রৌদ্রময় বিকেলের নীল আসমান
ধীরে ধীরে টেনে আনে গাঢ় অন্ধকার।
বাস্তবের রক্ততটে অবাস্তবতার
কালো চারিদিকে নামে। কুয়াশার জাল,
সূক্ষ্মতন্তু দিয়ে ঘিরে রাখে অন্ধকার।
জাহাজের ইঞ্জিনের গুণগুণ শব্দ
ঝিঁঝিঁর ডাকের মতো একটানা চলে;
রাজহাঁসের মতোন এগিয়ে চলেছে;
ক্রমান্বয়ে, দূর সাগরের মোহনায়।
কটকার পর্যটনে চলছি সদলবলে,
আমরা কয়েকজন ভার্চুয়াল বন্ধু;
(পরে, সকলেই বাস্তবের বন্ধু হয়)
অধীর আগ্রহে আজ অপেক্ষা করছি।
কখন পৌঁছাবো মোহনার কাছাকাছি!
নিষ্প্রভ তারার মেলা সমস্ত আকাশ
জুড়ে; কনকনে শীতল বাতাস বয়;
নদীর জলেরা কানে কানে কথা কয়,
ছোট ছোট ঢেউ তুলে নেচে যায় তারা।
দূরে কোথাও আলোর সমাগম দেখি!
ও কি, কটকার আকাঙ্ক্ষিত স্থলভূমি?
না কি, অন্য কোন জাহাজের আলোরাশি?
দৃষ্টিভ্রম হয়।
              তীব্র শীতের ভেতরে
সোয়েটার, মাফলার, কানটুপি, মাস্ক
(করোনার কারণে যা অত্যাবশ্যকীয়)
সযতনে আঁটসাঁট করে বেঁধে নেই;
শীতের মেয়েরা যেন দূরে সরে যায়।
মোজা পরা আমার পা ঠাণ্ডার আবেশে
কাবু হয়ে আসে; হাতের আঙুলগুলো
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে জমে থাকা
বরফের আস্তরনে ঢাকা পড়ে যায়;
কঠিন শীতলতায় বোধহীন প্রায়।
তবুও যে, বসে আছি নির্জনের কাছে;
চলমান জাহাজের ছাদের উপরে,
অন্ধকারের সৌন্দর্য  দেখার প্রত্যয়ে।
সমুদ্রের লবনাক্ত বাতাসের ঘ্রাণ
নাকে-মুখে-চোখে আছড়ে পড়ছে আজ।
প্রেমের কবিতা ক্রমে দূরে সরে যায়,
কল্পনার স্তরে স্তরে জমে বাস্তবতা;
কবিতারা আজ ম্রিয়মান হয়ে আসে।
এ ভ্রমণ কালে, যারে ধরতে চেয়েছি,
সোহাগের করপুটে, অতুল বিশ্বাসে;
আজ পিছলে পিছলে পড়ে যায় তারা,
ঠাণ্ডা জলের নদীর মোহনায় কাছে।
চাঁদ শুয়ে আকাশের বিশাল প্রাঙ্গনে;
অথচ, নিষ্প্রভ তার গন্ধহীন আলো।
কুয়াশার অত্যাচারে কলঙ্কিনী চাঁদ,
তার মুখখানি আড়াল করেছে যেন।
কোন আলো নেই; চারিদিকে অন্ধকার
গ্রাস করে যায় এই বিশ্ব চরাচর।
এর মাঝে ফোটে উঠে তোমার মুখের
ছবিখানি; অপ্রতুল শব্দের মলিন
রাজ্যে আধিপত্য বিস্তারের কামনায়;
কবিতা লিখছি আমি।
                       অশরীরী রূপ,
ঘন অন্ধকার! তার রূপ মেলে ধরে
আমার খেয়ালি সুপ্ত চেতনার ঘরে।
অবচেতনে অনন্য রূপ ভেসে ওঠে,
যুগে যুগে এসে কতো সম্মৃদ্ধ কবিরা,
যে রূপ নিরিখে বলে- আহা কী সুন্দর!
অন্ধকার গলে গলে ঝরে পড়ে মাঠে,
জলের উপরে, মৃত্তিকায়, অন্তরীক্ষে,
বৃক্ষের শরীরে প্রিয় প্রেয়সীর মতো।
সেই ঘন অন্ধকার ঘিরেছে আমায়;
কিন্তু, আগামীর কালো অন্ধকার ভেবে
কতোই না ভীত হই, আমরা সকলে!
এই অন্ধকার যেন পুষ্পের বাগান;
যা থেকে, মৌমাছি আহরণ করে মধু;
আর প্রজাপতি ভয়ঙ্কর, তীব্র বিষ।


২১/০১০/২০২২
রাতে জাহাজে করে হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম থেকে
পশুর নদী দিয়ে কটকা (সুন্দরবন) যাওয়ার পথে
জাহাজের ডেকে বসে লেখা।