তথ্যসূত্র- দৈনিক প্রথম আলো, ০৬/১০/২০১২


যখন ফোঁটেনি যৌবন-ফুল তাহার শরীরে হায়,
বাবা ও মায়ের জোর-জবস্তিতেই বিয়ে হয়ে যায়।
বারোতে মাত্র তৈরী হয়েছে সংসার নামে ঘর,
নরক কুন্ডে হয় নিপতিত আপন হয়েছে পর।
তের বছরেই মাতা হয়ে যান- মা লায়লা হায়দারি,
খসম তাহার বড়োই বেয়ারা কঠিণ অত্যাচারী।
ভালোবাসাহীন জীবনের মাঝে স্বামী তার দুর্জন,
নিত্য তাহারে বিবিধ প্রকারে করতো নির্যাতন ।
সমাজের ভয়ে, ধর্মের ভয়ে, তেরটি বছর বাদে,
একঘরে হয় মানব সমাজে তালাকের অপরাধে।


যুদ্ধ দিয়েছে বিধ্বস্ততা ঐ আফগানী যুবককে-
আশাহীন হৃদি, কর্মবিমূখ, আসক্ত সে মাদকে।
কাবুলের পথে আঁধার নামিছে মাদকের ছড়াছড়ি,
এখানে সেখানে বুঁদ হয়ে রয় নেশাখোর নর-নারী।
হতাশা তাদের ঘিরে চারিধার মরে চিকিৎসাহীন,
আলোর প্রদীপ জ্বালাবে কেইবা বাঁচাতে অর্বাচিন ?


এমন সময় স্বর্গের মেয়ে- মা লায়লা হায়দারি,
মোছায় অশ্রু, ঘোঁচায় বেদনা, শুষে শত আহাজারি।
সেইদিন ছিলো চাঁদনী রজনী জাগে জোসনার ঢেউ,
শীতের রাতে পুল-ই-শখতার নিরালা, ছিলোনা কেউ।
লায়লা হাটিছে পুলের উপর আকাশ-পাতাল ভাবে-
একা এ জীবন কেমন করিয়া দীর্ঘ সময় যাবে ?
আমি কি পারিনা মানুষ হিসেবে মানুষের তরে কাজ,
ভাঙ্গিয়া ফেলতে ধর্মের নামে ভয় ভীতি সব লাজ।


হঠাৎ তাহার কর্ণে বাজিল মানুষের গোঙানী,
চারিদিকে চায় দেখিতে না পায় শব্দের নিশানী।
সহসা দেখিল পুলের নিচেই মানুষের জঞ্জাল,
মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে মনে হয় কতোকাল!
পোকাদের ন্যায় মানুষ-জীবন অহংবোধীতাহীন,
পুলের নিচেই পড়ে আছে শত মানুষ অর্বাচিন।


করুণ দৃশ্যে চেতনা তাঁহার আবেগাল্পুত হয়,
মানুষের তরে মানুষ জীবন এ সত্য নিশ্চয়।
চেতনে তাহার বিসারিত হয় মাতা তেরেসার কাজ,
আমি কি পারিনা তাঁহার মতোন মনে যাহা চায় আজ ?
ভাবিতে ভাবিতে লায়লার মাঝে জাগিল চেতন মা’র,
মাদকাসক্ত সব আফগানী সন্তান যেন তার।
মরণ যাত্রী মাদকাসক্তের পরম স্নেহ-পাতা,
লায়লা এখন নারী নহে শুধু, তিনি আফগান মাতা।