আসি আমি পড়ার টেবিলে।


ধীরে ধীরে যায় দিন, মাস পার হয়,
বইটি তোমার কাছে অধরাই রয়।
ফেরত পেলাম যখন ছয় মাস পরে,
মনে হলো দিয়ে গেলে কিছুই না পড়ে।


রুমালটির কথা আমার ছিলনা মনে ,
মনে হলো যখন তুমি বললে গোপনে;
জানতে চেয়েছিলে যদি ফেরত না পাই,
এমনই কি ক্ষতি হবে, যারপরনাই?


প্রশ্ন যেমন সহজ, ঠিক তেমনি উত্তর,
কি আর এমন ক্ষতি, ভাবি মনের অন্তর।
বলে দেই সরাসরি, কোন ক্ষতি নাই,
তবে একটি কথা আমি তবু জিজ্ঞাসিতে চাই।


ছোট্ট এই রুমাল তুমি কোন প্রয়োজনে,
রেখেছো তোমার কাছে, কি আছে মনে?
বলেছিলে, অনুভবে পেতে মোরে সারাটি ক্ষণ,
রেখেছো কাছেতে সেটা, কথাটি গোপন।


রুমালতো নয় শুধু এক টুকরো কাপড়,
কত ছবি আঁকা থাকে ওটার ভিতর।
কিশোর বয়সের সেই স্মৃতি অবিনাশী,
জীবনের স্রোতে গেছে কোথা যেন ভাসি।


জীবন তো নয় এক সরল রেখা,
হোকনা যতই শুধু ফিরে ফিরে দেখা।
হারিয়ে যায় কত কিছু জীবনের বাঁকে,
স্মৃতি হাতড়ালেও সব অদেখাই থাকে।


ঢাকা
২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
০৯ ফাল্গুন ১৪১৯
কপিরাইট সংরক্ষিত।