মানুষ ধীরে ধীরে তাঁর নিজেস্বতা হারায়। হোক তা সমাজ ,কাজের ক্ষেত্র, পরিবার বা প্রিয়জনের জন্যই। হারাতেই হয়। নিজেস্বতা ধরে রাখা কঠিন।


আপনি নিজেস্বতা ধরে রাখার জন্য কঠিন হয়ে থাকতে পারবেন না ।
পাথর হতে পারবেন না প্রিয় মানুষগুলোর মুখে হাসির জন্য। তাদের ভালো রাখার  জন্য। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এটাকেই বলে ঈশ্বরের লীলা। আর লীলাতে আপনি নানা ভাবেই কষ্টের শিকার হবেন। এটা মেনে নেয়াই শ্রেয়।


আপনার জিদ থাকতে  পারে একটা বিষয়ে-আপনি তো এমন ছিলেন না আগে ! দিন দিন কেন হটাৎ সব কিছুই আপনার অনুকূলের বাইরে চলে যাচ্ছি ! এসব ভাবনাও এক সময় ফিকে হয়ে যায়। সব কিছু ছাপিয়ে আপনি হয়ে উঠেন এই পরিবারের, সমাজ,রাষ্ট্রের নানা ভরসার প্রতীক।


তারা অধিকার রাখে নানা সুখের মাঝেও আপনাকে যন্ত্রণা  দেবার। কষ্ট দেবার। কান্নায় স্রোতে ভাসিয়ে নেবার। তারা অধিকার রাখে নানাবিধ সমস্যা থাকা সত্বেও- তাঁদের চাওয়াটুকু পুরুণ হোক। আবদার বায়না যা কিছু আছে তা তাদের আশা মতই হাতে বন্ধি হোক। এতটুকু তারা চাবেই।
তাতে আপনার কোথায় কী ছিঁড়ে গেল তারা কেন তারা তা দেখবে ! দেখা কি ঠিক আদৌ ?
কারণ তারা জানেই তাঁরা যা চাচ্ছে একদিন পর হলেও তাদের সব কিছুই পুরুণ হবে। কারণ তারা পেয়ে পেয়েই তো অভ্যস্ত।তাঁরা হটাৎ এমন কিছু চাইবে- আপনার প্রচণ্ড রাগ হবে ঠিকি কিন্তু, আপনি আপনার রাগের নিজেস্বতা ধরে রাখার জন্য এমন সব চাওয়া পূরণ না করে পারবেন না।আর এভাবেই হারিয়ে যায় আপনার মাঝে সুপ্ত থাকে নিজেস্বতা। কারণ আপনি না চাইলেই আপনি দাঁড়িয়ে আছেন বটগাছ হয়ে।


আপনি জিদ নিয়ে হয়তো ভাবতে পারেন- আপনি কি তাহলে সবার চাওয়া পাওয়া পূরণ করার জন্যই পারিবারিক ঠাঁই ! আপনার নিজস্ব চাওয়া পাওয়ার যে কেউ দেখার নেই সেটাও কি এরকম'ই হবার কথা কেবল আপনার বেলাতেই ? আজব কারিগরের আজব কারখানা বলে মনে করতেই পারেন আপনি তখন সব কিছুই। আসলেই কিন্তু তাই। পৃথিবীটাই আজব কারিগরের আজব মায়াময় কারখানা। সেটা কেবল আপনার কাছেই কেন হবে হবেন জানেন- আপনি কিন্তু দিয়েই তৃপ্তির দ্বার প্রাণে। কিন্তু আপনি ভাবছেন হয়তো যা দিচ্ছেন তা বুঝি পরিপূর্ণ না। কিন্তু আপনি জানেন না এই পৃথিবীতে কোন কিছুই পরিপূর্ণ না।


আপনার সব থেকে কষ্ট টা কোথায় জানেন, যখন শুনতে পাবেন -এইযে তাঁরা এত কি পাচ্ছে খুব সহজেই বা কষ্টে, তবুও আড়ালে আবডালে যখন শুনতে পারবেন তাঁরা নাকি কিছুই পাচ্ছে না, তখন।
তাঁরাই নাকি অনেক অসুখী এই পরিবারের মাঝে। এই সমাজের ছায়ায়। এই পৃথিবীতে তাঁদের মতো নাকি অনাথ অসহায় দুঃখী আর কেউ যেন নেই, তখন।
তখন আপনার আর কিছুই পাওয়ার বা বলার থাকবে না, বা থাকে না। নিজেস্বতার বলির স্বার্থক পাওনায় আপনাকে বুক বেয়ে স্রোত নামবে। বাহবা দিবেন আকাশ পানে। বলবেন হায়রে ঈশ্বর। তুমি এই শরীর ছাড়া লীলা করার মানুষ পেলে না ...।


এরপর আপনি বেপরোয়া হতে পারেন, রাগ অভিমান নিয়ে অনেক যন্ত্রণা নিয়ে। দূরে থাকতে পারেন সব ভুলে কদিন।
কিন্তু কদিন ? একদিন, দুইদিন, একমাস, বছর কয়েক ? নিজেস্বতা কে বিলীন করেই তবুও আপনার আপনিক  সমঝোতার ফর্মেটে এনে ছুটে আসতেই হবে। আসতেই হয়। আসতে হয় তাদের অসুস্থতার খবরে। তাদের দুঃখ কষ্টে কিংবা প্রয়াতকালে।কবরের দোরগোড়ায়। কারণ আপনার সুখ দুঃখের গোড়া পত্তন এই প্রিয় মুখ গুলোই। অনেক আদর-যত্নে এই যন্ত্রণা গুলোই,এই বেখেয়াল গুলোই,অনাদায়ী ভালোবাসার গুলোই। এসব না চাইতেই মেনে নিতে হয়।  মেনে নিয়েই নিজেস্বতার ছুটি হয় না বলেই।


একটা বাগান তাঁর শুরুর দিকের শোভাবর্ধন কে শেষ পর্যন্ত যেমন ধরে রাখতে পারে না নানা হলুদ পাতার ভিড়ে, আপনি তেমন টি পারবেন না। এটার লিমিটেশন একই ধারায় প্রত্যাবর্তন হয় না। এটার পরিবর্তন আজীবন। এটাই স্বার্থের পৃথিবীর ধরণ। আর এটাই জীবন ও জীবনের গড়ন।