গতকাল কবি রুনা লায়লা চায়ের নেমতন্ন করলেন। চায়ের থেকে 'টা'টা সুস্বাদু ও বাহারী ছিলো। গোগ্রাসে খেলাম আকণ্ঠ। অতঃপর, বিদায়ের কালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'নিয়তির ডুবুচর' বাড়িয়ে দিলেন। শুভকামনার বাণীতে লিখলেন, ''অনাবিল আনন্দে কাটুক বাকিটা সময়। শুভেচ্ছা ও শুভকামনায় কবীর হুমায়ূনকে''- রুনা লায়লা।


নিয়তির ডুবুচরের বেশকিছু কবিতা মনযোগ দিয়ে পড়লাম। খুবই উঁচুমানের বলা যাবে না, আবার ঝেড়ে ফেলে দেয়ার মতো কবিতা একটিও নেই। কবিতাগুলো পড়তে পড়তে অন্যরকম ভালো লাগার একটি আবহও তৈরী করতে সক্ষম। শতাধিক কবিতার কাব্যগ্রন্থ। অর্ক প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত। প্রচ্ছদ এঁকেছেন বুলবুল রুবেল। মূল্য ১৬০/-টাকা। কাব্যগ্রন্থটির উৎসর্গ বাণী- 'প্রফেসর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। আর যারা বরাবর আমার কবিতা লেখার প্রেরণা'।


কবিরা যদি তাঁদের সদিচ্ছাগুলো লেখনীর মাধ্যমে  সমাজের কাছে তুলে না ধরতে পারেন, তা'হলে সমস্ত লেখাই হয়ে যাবে কাপুরুষতার আঙিনায় হত্যার সামিল। কবির কলমকে শিকারের বল্লম হিসেবে নিয়ে কবিতাকে তুলে দিতে হবে পাঠকদের কাছে, সমাজের কাছে । কবি বাস করেন সমাজের বহুত্বের ভেতর। তাই তিনি যেমন নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ, ঠিক একই ভাবে দায়বদ্ধ সমাজের কাছেও। কবির ব্যক্তিত্ব সমাজের সঙ্গে একটা বন্ধনের সৃষ্টি করে, তাই কবি কখনো আত্মকেন্দ্রিক ও জীবনবিমুখ হতে পারেন না। তিনি সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের প্রতি  অঙ্গীকারাবদ্ধ । সমাজের দায়বদ্ধতা কবির অন্তরের প্রেরণা। অন্তরের বিশ্বাস শুধু কবিতা-শিল্পের মাধ্যমে বিকশিত করা সম্ভব।


কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতায় তাই লিখেছেন,
‘রক্ত ঝরাতে পারি না ত একা,
তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,
বড় কথা, বড় ভাব আসে না ক’ মাথায়, বন্ধু, বড় দুখে!
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে!...'


সত্য-সুন্দরের বাণী- প্রেম। মানবিক ও দেশ প্রেমের উচ্চারণের সাথে সাথে সমাজের অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ বঞ্চনার  বিরুদ্ধে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে কবি রচনা করেন তার কবিতাসমূহ। তেমনি, কবি রুনা লায়লা তার কবিতায় একাধারে নান্দনিকতা ধরে রাখলেন, অন্যদিকে উজ্জীবিত করলেন সমাজকে । ছন্দময় এবং কোথায়ও কোথায়ও বক্তব্যধর্মী কবিতাগুলো আমার ভালো লেগেছে। আশা করি, পাঠকদের কাছেও ভালো লাগবে।


কবি রুনা লায়লার 'নিয়তির ডুবুচর' কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতাংশ তুলে দিলাম-


'মনের কপাট খুলে দাহ্য ব্যথা ভুলে হাঁটি একা
কীর্তি ঘেটে খুজে পাই যদি কিছু সাফল্যের দেখা'- নিয়তির ডুবুচর।


'ভাল্লাগে না পড়ালেখা, ভাল্লাগে না খেলা,
জানো কি মা কেমন করে কাটে আমার বেলা!'- মা।


'সকাল বেলার চায়ের কাপে
দেখি তোমার মুখ,
পরানখানি জুড়ায় তাতে
প্রাণে লাগে সুখ।'- আকাশচন্দ্র।


-কতো বুকের রক্ত নিলে হিসেব করে দেখো
নিয়ম-নীতি কোথায় গেলো একটুখানি শেখো।' - নিরাপদ সড়ক চাই।


'শতবার জন্মাতে চাই তোমার কোলে
ধন্য পেয়ে স্বাধীন বঙ্গভূমি।' - বীরঙ্গনা।


'নিটোল প্রেমের নাম জপেছি
নিন্দা নিলাম গলে
তবু কেনো জ্বালাস রে তুই
আমায় প্রেমানলে।' - অবুঝ মন।


'পদ্মা-মেঘনা-যমুনার এঁকে বেঁকে চলা
নদীমাতৃক দেশের কথা হল না যে বলা।' - আমাদের দেশ।


ঠাসা বুননের মাধ্যমে অনেকগুলো কবিতা প্রকাশ করাতে কাব্যগন্থের মান কিছুটা হলেও কমে গেছে বলে আমি মনে করি। সাথে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া কবিপূত্র রুহান-এর কয়েকটি ছড়া তুলে দিয়ে আদর্শ মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন। আশা করি, কবি রুনা লায়লার কাব্যগ্রন্থ 'নিয়তির ডুবুচর'-এর কবিতাগুলো পাঠক প্রিয়তা লাভ করবে। কবির কাব্য ও সাহিত্যিক জীবনের সাফল্য কামনা করি।


০১/০২/২০১৯
মিরপুর, ঢাকা।