শৈশবের স্মৃতিগুলো চোখ বুঁজলেই ভেসে আসে,
আমার মত স্মৃতিগুলোও বড় একা। ডাকলেই
আজ্ঞাবহের ন্যয় চলে আসে। মনে পড়ে, ছোট
থাকতে একবার টাইফয়েডের নির্দয় ছোবলে
মাসাধিককাল প্রবল জ্বরের আনাগোনার মাঝে
শয্যাশায়ী ছিলাম। সৌভাগ্য্য বড়, বেঁচে গেছি
এবং এখনো আছি। ছোটবেলার অনেক কথাই
মনে পড়ে, যেমন আইয়ুব খানের সফরের কথা।


চট্টগ্রামের জাম্বরী মাঠ উন্নয়নের কাজ  চলছিল।
নাকে লেগে আছে রোলার আর বুলডোজার এর
পোড়া ডিজেলের গন্ধ। এক বিষন্ন বিকেলে হঠাৎ
একটা চিল আমাদের বাগানে পড়ে গেল। একটা
বড়সর মুরগীর ছানা গলধঃকরণ করে তার বেশ
শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। গাছে পানি দেয়া বাদ দিয়ে তার
সেবা করতে ছুটেছিলাম, কিন্তু বাঁচাতে পারিনি।
আকাশে চিল দেখলেই এখনো সেকথা মনে পড়ে।


প্রতিদিন দুপুরবেলা এক চেনা দইওয়ালা আসতো,
তার মিহি সুরের ডাক মিলিয়ে যেতে যেতেই আমি
ঘুমের রাজ্যে মিলিয়ে যেতাম। দুপুরে ঘুমালেই শুধু
বিকেলে খেলার অনুমতি ছিল। বার্ষিক পরীক্ষার পর
নানী-দাদীর বাড়ী বেড়াতে যেতাম। সবুজ রঙের
ট্রেনগুলো টেনে নিত কালো ইঞ্জিন। হুইসেল বাজিয়ে
হুসহুস করে কালো ধোঁয়া ছেড়ে ছুটে চলতো। খুব
মজা করে ভাইবোন মিলে আমরা ছড়া কাটতাম।


বাহাদুরাবাদ আর তিস্তামুখঘাটের হোটেল ওয়ালারা
তারস্বরে ডেকে যেত তাদের খাবার খেয়ে যেতে।
কিন্তু মানুষ ঊর্দ্ধশ্বাসে ছুটতো স্টীমারে জায়গা পেতে।
যমুনা পার হয়ে পুনরায় শুরু হতো সেই ঘোরদৌড়।
ফের ট্রেনে উঠে শুরু হতো ছুটে চলার দ্বিতীয় পর্ব।
তবে যমুনা পার হবার পর থেকে মনে হতো নিজের
বাড়ীর আঙিনা দিয়েই ছুটে চলেছি। লালমনিরহাট
জংশনে এসে সে ছুটে চলার সমাপ্তি হতো পরমানন্দে।


ঢাকা
৩০ জুলাই ২০১৪
কপিরাইট সংরক্ষিত।