গুদারাঘাটে প্রচুর ভিড়
নারী পুরুষ শিশু যুবক যুবতীর।
বৃদ্ধেরা কুঁজো হয়ে বসে আছে
অস্পষ্ট স্বরে বিরবির করে অভিশাপ দিচ্ছে
সে-ই পাকিস্তানীদের।
যে পাকিস্তানের জন্য যৌবনে লড়েছে সে
তার শাসকেরা আজ বাস্তুহারা তাকেই করছে!


'মিলিটারিরা গ্রামে ঢুকে গেছে'।
এ খবরটি দ্রুতবেগে পৌঁছে দিলো
সেই কিশোর ছেলেটি
যার বাবা মরে গেছে বছর পাঁচেক আগে;
যে ছেলেটি সারাদিন ঘুরে বেড়ায় এ পাড়া, ও পাড়ায়।
মিথ্যে বলে না সে
এই কথা জানে গাঁয়ের সকলে।


নদী পার হলেই, চৌষট্টি হাজার গ্রামের একটি শ্যামল গ্রাম,
নিশ্চয়ই নিরাপদ, রাস্তার পাশের গ্রামের থেকে।
পাকিস্তানি দুর্বত্তরা তাদের সাঁজোয়া গাড়ি থামিয়ে
সড়কের পাশের গ্রামগুলোতে যখন-তখন ঢুকে পড়ে;
হাঁস মুরগী গরু ছাগল খাশি ভেড়া
যা প্রয়োজন ইচ্ছে মতোন ধরে নিয়ে যায়।
এমনকি মেয়েছেলে যুবতী নারী!


ওপারে গেলেই নিরাপদ ভেবে
বসে আছে সবায় নদীর কিনারায়
খেয়ামাঝি কোথায়?
কোথায় খেয়ামাঝি?
পরস্পরে জিজ্ঞাসা করে,
খেয়ামাঝি কোথায়?
নাওখানি তার ঘাটে পাড়ি দেয়া
ঢেউয়ের দোলায় তালে তালে দোলে
নাওখানি তার বাঁধা আছে কুলে
সে গেছে কোথায়? সে গেছে কোথায়?


সেই ছেলেছি, উড়নচণ্ডি যে, ছুটে আসে দ্রুতবেগে
বছর পাঁচেক আগে যার বাপ মরে গেছে,
হাপাতে হাপাতে বলে-
খেয়ামাঝি চইল্যা গেছে গতকাইল সন্ধায়
অন্যসব যুবকের সাথে মুক্তিযুদ্ধে ইণ্ডিয়ায়।
চারিদিকে উঠে রব-
হায়, হায়! এখন, কী হবে উপায়?


সেই ছেলেটি প্রবল জোরে হেসে উঠে
গুলির শব্দে মতো ঠা ঠা করে।
হাসতে হাসতে বলে,
পলায়ে যাবেন কোথায়?
গ্রামে গঞ্জে হাটে বাজারে এপারে ওপারে সবখানে।
মরনের হাত থেকে কে বাঁচতে পেরেছে কবে?
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে
পিছনে ফেরার পথ থাকে না আর
সম্মুখে যেতে হবে ভয় অবহেলে।


চোখের পর্দা সহসা খুলে গেলো
আঁধারের মাঝে আলোর দীপন জ্বলে উঠে।
বৃদ্ধদের দেহে যতটুকু সম্ভবপর শক্তি ছিলো
সকল শক্তি কণ্ঠে সঞ্চয় করে,
ফ্যাসফ্যাসে শব্দে করে উচ্ছারণ-
নিজের বাড়িকে রক্ষা করতে
নিজের গ্রামকে রক্ষা করতে
নিজের দেশকে রক্ষা করতে
নিজের মানুষকে রক্ষা করতে
যুদ্ধই তার সমাধান।


১১/০৭/২০১৯
মিরপুর, ঢাকা।