কবিতা কি? কিভাবে কবিতা হবে?
এই নিয়ে ভাবে কবি, এবং শুধুই ভাবে।
কবিতা কি হাকালুকি হাওরের অভয়াশ্রমের মাছেদের হাসি?
প্রিয়ার হরিণ-দীঘল কুঞ্চিত নয়নের বঙ্কিম চাহনি?
অথবা, পকেটে পুরে রাখা কচ্‌কচে নোটের তোড়া?
নাকি, সিগ্রেটের সাদা ধোঁয়ায় ভরপুর ঘরে
বিলাতি গেলাসে মাথা ঝিম ধরা রঙিন মদিরা?
হাসে আর ভাবে, ভাবে আর হাসে,
ঘর ছেড়ে গিয়ে নিরিবিলি বসে কদম্বের ডালে
কানাইয়ের মুরালি বাজায় প্রখর দুপুরে।


মানুষের অন্তর জগতে যে সকল গুপ্তধন আছে-
চিরায়ত হৃদয়ের কথা, বাসনার ব্যাকুলতা,
রঙের প্রলেপ দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবনার জলে
দলিত মন্থিত করে মূরতি বানানো- সেটা কি কবিতা?
কবিতা কি চলমান কোন নদী?
প্রবল স্রোতের তোড়ে, আক্রোশের ঢেউয়ে ঢেউয়ে
ভেঙে ফেলে সব পুরনো বসতি, ঘর-বাড়ি গৃহস্থালি;
কালের ধারণাগুলো ভেঙেচুরে একাকার করে দেয়।
অতঃপর, সৃষ্টি করে অন্য কোন শ্যামলিমা চর,
নতুন আবহে, শব্দে ছন্দে নবতর ভঙ্গিমার।
চিরন্তন নিয়মের বাঁধাধরা খোলসটুকু ভেঙে ফেলে
অন্য কোন নিয়মের সৃষ্টি করে অবিরত,
অবিরাম শাশ্বত সত্যের অনন্য বিমূর্ত চিত্রকলা ।
কোন সুপ্রিম কোর্টের রায় কবিতার জন্য নয়,
নিয়মের কঠিন দেয়াল কবিতার জন্য নয়,
কবিতা কখনো নিয়মের ফর্মের খাঁচায় বন্দি হবার জন্যও নয়।


কবির কবিতা তৃষাতুর মানুষের জলের তেষ্টার মতো,
তীব্র কামনার বহ্নিশিখা;
তেষ্টা মেটানোর আশায় পৃথিবী ব্যপিয়া হন্যে হয়ে ঘুরে
জলের প্রত্যাশা নিয়ে আমরণ চেষ্টা তাঁর।
কবিতার পাঠকেরা নিয়ম-কানুন অতটা জানে না.
আনন্দের উপভোগ্যে মাতোয়ারা তারা.
তাঁদের নিকটে শব্দের ছন্দকলার পাণ্ডিত্য জরুরী নয়।
কবির কবিতা উন্মুক্ত বিশাল ফুটবল ময়দানে
খেলারাম কবি খেলে যায় আপনার ভাবনায়;
উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে ও পশ্চিমে,
গোলপোস্টের ধারধারি না সে।