মরচুয়ারীতে বসে ছিলে তুমি,
সাথে তোমার সৌম্যকান্তি বড় ছেলে আর ভায়রা।
দরজার ওপাশে মোজাইক শয্যায় শায়িত তোমার
ছোট ছেলে, শেষ গোসলের পর শুভ্রকাফনে মোড়া।
একটু আগেও যে গাড়ীতে তোমার সাথে এসেছিলো
কথা বলতে বলতে, এখন সে স্পন্দনহীন শায়িত।
একটু আগেও যে শ্বাসকষ্টে অস্থির হয়ে বলেছিলো,
"বাবা, আমার খুব খারাপ লাগছে"!


তুমি ছটফট করেছো, অসহায়ভাবে ডাক্তার আর
মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্টদের মুখের দিকে তাকিয়ে
পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছো। গুপ্ত আশঙ্কায়
ছটফট করেছো, পায়চারী করেছো অস্থির চিত্তে।
এভাবেই হঠাৎ নিমেষে তোমার চোখের সামনেই
সবকিছু শেষ হয়ে গেলো! বিড়বিড় করে গোপনে
নিজ মনে তুমি আওড়ে গেলে, 'পিতা হয়েও আমি
কেন তাকে বাঁচাতে পারলাম না'!


বন্ধু, এভাবেই আমি তোমায় কাল সকালে দেখেছি,
তোমার বুকের সাথে বুক মিলিয়ে রেখে তোমার
চাপাকান্না শুনেছি। নিজেও অশ্রুরুদ্ধ হয়ে ভেবেছি,
কিভাবে এ শোকের পাহাড় তুমি বইবে ? কী দিয়ে
সইবে তুমি এ অনল দহন? অতি কষ্টে অশ্রুর চাপ
সহ্য করেছি। কিন্তু পারলামনা যখন ট্রাকে উঠানো
হলো তার কফিন, আর তুমি একটি হাত বাড়ালে,
যেন কেউ তোমায় টেনে ট্রাকে তোলে!

কিন্তু কেউ তোমার হাতটা ধরলো না, কারণ বন্ধুরা
চেয়েছিলো, গোরস্থানে তুমি পৃথক গাড়ীতে যাও।
তুমি চেয়েছিলে, যতটুকু পারা যায়, কফিনের সাথে
থাকতে। তোমার এ স্বাভাবিক অনুভূতিটুকু যখন কেউ
বুঝলোনা, তুমি শুধু শূণ্য দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকলে।
এমন পরিস্থিতিতে যেন নিজের করার কিছুই থাকে না!
তোমার নিষ্পলক, ভাবলেশহীন অশ্রুশুষ্ক শূণ্যদৃষ্টির
ঐ দৃশ্যটা আমার চোখে জলের প্লাবন এনে দিয়েছিলো!


পাদটীকাঃ গতকাল সকালে আমার অত্যন্ত নিকট এক বন্ধুর ২৫ বছর বয়সী তরতাজা যুবক ছেলে তার চোখের সামনেই চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে তার সান্নিধ্যে কিছুটা সময় কাটাই।  পরে জুম্মার নামাযের পর অনুষ্ঠিত নামাযে জানাযায় যোগ দেই। জানাযার পর যখন মরহুমের কফিন ট্রাকে তোলা হলো, তখন বন্ধুর অভিব্যক্তি লক্ষ্য করে আর অশ্রু সামলাতে পারিনি। কবিতায় সেই সব শোকবিহ্বল মুহূর্তগুলোর ভাবনার কিছু প্রতিফলন ঘটেছে।


ঢাকা
২০ ডিসেম্বর ২০১৪
কপিরাইট সংরক্ষিত।