তাঁদেরতো দোষ নেই কোন,
নেই কোন অপরাধ,
মানুষের কুৎসিত জগতে যুদ্ধশিশু যারা।
দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারণ করি আজ শোকাকুল বেদনায়,
কুসিকাঁটায় বোনানো গর্ভধারিনীর বেদনার কথা;
নির্মম, কর্কশ পূর্ণিমায় নিরুপায় হয়ে
অসহায়ত্বের কথা;
গভীর শ্রদ্ধায়, সম্মানের সাথে।


যুদ্ধশিশু!
তাঁর বুকভরা শুধু কষ্টের আকর-
রক্তের বন্ধন ছিন্নতার কষ্ট!
অনাকাঙ্খিত আগমনের কষ্ট!
পরিচিতহীন জন্মদাতাদের কষ্ট!
তাদের চরম লাম্পট্যের কষ্ট!
মায়ের বুকের ওম ছাড়া বেড়ে উঠা জীবনের কষ্ট!
জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার না পাওয়ার কষ্ট!
এ সকল কষ্ট কিন্তু কষ্টের ফেরিওয়ালার
লাল-নীল-হলুদ কষ্টের ধারা নয়।
এতো রঙহীন, অব্যক্ত কষ্টের ধারা;
নিত্য-উৎসারিত মিহিন কষ্ট!


সূর্যের কতোটা তেজঃ আছে, এ কষ্ট পুড়িয়ে দেবে?
সমুদ্রের কতোটুকু জল আছে, এ কষ্ট ডুবিয়ে দেবে?
কষ্টগুলো এক লহমায় হয়ে যায়
বিন্দু থেকে মহাসিন্ধু এবং দুস্তর পারাবার।
যুদ্ধশিশুর বুকের আগুন মাটিচাপা দেবে
এমন পাহাড় পাবে নাকো আর!


অবিদিত ইতিহাস সাক্ষী-
বাংলাদেশের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে
যে সকল মায়েদের ত্যাগে প্রজ্জ্বলিত
স্বাধীনতা স্তম্ভস্থলে শিখাচিরন্তনী, বহ্নিশিখার মতোন।
অথচ, কী নিদারুণ সত্য!
যুদ্ধশিশুর জন্মদাত্রীকে আলোতে আনার সাহস নেই;
যুদ্ধশিশু বেড়ে উঠার দায়িত্ব বহনের সক্ষমতা নেই,
তাঁরা বেড়ে উঠে পরাশ্রয়ী স্বর্ণলতা যেন।


একাত্তরের যুদ্ধশিশুরা শিকড়-সন্ধানে
বারবার ফিরে আসে এ বাংলাদেশের কাদাজলে।
তাঁদের বুকের কষ্টগুলো কলমের মুখে
তুলে আনার দুঃসাহস নেই।
আমি অভিশাপ দিচ্ছি আজ প্রতিটি রক্তিম ভোরে-
ধ্বংস হোক তাদের প্রজন্ম, ধ্বংস হোক তারা,
এ সকল যুদ্ধশিশুর লম্পট-জন্মদাতা যারা।


২৫/১২/২০১৭
মিরপুর, ঢাকা।