তবু, তোমাদের কথা মনে পড়ে আজ।
দিনে দিনে ক্রমান্বয়ে দিন বেড়ে যায়,
জীবন এগিয়ে চলে স্বাভাবিকভাবে;
এ জীবন শেষ হবে মৃত্যুর ছোঁয়ায়।
ছেলেবেলাকার বন্ধু, যাহাদের নাম
হৃদয়ে খুদিত ছিলো; এখন পড়ে না
মনে আগের মতন, স্মৃতিভ্রষ্টতায়।
পূর্ব পাড়ার আক্কাছ- সদা হাসিমুখ,
বন্ধুদের প্রয়োজনে বড়ো দিলখোলা।
এইতো কয়েকদিন আগে তার ছেলে
মোবাইলে খবর দিলো- 'বাবা, আর নেই'!
জব্বার- যে নিজেদের মুদি দোকানের
বিস্কুট, মুরলি, বুট, এটাসেটা এনে
খাওয়ায়ে আনন্দ পেতো; সে-ও আজ নেই।
ছোটখাটো গড়নের দিলু- কোথায় এখন?
জানি না; অনেকদিন হলো দেখা নেই।
নূর মোহাম্মদ, কোথায়? খবর নেই;
শুনেছি, সে ড্রাইভার; ঢাকাতেই থাকে।
লাইলি, রওশন আরা, কোথায় যে তারা!
কেউ কেউ চলে গেছে অনন্ত পাথারে।
পশ্চিম পাড়ার ধনু মিয়া, মোতালেব,
তোরাব আলী, মান্নান, রফিকুল, রাজা;
মধ্যম পাড়ার কালাচান, মোহাম্মদ;
দাশকান্দির সুবল, বড়ো ভালো ছেলে,
গ্রাম্য-ডাক্তার হিসেবে নামডাক তার;
তারা আজ কে কোথায়? খবর রাখি না।
কালাচানের একটি ঠ্যাং খোঁড়া ছিলো;
অথচ, মার্বেল খেলায় পটু ছিলো সে।
প্রাইমারী পাশ করা তাঁতিবাড়ির হাওয়া,
আম জাম কুল এনে খাওয়াতো যে মেয়ে;
সে আজ নিজের ঘর-সংসার, সন্তান
নিয়ে ব্যস্ত। তার স্বামী সামর্থ্য কৃষক;
শুধু জানি, আট সন্তানের জননী সে।
জীবন-সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্তে
চুপিসারে পাটে বসে; স্মৃতিরা তখন
ধীরে ধীরে ভিড় করে, নিজের অজান্তে;
দূর অতীতের দিকে মুখ তুলে চাই।
সকল সুখের ধারা কালের আঘাতে
হারিয়ে গিয়েছে দূরে, অধরা পাখির
মতন। কোথায়? কোন দূর পারাবারে!
সকলের অগোচরে ম্লান হয়ে গেছে।
মানুষের পার্থিব সময় বেড়ে গেলে,
সামনের দিকে দেখে নিকষ আঁধার।
তাই বুঝি, অতীতের ফেলে আসা দিন,
বারবার উঁকি দেয় মনের গভীরে।
হে আমার আনন্দের, সুখের বন্ধুরা!
যেখানে যে অবস্থায় তোমরা বিরাজ;
ভালো থেকো, আরশের ছায়াতলে থেকো।
জীবনের কোলাহলে আমরা সকলে
আপনাকে নিয়ে ব্যস্ত; সুখের, সুন্দর
দিনগুলোকে স্মরণে আনি না কখনো।
ভুলে যাই সেই সব বন্ধুদের কথা;
যারা ঝগড়া করতো সময়ে অসময়ে,
ডাংগুলি, দাঁড়িয়াবান্ধা, নৈয়ামারি আর
গোল্লাছুট, ফুটবল খেলার সময়;
যতো ছোটখাট তুচ্ছ বিষয়কে নিয়ে।
পরবর্তী দিন এলে ভুলে যেতো সব;
আবার উঠতো মেতে নতুন খেলায়,
হাসি আর তামাশায়, আনন্দ-হিল্লোলে।


২৯/০৫/২০২১
মিরপুর, ঢাকা।