''বিদ্রোহী'' কবিতাটি কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর একটি মাত্র কবিতা; যা বাংলা সাহিত্যে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ কবিতাটির জন্য কবির ভাগ্যে সুনাম ও দুর্নাম দুই-ই জুটেছিলো। ১৪৩ পঙক্তির সমিল-মুক্তক-মাত্রাবৃত্ত ছন্দের সুদীর্ঘ কবিতাটি প্রকাশের পরপরই কবি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। কবিবন্ধু কমরেড মোজাফফর আহমেদ তাঁর স্মৃতি কথায় বলেছিলেন- ''বিদ্রোহী'' কবিতাটি একরাত্রেই লেখা হয়েছিলো ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। প্রথম প্রকাশের ক্ষেত্রে বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে এটুকুই বলা যায়, এ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ২২ পৌষ, ১৩২৮ বঙ্গাব্দ; তথা, ১৯২২ সালের ০৬ জানুয়ারী; ''বিজলী'' পত্রিকায়। আজ (০৬/০১/২০২২ খৃস্টাব্দ)  সে-ই বিখ্যাত কবিতাটির প্রকাশের শতবর্ষ পূর্ণ হলো। সেই স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখেই আমার এ লেখা।
--------------------------------------------


খস খস করে যে সুজন কবি কথা কইতো কবিতায়,
সেই কবি আজ আমাদের মাঝে বেঁচে নেই দুনিয়ায়।
এক খিলি পান, এক বাটি চা ভালোবাসায় দিলে তুলে,
কাব্য-আসর ভরিয়ে দিতো যে হাজার সতেজ ফুলে।
কী জানি কী হয়ে গেলো তাঁর, এক্কেবারেই চুপ,
চল-ঊর্মির উছলতা ছেড়ে গহীনেতে দিলো ডুব।
কইলো না আর মানুষের কথা, লিখলো না কোন বাণী,
জলে ও স্থলে দুঃখকাতরে উঠলো যে কানাকানি।


কেউ বলে যায় জেলের ভেতরে ইংরেজ হানাদার,
কবির উপরে নিদারুণভাবে করেছে অত্যাচার;
সে-ই আঘাতের জের ধরে তিনি স্তব্ধ হয়েছে, হায়!
কেউবা বলেন, মর্ত্যলোকেতে সুগভীর সাধনায়
মগ্ন হয়ে সে, গূঢ় মারেফত-পথে গমনের ফলে
স্তব্ধ হলেন বিদ্রোহী কবি বিধাতার কৌশলে।
কেউবা বলেন, যড়যন্ত্রের জাতিভেদেরই ফল,
বাংলা ভাষায় ফললো না আর অমূল্যের ফসল।
কাব্যচাষী সে, চির-বিদ্রোহী ঘুমায় শ্রান্ত হয়ে,
আমরা রইছি তাঁর বিয়োগের ব্যথাখানি বুকে লয়ে।


মরণ হলেও, অমর হয়েছো আমাদের মাঝে তুমি,
তোমার অমর বাণীর তোড়েতে কাঁপছে মর্ত্যভূমি।
ধর্মভেদের এই দুনিয়ায় তোমার মর্ম-কথা-
ধর্মের চেয়ে মহান ও সেরা মানুষের মানবতা।
ধর্ম এনেছে মানুষের তরে মহামানবের দল,
ধর্ম-বণিক ধর্মকে নিয়ে করে যায় শুধু ছল।
যতদিন রবে মানুষের প্রাণ মানবিক গুণে, জ্ঞানে,
ততদিন রবে কাজী নজরুল সমারোহে, সম্মানে।


০৪/০১/২০২২
মিরপুর, ঢাকা।