অস্তগামী জীবনের বিষন্ন বিকেলে ছায়াগুলো যখন
দ্রুত প্রলম্বিত হচ্ছে, তখন একটুখানি ফিরে তাকাই,
সেই শুভক্ষণের দিকে। ডিসেম্বরের কনকনে শীতের
মাঝে যখন এ পৃথিবী আমার প্রথম কান্না শুনেছিলো।


মায়ের কাছে শুনেছি, পৌষের এক সান্ধ্যক্ষণে আমার
এ ধরাধামে আসা। তখনো মাঘরিব এর আযান হয়নি।
সেযুগে ছেলেপুলের জন্ম বাড়ীতেই হতো, ধাত্রীদের যত্ন
আর তত্ত্বাবধানে। আমিই ছিলেম আমার মায়ের প্রথম
সন্তান। তাই অনভিজ্ঞ মায়ের দুশ্চিন্তার যেন অন্ত ছিলনা
আমাকে নিয়ে। তবে সেই যুগ ছিল সহমর্মিতার স্বর্ণযুগ।
আমার মাতাপিতার বাড়ী দেশের উত্তর পশ্চিমে, আর
আমার জন্ম হয়েছিলো তির্যক বিপরীতে, দক্ষিণ পূবে।


মায়ের মুখে শুনেছি, এজন্য তাদের কোনই অসুবিধে
হয়নি। আমাদের প্রতিবেশী ছিলেন পশ্চিম থেকে আসা
এক উর্দুভাষী পরিবার। আমার জন্মলগনে সেই দয়ালু
পড়শীর স্ত্রী মাকে খুবই সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন।
আমাকে সারা রাত পাহারা দিয়ে রাখতেন। যখনই আমি
কাঁদতাম, তিনি আমাকে বুকে তুলে নিতেন। কখনোবা
আমার মায়ের বুকে তুলে দিতেন। মা আজ অশীতিপর,
নামটি তার স্মরণে নেই, শুধু 'রেহানার মা' মনে আছে।


মা আরেক পড়শীর কথা বলতেন। তিনিও অনেক সদয়
ছিলেন আমাদের প্রতি। মায়ের অনুরোধে বছর পাঁচেক
আগে অনেক কষ্টে তাদের ঠিকানা খুঁজে বের করে দেখা
করতে যাই। কিন্তু হায়, গিয়ে শুনি তিনি পরলোকগত।
মায়ের কাছে এই দুজনার বহু গল্প শুনেছি, আর মনে মনে
খুবই কৃতজ্ঞবোধ করেছি। আঁতুড়ঘরে তাদের প্রথম স্পর্শ
আমাকে শীতের মাঝে উষ্ণতা দিয়ছিলো। তাদের মমতা
আমার কান্না থামাতো, আর আমার মাকে দিতো স্বস্তি।


মায়ের মুখে শোনা গল্প থেকে তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় আমার
মাথা নত হয়ে আসে। তাদের এ ঋণ কখনো শোধ হবেনা।
তবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যিনি অধিপতি, তার কাছে করজোড়ে
মিনতি জানাই, উত্তম বিনিময় তারা যেন পায়, পরলোকে।
                  


ঢাকা
১৬ আগস্ট ২০১৪
কপিরাইট সংরক্ষিত।