সেখানে কি কেউ সাধে যায়?
নেহায়েৎ বাধ্য না হলে কেউ যায়না।
একবার সেখানে গেলে কেউ সহজে ফিরেনা।


তবে আমার খুব সাধ হয়েছিল,
সেখানে যাবার। খুব ঔৎসুক্য হয়েছিল,
তাদের দেখবার, তাদের কিছু কথা শুনবার।


তাদের মুখে ছিল অনর্গল কথা,
কিন্তু শ্রোতা নেই। তাই নিশিদিন তারা
পথ চেয়ে থাকে, খোঁজে অচঞ্চল মনযোগী শ্রোতা।


আমাকে পেয়ে তাদের একজন
সন্ধান চেয়েছিল তার হারানো প্রেয়সীর,
খুব সনির্বন্ধ অনুরোধে। আমি নিশ্চুপ ছিলাম।


অনেকের দীর্ঘ বক্তৃতা শুনেছিলাম,
শুনেছিলাম তাদের আকুতিভরা বিলাপ।
কেউ গেয়ে যায় গান, আর কেউ দেয় অভিশাপ।


সবকিছু ছাপিয়ে মনে গেঁথে আছে
একটি কিশোরীর প্রেমের কাব্যকথা।
বাড়ীঘর ছেড়ে প্রেমিকের তরে চলে আসবার কথা।


কিন্তু সে বড় নিদারুনভাবে
হয়েছিলো প্রতারিত। প্রেমিক তারে
একেলা পথে ফেলে রেখে, হয়েছিলো তিরোভূত।


গল্পের মাঝে সে গেয়েছিলো,
'ও যে আমায় ঘরের বাহির করে
পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে, মরি হায় হায় রে।'


সজল নয়নে গাওয়া তার কন্ঠতরঙ্গ
মৃদুকল্লোল হয়ে আজও কানে ভেসে আসে,
'কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে, ভেবেই না কুলায় রে'।


পাদটীকাঃ  ১৯৯৩ সালে পাবনার হেমায়েতপুরে অবস্থিত এ দেশের সর্ববৃহৎ মানসিক হাসপাতালটি ঘুরে দেখেছিলাম। অভিজ্ঞতা ছিল বড়ই সকরুণ, হৃদয়বিদারক। মানসিক রোগীদের নিয়ে অনেক কালজয়ী গল্প উপন্যাস লেখা হয়েছে, নির্মিত হয়েছে অনেক জনপ্রিয় সিনেমা। প্রায় একুশ বছর আগের সে অভিজ্ঞতার কথা আজও আমার মনের পর্দায় অনেকটা সিনেমার মতই ভাসে। জীবনের এসব ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে লেখা আমার কিছু কবিতাকে একজন কবি-পাঠক আখ্যায়িত করেছেন সুন্দর এক কাব্যিক নামে- 'Ripples Of Life'। আমি তাঁর এই সুন্দর কথাটাকেই ধার করে নিয়ে এই কবিতার শিরোনাম দিলাম 'জীবনের মৃদুহিল্লোল' - 'Ripples Of Life' এর অনুবাদ আমি এভাবেই করলাম।


ঢাকা
১৮ জুলাই ২০১৪
কপিরাইট সংরক্ষিত।