কোন এক রিক্তার কথা আমার আজও মনে পড়ে,
বিশেষ করে যখন কোন দুঃখিনী নারীকে দেখি।
কিশোর বয়সে একদিন তাদের বাসায় বেড়াতে  
গিয়েছিলাম, মা-বাবার সাথে, সন্ধ্যার কিছু পরে।


বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বাসায় মোম জ্বলছিলো,
আলো আঁধারিতে তার মুখটি আমি দেখেছিলাম।
জগতের সব দুঃখ যেন এসে তার মুখে জমেছিলো।
ম্লানমুখে হাসি টেনে সে বেশ আপ্যায়ন করেছিলো।


এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে রিক্তা তার মাকে হারিয়েছিল,
সে ছিল তখন মাত্র ষোড়শী, জীবনের আলপনাগুলো
কেবল রঙ মেলতে শুরু করেছিল। প্রজাপতির মত
যখন তখন, যেখানে সেখানে মনটা উড়ে বেড়াতো।


বছর না ঘুরতেই তার প্রৌঢ় বাবা ঘরে নিয়ে এলো
চোখ ঝলাসানো এক অষ্টাদশী পরীকে, প্রচুর গয়না
পরিয়ে। পুতুলের মত তিনি সেজে ঘরে বসে থাকতেন,
পাড়ার সবাই এই অষ্টাদশী পরীকে দেখতে আসতো।


তার নতুন মা তার চেয়ে মাত্র দু'বছরের বড় ছিল,
বয়সের নৈকট্য তাদের মাঝে অতি সহজেই সখ্যতার
নিবিড় সম্পর্ক গড়ে দিয়েছিল। কিন্তু বন্ধুত্বের মাঝেও,
একটা দুরত্ব গড়ে দিয়েছিল সংসারের এক গোছা চাবি।


তার নবমাতা দ্রুত বুঝে গিয়েছিলেন, তিনিই মালকিন,
তিনিই সংসারের রাণী। সংসার কাননে তিনিই একমাত্র
গোলাপ, আগের ফুলগুলো আগাছামাত্র। পাশে থাকলেও
আগাছা হিসেবেই তারা বড় হবে। রিক্তাও তাই হচ্ছিল।


সেদিনের পর থেকে আর কোনদিন রিক্তার দেখা পাইনি।
তার কথাও শুনিনি কারো কাছ থেকে। স্বাধীনতা যুদ্ধ
শুরু হবার পর থেকে আমাদের দুটো পরিবার সেই যে
বিচ্ছিন্ন হলো, পরে আর কোনদিন যোগাযোগ ঘটেনি।


জানিনা, রিক্তার জননী কোনো দিব্যদৃষ্টিতে তার এই
পরিণতি দেখতে পেরেছিলেন কিনা। নইলে তিনি কেন  
এই দুঃখী নাম রাখতে গেলেন? এমন সুন্দর মুখে এই নাম
কতনা বেমানান ছিল, ঠিক যেন শ্রাবনের পূর্ণিমার মত।


কিশোর বয়সে দেখা সেই রিক্তা আজও হয়তো বেঁচে আছে,
পৃ্থিবীর কোন কোণে। অথবা চলে গেছে মাটির গভীরে।
সেদিন তার সাথে কোন কথা হয় নাই, শুধু মামুলি কিছু
স্বাগত কথা ছাড়া। তবুও সেই ম্লানমুখ আজও মনে পড়ে!


ঢাকা
০২ জুলাই ২০১৪
কপিরাইট সংরক্ষিত।