কবিতা লেখা একটি শিল্প। কিন্তু এ শিল্পের উৎকর্ষতার জন্য কোন শিক্ষকের প্রয়োজন হয় না। কবিতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো কাব্যিকতা। কাব্যিকতা একজন কবির মননে ঈশ্বর প্রদত্ত গুণ। যা কবির চেতনার গভীর থেকে উত্থিত হয়ে থাকে। তাই, বলা হয়, কবিতা কখনোই লেখা যায় না; কবিতা নাজিল হয় অন্য কোন সত্ত্বার ভেতর থেকে। কবিতার প্রথম চরণ বা পঙক্তিটি যখন কবির চেতনায় আছড়ে পড়ে, তারপর, কবি নদীর জলের স্রোতের মতো এগিয়ে যান তার শব্দের ঢেউ ও তাল নিয়ে। এখানে ভাষা বা ভাবের ক্ষেত্রে কবি পরিপূর্ণভাবে অনিয়ন্ত্রিত বা স্বাধীন। যে কোন ভাবনাকে বা বিষয়কে কবি তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবৃত করতে পারেন। এখানে কবির ভাষাজ্ঞান এবং চিন্তার উৎকর্ষতা বিস্তর প্রভাব ফেলে। এ জন্য কবিকে প্রচুর শব্দ আয়ত্ত এবং সাধনা করতে হয়। কবিতা সৃষ্টি একটি সাধনার বিষয়কে পাঠকের কাছে তালময় করে তুলে ধরা।
কবিতার জন্য ভাষার শব্দ আয়ত্ত করতে গেলে, প্রথমেই প্রয়োজন পড়া। এ পড়ার মাধ্যমেই কবিরা পরিচিত হবেন অপরাপর কবিবৃন্দ বা সাহিত্যিকগণের ব্যবহৃত শব্দগুলোর সাথে। যা তার শব্দভাণ্ডারকে সম্মৃদ্ধ করে তোলতে সাহায্য করবে। একজন অতিসাধারণ মানুষ ৭০০ থেকে ১০০০ শব্দের ভেতরেই তার সারাজীবন কাটিয়ে দিয়ে পরপারে চলে পারেন। কিন্তু একজন কবি বা সাহিত্যিকের শব্দ-ভাণ্ডার নিশ্চয়ই অনেক বেশি হতে হবে। এ আয়ত্তকৃত শব্দ ভাণ্ডার নিয়ে কবি তাঁর কাব্য সাধনার পথে এগিয়ে যাবেন।
কবিতার ক্ষেত্রে বলা যায়, শব্দের পরে শব্দ সাজিয়ে ভাবের প্রকাশ করলেই কবিতা হয়ে যায় না। কবিতার কিছু নির্দিষ্ট কাঠামো আছে। আর সেই কাঠামো রূপ-প্রকৃতিকে আয়ত্ত করতে হয় অন্যসব বিদ্বজ্জন কবিদের কাছে থেকে। এ জন্য প্রত্যক্ষ শিক্ষকের প্রয়োজন হতেও পারে; আবার না-ও হতে পারে। তবে, তার শিক্ষকের দ্বারস্থ হতেই হবে। যারা শিক্ষকের কাছ থেকে কবিতার কাঠামো শিখতে চান; তারা যে কোন প্রথিতযশা কবিদের সান্নিধ্যে থেকে শিখতে পারেন। আবার, বিখ্যাত কবিদের কবিতাগুলো পাঠ করে এবং কবিতাগুলোকে বিশ্লেষণ বা ব্যবচ্ছেদ করেও তা আয়ত্ত করতে পারেন। এ জন্য দরকার পড়া। অর্থাৎ পড়া ব্যতিরেকে কবিদের বিকল্প নেই। তা সে-ই প্রথিতযশা বিখ্যাত কবিদের লেখাই হোক, আর কবির সতীর্থ কবিদের লেখাই হোক।
প্রতিটি পার্থিব ধর্মেরই একজন অবতার থাকেন। কাব্যধর্মের অবতার হলেন স্বয়ং কবি। তিনি শব্দের মাধ্যমে কাব্যপুষ্পকে প্রস্ফুটিত করে তোলেন। অভিধানের পাতায় শব্দগুলো মৃত মাছির মতো পড়ে থাকে। কবি সেই মৃত মাছিকে তার মন্ত্রবলে জীবন্ত করে তোলেন কবিতায়। তাই, একজন কবি একইসঙ্গে কবিতার সাম্রাজ্যের অবতার এবং স্রষ্টা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, আপনার এই লিখা অনেককেই উপকৃত করবে।দোয়া ও ভালবাসা জানিবেন প্রিয় কবিজি।
প্রিয় শ্রদ্ধেয় কবির এই লেখাটা আমাকে অনেক দারুন ভাবে অনুপ্রানিত করেছে।
শানিত হয়েছে কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা গুলো। আপনার জন্য একরাশ ভালোবাসা।
ভালো থাকুন প্রিয় কবিজি। আপনাকে রমজানের শুভেচ্ছা জানাই।
দীর্ঘ সময় ধরে অসুস্থ থাকার জন্য আসরে একেবারেই সময় দিতে পারছি না , হচ্ছে না নিয়মিত আসরে আসাও তথাপি অভ্যস্ত স্বভাবে
আসতেই হয় । আমার এ দীর্ঘ অনুপস্থিতির
জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । খুব ভালো লাগল এডমিন
হুমায়ুন ভাইয়ের বক্তব্য । অসংখ্য অভিনন্দন দাদা।
সহমত পোষণ করি। কবি একজন স্রষ্টা।
“কাব্যধর্মের অবতার হলেন স্বয়ং কবি” কী সুন্দর কথায় একজন কবিকে তুলে ধরলেন। আর কবিতা লিখতে বা সৃষ্টি করতে হলে কবি-স্রষ্টার শব্দভান্ডার হতে হবে বিশাল। তা না হলে শব্দের অভাবে একটি মূল্যবান ভাবনাকেও ফুটিয়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তাই যত বেশি শব্দ, প্রতিশব্দ... জানা থাকবে কবিতার ছন্দ গাঁথা উপস্থাপন অনুধাবন তত সহজ ও সুন্দর হবে। শিক্ষনীয় একটি আলোচনার জন্য প্রিয় কবিকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সদা ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
খুব ভালো লেগেছে এখন কবি সম্পর্কে আলোচনা প্রিয় কবি, কাছের এবং আপন দাদাভাই এর মধ্য দিয়ে। সত্যিই তাই। কবি কে কবির সৃষ্টি করে। কলম, ভাবনার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলে নানা সৃষ্টি।
চমৎকার আলোচনা! একদম ঠিক। শব্দ ভান্ডার যার যতো উন্নত তার প্রয়োগও তার জন্য সহজতর হয়। শব্দের দৈন্যতা কাটানোর সহজ উপায় বেশি বেশি গল্প উপন্যাস কবিতা পড়া! আমিও ক'দিন ধরে বুঝতে পারছি আমার কবিতায়ও সেই দৈন্যতার ছাপ ক্রমশই স্পষ্ট হতে স্পষ্টতর হয়ে উঠছে! ভাববার বিষয়।
সুন্দর আলোচনার জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন রইলো সম্মানিত কবি।
খুব সুন্দর আলোচনা l অনেক ধন্যবাদ কবি l
কবিতাতে যতই থাকুক দারুচিনিবন আর শ্রাবস্তীর কারুকার্য;
কিন্তু পাঠক পেতে হলে.....
চাই না পাখির চোখ, চাই পাখিটিকে!
শুভ কামনা ॥
সহমত পোষণ করছি প্রিয় কবি।