একটি গানের কবিতা লিখতে চেয়েছিলাম, তার জন্য;
তার অজর প্রেমের সমাপ্তি হয়নি বলে
সে গানটি আজও লেখা হলো না।
গাছের ছায়ায় ভাঁজ করা বেদনার রুমাল খুলি;
তা'তে লেখা আছে- 'যাও পাখি বলো তারে...'
সংবেদনশীল কান্নার বেদনা মথিত সুর বেজে উঠে,
কাঁদতে পারি না; তবে, বুক ভেঙে যায়, অজস্র বেদনায়।
চলমান নদীর দিকে চেয়ে থাকি অনিমেখ চোখে।


গাছের ডালে সবুজ টিয়া পাখিটি ঠোঁট নেড়ে নেড়ে মুখ ঘসে;
যেনো, লিপস্টিক মাখা দুটি রক্তিম অধর পাপড়ির মতো
চুম্বনের অহংকারী আহ্লাদে কেঁপে উঠে।
তখন গানটি শুরু করেছিলাম, লিখবো বলে
চিন্তাধারার ভেতরে সুর তোলে; তবুও, লেখা হয়নি।


ঋণী-কৃষকের মতো মহাজনের পায়ের দিকে তাকিয়ে
করজোড়ে দাঁড়িয়ে থাকি, তার প্রতি-
হীরার মতোন উজ্জ্বল নয়ন,
পাহাড়ের কোল থেকে নেমে আসা ঝর্ণার হাসি,
বসন্ত-বাতাসে বয়ে যাওয়া কোমল স্বর,
ঘিরে থাকে; দূরে কিছুই দেখি না।


পৃথিবীর তিক্ততা, কঠোরতা সব কিছু ছুঁড়ে ফেলি,
কিছুই চাই না জগতের মাঝে;
মান সম্মান ক্ষমতা অর্থ বৈভব কিছুই না।
অনুভূতির চকচকে ভালোবাসার বিচূর্ণ হৃদয় অর্ঘ্য দিয়ে যাই
জাগতিক ব্যথা শেষ হয়ে গেলে।
ভালোবাসা গলিয়ে গলিয়ে শব্দে ছন্দে সুর তুলি,
দূরাগত মধুর মুরলী বাজাই যমুনার তীরে, কদম্ব তলে।
গানটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম,
অনুভূতির উপর দিয়েছিলাম কাঁটাতারের বেড়া,
হৃদয়কে ভেঙে ভেঙে সম্পর্কের গভীরতাকে হ্রাস করতে চেয়েছিলাম;
কিন্তু কিছুই হলো না!


অবশেষে সে, তার ঘরে ডেকে নিলো,
প্রাগৈতিক প্রেমিকার মতোন নীল অনুভবের উপর বিষাদ ছড়ালো।
ভাঁজ করা বেদনার রুমালখানি দু'হাতে চেপে ধরে
অসীম ব্যথায় কাঁদতে লাগলো।
আকাশের বুকে যতো মেঘ ছিলো,
নেমে এলো তার চোখের জমিনে;
পাহাড়ের পাশে যতো বাতায়ন ছিলো, সব খুলে গেলো,
হুঁ হুঁ করে বের হয়ে এলো তীব্র ঝড়ের তোড়;
সংরক্ষিত সমস্ত বিষাদ, অভিমান নিমেষেই গলে গেলো।


একটি গান লেখার সিদ্ধান্ত হঠাৎ করেই বন্ধ করে দিলাম;
বেদনার রুমালে এখন প্রেমময় রক্তের ভেজা দাগ!
প্রণয় পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে যাবো,
এ প্রতিজ্ঞা নিয়ে, হে প্রিয়তি! তোমার সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি।
সে-ই সমুদ্র! যার উপর যতোই আবর্জনা ফেলি নাকো,
নিরন্তর প্রেমে অনাবিল করে রাখো-
নীল জলধারা, বালুময় তটরেখা এবং সংশ্লিষ্ট শহর-বন্দর,
প্রেমকাতুরে এ প্রেমিকের জীবন।


তাই, সেই বিরহের অমর গানটি লেখা শেষ হলো না আজো।


১৯/০৫/২০১৯
মিরপুর, ঢাকা।