ক্যাবলাকান্তকে কেউ বলেনি,
তেইশ বছর বয়সে কেউ ক্যাবলাকান্ত থাকেনা।
ঐ বয়সে মনের ময়ূর পেখম মেলে,
বোবা মুখেও কথা ফোটে,
সাদা চোখে রংধনু দেখা যায়।
তাই ক্যাবলাকান্ত বিস্ময়ে বিভোর হয়ে যেতো,
যখন নিজের মাঝে সে এসব পরিবর্তন দেখতে পেতো।


ঐ বয়সে ক্যাবলাকান্ত হঠাৎ একদিন,
একটা প্রজাপতিকে তার সামনে দেখতে পেলো
ওড়াওড়ি করতে। সে বিমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো।
ওটাকে ধরবে কি ধরবেনা ভাবতে ভাবতে
অবশেষে যখন সে হাত বাড়ালো,
প্রজাপতিটা তখন উড়ে গেলো। নিজেই সে ভাবলো,
ক্যাবলাকান্ত ঐ বয়সেও ক্যাবলাকান্ত রয়ে গেলো!


জীবনের পথ পরিক্রমায়
ক্যাবলাকান্ত এক বেদেনীর সমক্ষে পড়েছিলো।
যে তাকে গান শোনাতে চেয়েছিলো,
নাচ দেখাতে চেয়েছিলো।
সাপের খেলা দেখাতে চেয়েছিলো।
ইশারায় চেয়েছিলো তাকে তার নৌকোয় তুলে নিতে।


ক্যাবলাকান্ত উল্টো বরং চেয়েছিলো,
বেদেনীকে তার দীঘির ধারে ডেকে নিয়ে
কিছু তার সাদামাটা জীবনের নিটোল গল্প শোনাতে।
ক্যাবলাকান্ত বুঝতে পারেনি,
প্রমত্তা নদীর উত্তাল ঢেউএর সাথে যার বসবাস,
নিস্তরঙ্গ দীঘির জলে তার কোন আগ্রহ ছিলনা।


বেদেনীও বুঝতে পারেনি,
খোলা আকাশ থেকে ঝরা অজস্র বৃষ্টির ধারা
সাগরের উন্মুক্ত বুকে পড়ে হয় নিমেষে বিলীন।
কিন্তু এক ফোঁটা অশ্রুও,
শান্ত দীঘির জলে পড়ে কাঁপন লাগায়।
যে কাঁপন ধীরে ধীরে তোলে শিহরণ।
তীরে গিয়ে শেষ হয় যে নিভৃত কাঁপন!


পাদটীকাঃ জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে আমরা সবাই বোধহয় ক্যাবলাকান্তের অবয়বে নিজেকে ধারণ করি, নিজেকে দেখতে পাই, কিছু সময়ের জন্য হলেও। তারপরে আবার জীবনেরই তাগিদে স্মার্ট হয়ে যাই, জীবন বয়ে চলে তার নিজস্ব গতিতে, আর এভাবেই ধীরে ধীরে কালের অতল গর্ভে আমরা বিলীন হয়ে যাই।


ঢাকা
২৭ ডিসেম্বর ২০১৪
কপিরাইট সংরক্ষিত।