হে রাজবিদ্রোহী! কারাগারে বন্দি হয়েও গেয়ে গেছো
শিকলভাঙার গান। ধূমকেতুর শিখায় পোড়াতে চেয়েছো
অত্যাচারী রাজার মুকুট, রাজদণ্ড, তার অহঙ্কার।
সকল রাজার রাজা যিনি; সকল বিচারকের সেরা বিচারক,
সেই অনন্ত অনাদি সত্যের প্রতিভূ- জাগ্রত ঈশ্বর,
মানবিক অধিশ্বর। যার আদালতে রাজার মুকুট,
ভিখারির থালা অবহেলাভরে একইসাথে মাটিতে লুটায়।
ধনী-নির্ধনীর মান যেখানে সমান।
যেখানে কখনও পাশাপাশি চলে না-
ন্যায় ও অন্যায়, ধর্ম ও অধর্ম, আইন ও আইনহীনতা।
সেই সার্বভৌম ঈশ্বরের প্রতিনিধির মতোন
কী! অবলীলায় বলে গেছো চিরন্তন চিরসত্যের বচন-
'মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।'
রাজার রুদ্রতা, স্বার্থ, লোভ, শক্তির বিপক্ষে লড়ে গেছো
নিষ্কলুষ প্রাণের অম্লান, অনির্বান, সত্যের স্বরূপে,
অপ্রকাশ্য সত্যকে করেছো প্রকাশিত অখণ্ড স্রষ্টার নামে;
তাতেই লভেছো পরমানন্দ। লক্ষ্যের স্বয়ংসত্য প্রকাশে
কলমের নিবে এনেছো লেলিহান শিখা- গান-কবিতা।
তোমার চেতনায় ছিলো অমোঘ বিদ্রোহী বারুদের হুঙ্কার,
বাঁশরির সুরে, ইঙ্গিতে-আভাসে চির সত্যের প্রকাশ।
রক্তিম-ঊষার আশা জাগানিয়া, ওগো অমৃতের পূত্র!
ঈশ্বরের সত্যের অগ্নিমশাল জ্বালানোর আগে নিভে গেলে।
হায়, আফসোস! শোকের মাতম সারা বাংলায়!
তারপর,
এক নবুয়তি লাভের সমান বয়স সময়ের পর,
আরেকজন দেশপ্রেমিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।
যার নাম- মুজিবুর। যাকে ভালোবেসে বাঙালিরা কয়- বঙ্গবন্ধু।
চিরসত্যের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ! এই পৃথিবীর তুমুল বিস্ময়!


উৎপীড়িত-আর্তের পক্ষে চিরসত্য প্রকাশের বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে
প্রহসনের বিচারের নামে সত্যের যিশুকে যেমন ক্রশবিদ্ধ করেছিলো;
তেমনি বাঙালির আশা-ভরসার অভ্রভেদী আলোর মশাল
জ্বেলেছিলো যে সত্যসাধক, কবিদের কবি- শ্রেষ্ঠ কবি!
তাকেও রাজানুগত্যহীন বিদ্রোহী আখ্যায় বন্দি করেছিলো
পাকিস্তানের বর্বর ভয়ঙ্কর কুলাঙ্গার শাসকেরা-
অসত্যের অাসুরিক রাজশক্তি চার বাই চল্লিশ ফুটের 'সেলে'।


প্রাগৈতিকহাসিক সম্রাটদের মতো তারা চেয়েছিলো,
সত্যসুন্দরের পুজারীকে অত্যাচার নিপীড়নে স্তব্দ করে দিতে।
তারা চেয়েছিলো, শারিরীক, মানসিক তীব্র নির্যাতনে
অগ্নিস্ফুলঙ্গের জ্যোতিষ্ককে মানসিকভাবে অসুস্থ করে দিতে,
অপমৃত্যুর কঠিন পথে ঠেলে নিয়ে যেতে।
তাই, বাঙালি জাতিসত্ত্বার পুরোহিত শ্রেষ্ট বাঙালিকে
নির্জন, নিঃসঙ্গ সেলে সুদীর্ঘকাল একাকী রেখেছিলো তারা।
তাঁর সেলের দক্ষিণে গোয়াল ঘর-
মৌসুমী বায়ুতে বয়ে আনে উৎকট গন্ধে,
উত্তরে'- পাগলাগারদ,
মাঝে মাঝে সে সকল বন্দি পাগলদেরকে লাঠিপেটা করা হতো,
যাতে তারা আরো চিৎকার করে দোজখ বানায় কারাগার।
পূর্ব ও পশ্চিমে- একরারি আসামী, ভয়ানক প্রকৃতির,
সেখানে থাকতে হয়েছিলো
শ্রেষ্ট কবিকে চরম মানসিক অত্যাচার সহ্য করে।


চক্ষুষ্মান জাগ্রত-আত্মাই দেখে সত্যের আলোময় ছবি,
তাই তারা কবি, সত্যকে প্রকাশ করে বজ্র-নিনাদ স্বরে,
রাজদ্রোহের অপরাধে বারবার বিদ্রুপ,
অপমান, লাঞ্ছনা, আঘাতের পরেও,
নারীর ভালোবাসায় সন্তানের মতো দেশকে ভালোবেসে
অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফুর্তে উচ্চারণ করে জীবন্ত কবিতা।
যে বাণী জলদমন্দ্র সুরে বেজে উঠে আকাশে বাতাসে জনসমুদ্রে;
যে কবিতার বিদ্যুৎচ্ছটায় আলোকিত করে বিশ্ব চরাচর।
তেমনই কবি তোমরা-
বাঙালির কবি, চিরবিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম,
শাশ্বত বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


২৬/০৫/২০১৮
মিরপুর, ঢাকা।