(শকুন্তলার জন্ম)
বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভঙ্গকল্প তরে
ইন্দ্রদেব স্বর্গ থেকে পাঠায় ভূধরে
মেনকাকে। তবুও, সে নামে দেবরাজ!
খেয়ালের বশে করে কতো কূটকাজ।
বিশ্বামিত্র ঋষি যবে স্বর্গনারী দেখে,
রূপ-মোহে বিমোহিত; কামনা-আবেগে
ভুলে গিয়ে তপস্যা, সে হারালো সংযম!
মদন তাড়নে পড়ে করেছে সঙ্গম।
এইভাবে দীর্ঘকাল কাটিলো সময়,
প্রকৃতির নিয়মেতে গর্ভবতী হয়
স্বর্গনর্তকী মেনকা। সময়ের পরে
জন্মলাভ করে শিশু কঠিন ভূধরে।
তপস্যার পূণ্যক্ষয়ে ভীত ঋষিবরে
চলে যায় দূর দেশে সবকিছু ছেড়ে;
পরিত্যাজ্য শিশুকন্যা বক্ষেতে ধরিয়া,
মেনকায় কেঁদে যায় জগত ব্যপিয়া।
অতঃপর, তপোবনে শিশুটিকে রেখে,
মেনকা জননী ফিরে স্বর্গ অভিমুখে।
পরিত্যাজ্য কন্যাটিকে বনপক্ষীদল
সযত্নে ঘিরিয়া রেখে করে কোলাহল।
সাপে নাহি কাটে যেন, কুমিরে না খায়,
এই ভয়ে পক্ষীকূলে পাহারা বসায়।
কন্ব নামে এক ঋষি উদ্ধারিয়া তারে,
আশ্রমেতে ঠাঁই দিলো পরম আদরে।
পক্ষী দ্বারা সুরক্ষিতা ছিলো বলে; তাই,
শকুন্তলা নাম রাখে, সবাইকে জানাই।


(শকুন্তলার বিয়ে)
দিনে দিনে শকুন্তলা বড় হতে থাকে,
যৌবনের রূপ এসে ঘিরে ধরে তাকে।
রূপে তার চারিদিকে হলো আলোময়,
যতো দেখে ভালো লাগে, মনেতে বিস্ময়!
বনে বনে ফুল তোলে সখিগণ নিয়ে,
কত কথা বলে যায় ইনিয়ে বিনিয়ে।
বাড়ন্ত বয়সকালে মন উড়ু উড়ু,
অসহ্য বেদনা জাগে বক্ষ দুরু দুরু।
এভাবে কাটিলো তার আঠারো বছর,
ঋষিবর কন্ব তবু নেয় না খবর।
কতোকাল বয়ে যায় শকুন্তলা একা,
মনের মানুষ তার দেয় না যে দেখা।
অতঃপর, এলো সেই কঠিন শিকারী
রাজা দুষ্মন্ত নামের; বনপথ ধরি'।
মৃগয়া শিকারে এসে দেখে রূপবতী,
বিমোহিত হয়ে যায়। বলে, 'ওগো সতী,
অপরূপা! ভালোবাসি ভুবনে তোমায়;
তোমার বিহনে প্রাণ অকুলে হারায়'।
ঋষিময় তপোবনে গার্ন্ধব নিয়মে
মালাবিনিময় করে দু'জনে গোপনে।
রাজার অঙ্গুরিখানা দিলো উপহার,
পরস্পরে করে যায় আনন্দ বিহার।
মৈথুনে মিলিত হয় তারা দুইজনে,
আলো ঝলমলো করে কন্ব-তপোবনে।
কিছুদিন পরে রাজা চলে যায় দেশে,
শকুন্তলাকে কইলো, অতি ভালোবেসে,
'আসিবো আবার ফিরে প্রিয়, তব কাছে,
চলে যাই এইবার দেশে কাজ আছে'।
কালের নিয়মে শকুন্তলা গর্ভবতী
হয়ে পড়ে। তখন যে তার মতিগতি
উলট-পালট হয়, ঋষিসেবা কাজে,
ধ্যানে ও চিন্তাতে তার মন না বিরাজে।


(শকুন্তলার অভিশাপ)
অহোর্নিশি দুষ্মন্তের কথা ভেবে ভেবে
দিন যায়, কাল যায়; থাকে সে নিশ্চুপে।
পতিচিন্তায় বিক্ষিপ্ত শকুন্তলা আজ;
ঋষিসেবা, উপাসনা যথাযথ কাজ
করিতে চাহে না মন; কাঁদে বসে বসে।
কেনো রে সে মজেছিলো পতি রঙ্গরসে?
কোপনস্বভাব ঋষি নামেতে দুর্বাসা,
শকুন্তলার সেবাতে মিটেনি তাঁর আশা।
অভিশাপ দিলো ঋষি ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে,
ঋষিসেবায় মন নেই ভেবে ভেবে যাকে;
সে-ইজন যেন ভুলে, এই দিলো শাপ।
ঋষিসেবা অবহেলা বড়ো মহাপাপ!
তপোবনের সখিরা মিলে একদলে
ক্ষুব্ধ দুর্বাসার ক্ষমা চায়; পদতলে
ভক্তিঅর্ঘ দান করায়, তার ক্ষমা হয়।
অতঃপর, কোপিত সে ঋষিবর কয়-
যদি শকুন্তলা পতির কোন উপহার
দেখাতে পারে; তবেই চিনিবে আবার।


(শকুন্তলার সন্তান)
স্বামীর উদ্দেশ্যে চিরদুঃখী শকুন্তলা
তপোবন ছেড়ে দিয়ে শুরু করে চলা।
ঘুরিতে ঘুরিতে ক্লান্ত! স্নান করিবারে
নদীর জলেতে নামে প্রখর দুপুরে।
অঙ্গরি হারিয়ে ফেলে নদী তলদেশে,
বহুক্লেশে পৌঁছে স্বামী দুষ্মন্তের দেশে।
রাজসভায় গিয়ে বলে সকল কাহিনী,
রাজায় চিনিতে নারে; বলে, 'শয়তানি'!
বের করে দেয় তারে বহু অপমানে,
ক্ষোভে দুঃখে শকুন্তলা ফিরে যায় বনে।
বনভূমে জন্ম হয় সবল সন্তান,
প্রবল প্রতাপী সে 'ভরত' তার নাম।
সিংহ নিয়ে করে খেলা শিশুকালে একা,
এমন সাহসী ছেলে যায় নাতো দেখা।


(শকুন্তলার পূনর্মিলন)
ইতোমধ্যে, এক জেলে মাছ ধরতে যায়,
মাছের পেটের মধ্যে অঙ্গরীয় পায়।
দুষ্মন্ত অঙ্গরি দেখে সব মনে পড়ে,
বনেতে ছুটিয়া যায় শকুন্তলা তরে।
গিয়ে দেখে শিশু এক খেলে সিংহ নিয়ে,
তখনি দুষ্মন্ত রাজা গেলো যে এগিয়ে।
নাম, পিতা, বাড়ি কই? জিজ্ঞাসিলে তারে,
'দুষ্মন্তের ছেলে ভরত'- বলে উচ্চস্বরে।
দুষ্মন্ত-শুকুন্তলার মিলন ঘটিল,
আনন্দ ও রঙ্গবসে জীবন কাটিল।
কবীরের কলকথা শুনিলো যে জন,
তাঁহার চরণে প্রীতি সদা সর্বক্ষণ।


১৩/০৩/২০২২
মিরপুর, ঢাকা।