লক্ষ্যহীনভাবে সংসার যাত্রীরা সুদীর্ঘকালের
পথে হেঁটে যায় পাশাপাশি, অনন্ত প্রেমের
তৃষ্ণা নিয়ে; অমরত্বের নেশায় গোপনে গোপনে
কেঁদে যায় নিধুবনে নির্জন নিশিথে বেদনাহত
পাখিদের মতো অনন্তকাল নিঃসঙ্গ একা একা।
তাহলে, সংসারী মানুষ কেবলই একা?
চিরন্তন এ প্রশ্নের উত্তর হারিয়ে যায়
অনন্ত-বলয়ে। মানুষের এ পার্থিব জীবনের
গভীর মননে কতো কথা, কতো ব্যথা
সাগর উর্মির মতো বেদনাহত হৃদয়ে
আছাড়িয়া কেঁদে যায় বেলাভূমে।
রাতের গভীরে চন্দ্রপ্রভা ঠিকরে পড়ে,
ঝিকিমিকি করে- জলের বদনে, বালুকার চোখে,
ঝাউবনের শ্যামল শরীরে, দূরে ঘুমকাতুরে সুখীদের ঘরে।
প্রেমিকার সমস্ত শরীর জুড়ে চন্দ্রসুধা গড়িয়ে যায়,
অন্তরের চোখে নিরন্তর দেখা হয়নি সেই সকল
অনন্ত রূপের ঝলক! শুধু দেখে গেছে
অপ্রকাশ্য যুক্তির দৃষ্টিতে, মেপে গেছে আপেক্ষিক নিক্তিতে,
অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে অপ্রাপ্তির দুঃখ দুঃখ মনে
চেখে গেছে নিরন্তর সুখী সুখী মানুষেরা যুঁথবদ্ধভাবে
এলেবেলে পায়ে হেঁটে যায়,
অস্থির অতৃপ্ত সংসারীর সকরুণ দৃষ্টির সীমানায়।
তাদের মনের চৌহদ্দির মাঝে তাবৎ রাজ্যের অ-সুখেরা
গুমরি গুমরি জেগে উঠে গল্পকথার সুখের পরশ
না-পাওয়ার ক্রন্দনের দীর্ঘশ্বাস;
হা-হুতাশ স্বরে শ্বাস ফেলে যায় সাগর পাড়ের
ঝাউবনের চিরল পাতায়।


হায়, ভালোবাসা!
ক্ষণস্থায়ী, যৌবনহীন শারিরীক ভালোবাসা!
প্রেমিকার কৃষ্ণচোখ, কর্মক্লান্ত ঘর্মসিক্ত নাক,
কমলারকোঁয়া ঠোঁট, স্নিগ্ধ আপেল-কপোল,
সোঁদাগন্ধী নেশা জাগানিয়া কোমল শরীর,
কখনো জাগেনি এ সকল- যা চেয়েছে রাতের গহীনে
ক্ষণিকের তরে হৃদয়ের ভালোবাসা হয়ে।
মূহূর্তের তরে অনন্ত ভালোবাসার অমিয়ধারায়
হৃদয়কে মেখে, শুধু হাতের উপর হাতটি রেখে
বলা হয়নি একটিবারও রূপকথার বেঙ্গমা-বেঙ্গমীর মতো
রাতের গহীনে- 'ভালোবাসি'।
ভালোবাসি দিগন্ত বিস্তৃত অপরূপ আকাশের বিশালতা,
ভালোবাসি নীল সমুদ্রের উতল জলের গভীরতা,
ভালোবাসি ধ্যানমগ্ন ঋষির অটল পাহাড়ের মৌণতা,
ভালোবাসি সাগরের পানে ধেয়ে চলা স্রোতস্বিনীর চপলতা,
ভালোবাসি শ্যামঘনরস এই পৃথিবীর নিটোলতা।
সরল প্রাণের অকৃত্রিম ভালোবাসায় কখনো হয়নি বলা
প্রেমিকার গ্রীবাকে বিশ্বস্ততার লতায় জড়িয়ে-
'ভালোবাসি আজন্ম লালিত প্রেমিকা তোমায়,
শুধুই তোমাকে ভালোবাসি আমি;
তুমিই আমার অনন্ত বিথিকা, ভাবনার প্রকৃতির ছবি'।
শুধু চিরায়ত অভ্যাসের মাঝে কেটে গেছে সুদীর্ঘ সময়-
ভালোবাসাহীন আমাদের জটিল সংসার!


০৯/০৬/২০১৮
মিরপুর, ঢাকা।