আমি একজন সাধারণ রোহিঙ্গা!
আমার কৃষক স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে- হায়েনার দল,
লুন্ঠন করেছে তারা ঘরের খাবার, হাড়িপাতিল, ঘটিবাটি,
যা কিছু ছিলো আমার নিজের;
অত:পর, আগুন দিয়েছে আমারই ঘরে,
পুড়ে গেছে সব- আশা ভালোবাসা, ঘরদোর, আসবাব- সবকিছু।
প্রাণধননিধি বুকের শিশুকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
ওরা পাশবিক নির্যাতন করেছে আমার উপর সারারাত ধরে।
উলঙ্গ শরীরে মৃতবৎ পড়ে থাকি প্রিয় আরাকানের মাটি খামচে ধরে।
আমি অতি সাধারণ একজন রোহিঙ্গা নারী!


এ বিধ্বস্ত পৃথিবীতে যখন আসে সূর্যের আলো,
আমার সমস্ত শক্তি একসাথে জড়ো করে
হেঁটে যাই সকলের সাথে সীমান্তের দিকে,
বাস্তুভিটাহীন শরণার্থী সবকিছু হারা-
স্বামীহারা, গৃহহারা, সন্তানহারা, সম্ভ্রমহারা,
শেকড়বিহীন বন্য স্বর্ণলতা- পরাশ্রয়ী আমি!
আমার কী অপরাধ ছিলো, হে পৃথিবীর মানুষ?
জবাবশূন্য প্রশ্ন নিয়ে হেঁটে গেছি অনিশ্চিত পথে।


হায়েনার বীর্য প্রোথিত হয়েছে আমার জরায়ুর জমিনে;
তাতে যদি গর্ভধারণ করি আরেকবার,
সে হবে এ জারজ পৃথিবীর সন্তান।
সাক্ষী থেকো, হে নাফের জলধারা!
সাক্ষী থেকো, ঘরপোড়া ধূম্রকুণ্ডলির ধূসর আকাশ!
সাক্ষী থেকো রক্তগন্ধময় আরাকানের ভারী বাতাস!
অসীম আকাশের নিচে জন্ম দেবো আমার সন্তান।
তার চোখে ভরে দেবো জ্বলন্ত আগুন,
পুড়িয়ে দিতে অথর্ব জাতিসংঘের সকল কামুকী আইন।


কসম, আমার মাতৃভূমি আরাকানের এ উর্বর মাটির,
কসম, আমার ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত যোনির,
পশুদের কামড়ে কামড়ে থেঁতলান আমার স্তনের কসম,
আমার সন্তানের কানে কানে বলে দেবো-
'এ পৃথিবী মানুষের দেশ।
ভেঙ্গে ফেলে দিস সমস্ত কাঁটাতারের বেড়া-
যা কিছু আছে অমানুষদের খেয়াল;
জাত্যাভিমানের রাষ্ট্রীয় সীমানার দেয়াল।
শুধু এইটুকু মনেতে রাখিস-
তোর মা ছিলো না ডাইনীর মতোন নোবেলধারী,
তোর মা ছিলো, একজন সাধারণ  রোহিঙ্গা নারী।'


০৮/১০/২০১৭
মিরপুর, ঢাকা।