আমি জানি, তুমি কবিতা নামের এ লেখাটি পড়বে না;
তবুও, মন্তব্য করে যাবে মনগড়া শব্দাবলী দিয়ে।
কবিতার বিষয়শ্রেণির ট্যাগ দেখে লিখে দিবে-
'বিবিধ কবিতা' দারুণ হয়েছে, মন ছুঁয়ে গেলো!
যদি কবিতা নাইবা পড়ো;
তবে, মন্তব্য করার কেনো দরকার?
তুমি কিসের আশায় এরূপ মন্তব্য করো যাও?
তোমার ছলনাটুকু আমি কি জানি না!
'সুন্দর লেখনী' বলে যাও!
লেখনীর মানে কি?
তা' কখনোই অভিধান উল্টিয়ে দেখোনি।
তোমার অকবিতায় আমিও কপটে বলে যাবো-
'খুবই ভালো হয়েছে', 'মুগ্ধকর', 'সুন্দর হয়েছে',
'চমৎকার প্রকাশন' ইত্যকার শব্দাবলী।
সে সব মন্তব্য কখনো পাঠ করবে;
অথবা, সেটাও করবে না।
কপিপেস্টের প্রতিমন্তব্যে উপস্থিতি দিয়ে যাবে,
ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে যাবে।
অতঃপর, খুশিতে বাক-বাকুম করতে করতে
আহ্লাদে নির্ঘুত রাত কাটাবে একাকী।


তুমি যে আমার কবিতায় লাইক দিয়ে যাও,
ইমোজি-রিয়েক্ট করে যাও; মাঝে মাঝে মন্তব্যও।
আমি জানি, কবিতাখানি পড়োনি,
অন্যের কবিতা কখনো পড়ো না তুমি।
শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম
বাংলা সাহিত্যের চিরজীবী ফুল।
ত্রিশের পঞ্চ পাণ্ডব- অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু,
জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্য;
সুর ও ছন্দের সাবলীল খেলোয়ার-
জসীম উদ্দীন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বা সুকুমার রায়;
আধুনিক কবিতার জলছাপের দোর্দণ্ড শিল্পী-
সুকান্ত, পূর্ণেন্দু পত্রী, শামসুর রাহমান,
কিংবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়,
রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা, সৈয়দ শামসুল হক,
বেগম সুফিয়া কামাল, মহাশ্বেতা দেবী, তসলিমা নাসরিন,
কিংবা আবুল হাসান, হুমায়ুন আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ
শঙ্খ ঘোস, শহীদ কাদরী, তঁদের কবিতাগুলো;
এমনকি, এ-ও জানি,
নিজের লেখা কবিতাগুলোও পাঠ করো না মনস্থির করে,
আবার নূতন করে কবিতা লেখার তাড়নায়।


তুমি কবিতার পাঠকও নও,  কবিতার সাধকও নও;
কবি নও, শুধুমাত্র একজন কবিতা-লেখক;
নিজেকে শোনাতে চাও, শুনতে চাও না কিছু।
যদি কবিতা পড়তে,
তবে, নিজে জেনে যেতে, কবিতার ভেতরের কথা,
জেনে যেতে, কবিতার রূপ ও রসের কথা,
বিমুগ্ধ আলোর কথা, কবিতার নিপুণ মুদ্রার কথা।
শব্দের উপরে কিছু শব্দকে সাজিয়ে  
তুমি নিত্য বলে যাও কতোসব এলেবেলে কথা!
পিরিতির নামে জ্বলে বিস্ফারিত কামনার চোখ,
বিরহের নামে চলে গ্লিসারিনে কান্নার নেকামি,
বিদ্রোহের নামে চলে শব্দের হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি,
যুক্তিহীনের আক্রোশে।
কবি নামের সত্তায় জেগে ওঠে, সত্য ও সুন্দরের আলেখ্য,
সে-তো মর্তলোকে ঈশ্বরের স্বর্গচ্যুত অবতার।
নদীর জলের মতো, সাগর-ঊর্মির মতো,
কবির অমিয় শব্দ নেচে যায় সুর তুলে;
গেয়ে যায় গান পাহাড়ি-বৃক্ষের ছায়াতলে;
অথবা মরুদ্যানের সৌন্দর্যের অভ্যন্তরে
কবির শব্দেরা চোখ মেলে সুদূর আকাশ দেখে।


হে আমার মন! লালসাবিহীন কবি হও তুমি,
কবির মাধুর্যে সুপ্ত প্রাণের তোরঙ্গে
জ্বেলে দাও আলোকের সুদীপ্ত, অসীম বহ্নিশিখা।
তারপর, নতজানু হয়ে বারবার বলে যাও,
হে কবিতার বিশ্রুতি প্রকৃতি!
কবিত্বের অধম দাসানুদাস আমাকেই করে দাও।
কবির বিমুগ্ধ চেতনার বিশালতার বেদিতে
আমার আত্মাকে কোরবানী স্বরূপ গ্রহণ করে নাও।
উদ্ভাসিত আলোকের স্পর্শ দাও;
বিদগ্ধ প্রাণের স্নিগ্ধ-কোমল ছোঁয়ায় কবিতার
পাতাঝরা বৃক্ষগুলো প্রাণবন্ত আর সবুজ হয়ে উঠুক।


১৪/০৮/২০২১
মিরপুর, ঢাকা।