মেয়েটির একটা সাদামাটা স্বপ্ন ছিল,
সে কোন একজনকে ভালোবেসে নিভৃতে ঘর করবে।
এমন একজনকে নিয়ে পাতবে সংসার,
যে কথায় কথায় রাগ করবেনা, রাঙ্গাবেনা চোখ।
আর শত রাগেও আনবেনা মুখে কোন খিস্তি খেউর।
তাদের ঘর আলো করে আসবে এক ফুটফুটে শিশু,
তাকে সে জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসবে। বাবা আদর না দিলেও
মা হিসেবে সে নিজেই তাকে দ্বিগুন আদর ভালোবাসা দিবে।
তাকে সে সবচেয়ে ভালো বিদ্যাপীঠে পড়াবে, আর তারপর...
কোন একদিন যখন সে মস্ত বড় কেউ একজন হয়ে যাবে,
তখন সে তাকে নিয়ে যাবে তার নিজ বাবা মায়ের কাছে।
আর বলবে, দেখে নাও, কিভাবে ছেলেপুলে মানুষ করতে হয়।


বলতেই হয়, যে মেয়েটার স্বপ্নটা খুব সাদামাটাই ছিলো।
সে শিশুকালে প্রতিদিন শুনেছে তার মা বাবার ঝগড়াঝাটি,
কখনো কখনো সেসব পাঁচিল পেরিয়ে আশেপাশেও শোনা যেতো।
সে দেখেছে কিভাবে অযত্নে অবহেলায় তার অগ্রজ ভাইটা
শেষ পর্যন্ত প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয়ে কুনোব্যাঙ হয়ে বেঁচেছিলো।
তার বাবা মা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো, একথা সে শুনে এসেছে,
কিন্তু কখনো সে তার বাবা মাকে একত্রে বসে গান শুনতে দেখেনি।
একসাথে হাসিঠাট্টা করতে দেখেনি, নাটক সিনেমা দেখতে দেখেনি।
কোন বৃষ্টি বাদলের দিনেও না, কোন জ্যোৎস্নামাখা রাতেও না।
কিন্তু তার খুব শখ হতো দেখতে, তার বাবা মা এরকমই হোক।
কিন্তু সেটা সে কখনো দেখেনি। আর তাই সে চেয়েছিলো,
এমন একজনের সাথে সংসার করতে, যে এগুলোর মানে বুঝবে।  


পাদটীকাঃ মেয়েটির স্বপ্নটা কিছুটা পূরণ হয়েছিলো, অর্থাৎ সে একটা ভালো ছেলেকে বিয়ে করেছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য, চল্লিশে পৌঁছার আগেই ছেলেটির দু'বার হার্ট এটাক হয়ে যায়। বর্তমানে সে বিপজ্জনক অসুস্থতা নিয়েই জীবিত আছে। তাদের একটি পুত্রসন্তান আছে। তাকে নিয়েই মেয়েটির জীবনের সব স্বপ্ন সকাল সন্ধ্যা আবর্তিত হয়।


ঢাকা
১৩ মার্চ ২০১৫
কপিরাইট সংরক্ষিত।