হেমন্ত যে এসে গেছে কমছে বিলের জল,
শাপলা বিলের পারের মানুষ করছে কোলাহল।
কমছে পানি, কমলে আরো বিল শুকালে মাটি,
ওরে কৃষক! আয় ছুটে আয় জোর কদমে হাঁটি।
ধরবো রে মাছ খলসে-পুঁটি, ছোট বড় কত!
আত্মীয়দের খবর দে রে আসুক তারা দ্রুত।
গতবারের গল্পগুজব সমস্ত রাত চলে,
ভোরের বেলায় নামবো জলে আমরা দলে দলে।
বিলের পাড়ে জড়ো হয়ে আনন্দ উল্লাসে,
ছেলে বুড়ো যুবকের দল সবাই শুধুই হাসে।
আনন্দ আর মৎস্য শিকার একসাথে আজ হবে,
সারারাত্রি সমস্ত দিন উৎসবে উৎসবে।
শাপলা বিলে কমছে পানি মাছের আনাগোনা,
ডানকিনে আর টেংরা মেনি যাচ্ছে না আর গোনা।
পলো, ওঁচা, খালুই-ডুলা, নিয়ে দলে দলে,
শিং-মাগুর-কৈ ধরবো আজি আমরা সবাই মিলে।


ও হরিদাস! ওদিক কি চাস? পলোতে মার চাপ,
যায় না যেন ছুটে গজার মাছটি। বাপরে বাপ!
কতো বড়ো ছিলো সেটি, ছুটে গেলো হায়,
বাড়ি গেলে বকা দিবেন শোনেন যদি মায়।
ও রহমত! তোমার কি মত বোয়াল মাছের ধারা?
কামড় দিলে হাতটি নেবে, জীবন হবে সারা।
শত শত মানুষ জনে একসাথে আজ মিলে,
উৎসবে আজ মেতেছে দেখ শাপলা গাঁয়ের বিলে।
শাপলার বিল শুকনো এখন হাঁটু সমান পানি,
খায়েস করে মৎস্য ধরে ভরবে খালুইখানি।
সারাদিনের কর্মক্লান্তি গা ভরা পেঁক-কাদা,
তবু সবাই হাসিখুশি মনগুলো যে সাদা।
কেউ পেয়েছে বড় মাছটি, কেউ ভরেছে খালুই,
এবার শূন্য হাতে ফিরে পোড়াচকের তালুই।
গত বছর বোয়াল মাছটি পেয়েছিলেন তিনি,
একশ একটি ভাগ করা হয়, আমরা সবাই জানি।
এবার তবু তালুইর মুখে হাসি রাশিরাশি,
আনন্দের এ উৎসবেতে জবাই দিবেন খাসি।
ভবেরচরের দুলাল মিয়া বোনের বাড়ি এসে,
মাছ ধরার এই উৎসবেতে মাতলো অবশেষে।
টেংরা, মেনি, তপসি মাছে ভরেছে চারধার,
সবার মুখে হাসির ঝলক গল্পকথা ভার।
হাঁক-ডাকেতে শাপলার বিল মুখরিত হয়,
কুড়া ও চিল মাছের আশায় উড়ছে আকাশময়।
কাউয়ারা সব কা কা করে, মাছরাঙা দেয় ঝা'টা
ওরে মতি! কাঁদিস কেনো শিং দিয়েছে কাঁটা?


প্রতি বছর এমনি করেই উৎসবে প্রাণ ভরে,
পলোবাওয়া চলে বিলে গজারিয়া জুড়ে।
এমন করে আনন্দতা ছড়াক দেশের মূলে,
হিংসা-বিদ্বেষ কূটকচালের সব ভেদাভেদ ভুলে।


১৩/১০/২০১৮
মিরপুর, ঢাকা।