প্রথমে বন্দনা করি আল্লা-নবির নাম,
অতঃপরে, মা-বাবার চরণে সালাম।
সন্তানের কর্তব্য কী? বলিতে যে চাই,
পয়ার ছন্দেতে এর কিছু বলে যাই।


বাবা-মা'র সাথে করো ব্যবহার ভালো,
তাঁদের জীবদ্দশায় 'ভালোবাসি' বলো।
এমন চিন্তাও কভু আনিও না মনে,
কষ্ট পান পিতা-মাতা তোমার কারণে।
শ্রদ্ধামাখা আনন্দেতে রবে হাসিখুশি,
আদবের সাথে যাবে তাঁহাদের তুষি।
তোমাদের কথা-কাজে 'উহু' নাহি করে,
এই কথা মনে রেখো চিন্তার ভেতরে।


যতো ব্যস্ত রও নাকো কিছুটা সময়
বাবা-মা'র জন্য তুমি রাখিও নিশ্চয়।
সন্তানের সঙ্গ পেলে তাঁদেরো আনন্দ,
বার্ধক্যেতে খুঁজে পায় জীবনের ছন্দ।
হাসি মুখে জিজ্ঞাসিবে কুশল তাঁদের,
গৃহমাঝে পিতা-মাতা রয়েছে যাদের।
কোথাও যাওয়ার আগে মা-বাবার কাছে,
জেনে নিও, কোন কিছু দরকার কি আছে!
প্রয়োজন আছে কি না কোন কিছু তাঁর,
বিনয়ের সাথে জেনো সব সমাচার।
বাসায় ফেরার কালে তাঁহাদের তরে,
ভালো কিছু নিয়ে এসো আনন্দ-অন্তরে।
না চাইতে পেলে তাঁরা খুব খুশি হোন,
এই কথা মনে রেখো সদা-সর্বক্ষণ।


খাবার টেবিলে বসে সবাকার আগে,
বাসনে খাবার দাও তুলে অনুরাগে।
মানুষের বৃদ্ধকাল দ্বিতীয় শৈশব,
মনে রেখো এই কথা সন্তানেরা সব।
শিশুসুলভ আচরণে ক্ষু্ব্ধ হইও না,
ইঙ্গিতে, বচনে কভু মন্দ কইও না।
ধমকের সুরে কথা বলো না কখনো,
এতে তাঁরা কষ্ট পান, সবসময় জেনো।
শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিও,
প্রয়োজনে চিকিৎসা আর সেবা দিও।
নিজেদের অবসরের একটু সময়,
মা-বাবার সাথে তুমি কাটাবে নিশ্চয়।
মজার ঘটনা নিয়ে করিও আলাপ,
মনযোগে শুনিও যে তাঁদের সংলাপ।
তাঁদের সুস্থতা আর দীর্ঘায়ু কামনা,
ঈশ্বরের কাছে করো সর্বদা প্রার্থনা।
তাঁদের বিশেষ দিনের খবর রাখিও,
অভিবাদন, উপহার এটা-সেটা দিও।
মা-বাবার আত্মীয়ের হইলে বিদায়,
তাঁদেরো প্রশান্তি চাও প্রভুর দরগায়।
পারলৌকিক মুক্তির করোহ কামনা,
তাতে পিতা-মাতা খুশি, তুমি কি জানো না?
কার্যক্ষেত্রে বাহিরেতে যদি যেতে হয়,
মা-বাবার খোঁজখবর রাখিও নিশ্চয়।
ব্যস্ততার মাঝে তুমি অন্তত একবার,
ফোন করে খোঁজ নিও পিতা ও মাতার।


ব্যবসায়িক ব্যাপারে তাঁদেরকে জানাও,
মা-বাবার পরামর্শ এবং দোয়া চাও।
তাঁদের সিদ্ধান্ত যদি পছন্দ না হয়,
তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করা ঠিক নয়।
মতের অমিল হলে তর্ক নাহি করো,
বিনয়ের সাথে নিজের মত তুলে ধরো।
মনে রেখো সবসময়, জগত-জীবনে,
তাঁরাই অভিজ্ঞ বেশি কাজে আর জ্ঞানে।
অন্যায় ও ভুল হলে বুঝিয়ে তা কও,
তাঁদেরকে শোধরাতে দিও যে সময়।
মা-বাবার যুক্তিকথা, ইচ্ছার পূরণে,
যথাসাধ্য চেষ্টা করো সততার সনে।


তোমাদের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে
মাঝেমধ্যে মা-বাবাকে নিয়ে যেও সাথে।
এতে তাঁরা খুশি হোন জেনে রেখো তুমি,
পিতা-মাতার খুশিতে খুশি অন্তর্যামী।
পারিবারিক অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত করিও
তাতে তারা আনন্দিত, খুশি হোন আরো।
সাধ্যমতো হাসিখুশি তাঁদেরকে রাখিতে,
কার্পণ্য করো না কভু ধরে রেখো চিতে।
বার্ধক্যে মনের সুখ দেহের অসুখকে
ভাসিয়ে নিয়ে যায় বোঝে নাতো লোকে।
জীবনসায়াহ্নে এলে আগলে রাখিও,
সন্তানের মমতায় ভালোবাসা দিও।
বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর চিন্তা করিও না,
তাঁদের বার্ধক্যে কভু দূরে রাখিও না।
জীবন যেমনি হয় স্বাভাবিকভাবে,
মৃত্যুও তেমন জেনো স্বাভাবিক ভবে।
সম্মানের সাথে মৃত্যু সকলে যে চায়,
এই কথা মনে রেখো তুমি সর্বদায়।
পিতা-মাতা সকলেই এই আশা করে,
সন্তানের কোলে মাথা রেখে যেন মরে।
পরম প্রভুর নাম মুখে বলে, বলে,
শেষ নিঃশ্বাস যায় যেন সন্তানের কোলে।


ও সন্তান! মনে রেখো, মা-বাবার দান,
তোমার এ জীবনখানি কার অবদান!
পৃথিবীতে তুমি এলে কার উছিলায়?
ভাবো তুমি একবার বসে নিরালায়।
বাবা-মা'র সাথে করো ভালো ব্যবহার,
এই কথা বলেছেন, পরোয়ারদেগার।
শিখিয়ে দিছেন তিনি কোরানের মাঝে,
কিভাবে বলিতে হবে আল্লাহর কাছে।
'হে আল্লাহ পরোয়ার! করি নিবেদন,
রেখো তুমি বাবা-মাকে করিয়া যতন।
যেমন রেখেছে মোরে যতনে আদরে,
তেমনি রাখিও তুমি সেই পরপারে'।


পিতামাতা পেয়ে যারা করেনি সম্মান,
জগতের মাঝে তারা পশুর সমান।
মনে রেখো সব শিশু, তুমি পিতা হবে,
প্রকৃতির নিয়মেতে মানুষের ভবে।
যেমনে রাখিবে তুমি পিতা ও মাতাকে,
তেমনি সন্তানে তব রাখিবে তোমাকে।
মাতা-পিতা জীবনের অমূল্যের ধন,
কৃতজ্ঞতায় শ্রদ্ধাশীল থেকো সর্বক্ষণ।
ভাবিয়া করীরে কয়, শুনোহ সন্তান!
মা-বাবার সেবা করে হও পূণ্যবান।


১১/০২/২০২২
মিরপুর, ঢাকা।
১০৮