এ শহুরে সিন্দুক জীবন থেকে কিছুটা রেহাই পেতে
সাবলীল মুক্ত প্রকৃতির মুখোমুখি চলে যাই আজ;
স্বজন-সুজন দল বেঁধে দূরে, বহুদূরে,
আলোময় পৃথিবীর দেশে।
সদরঘাটের যানজট
জনজট
মুটেদের ঠেলাঠেলি
সবকিছু ফেলে
ঢুকে যাই আচানক রাজহংসী কর্ণফুলির বিশাল পেটে।
বুড়িগঙ্গার দুর্গন্ধময় মৎস্যহীন নোংরা জল পার হয়ে
ঘোলাটে জলের ধলেশ্বরীর শরীরে
কর্ণফুলি ভেসে যায়।
শুদ্ধ ও অশুদ্ধতার দ্বন্দ্বযুদ্ধে
শুদ্ধতায় সত্য ও নির্মল শক্তির বিজয় হলো।
বুকের ভেতরে চেপে থাকা পাষাণখানি  
ক্রমশই গলতে শুরু করে স্নিগ্ধ প্রভাতের পুরুষ্টু ছোঁয়ায়।
অতঃপর, মেঘনার কালো জলে তরতর করে ভেসে যায়
হেঁটে যায়
উড়ে যায়
আচানক রাজহংসী কর্ণফুলি,
অন্ধকার থেকে অদ্ভুত আলোর পথে।
পুবের আকাশে ডিমের কুসুমের মতো সূর্য
ধীরে ধীরে জেগে উঠে শীতের সকালে ওমের উষ্ণতা নিয়ে।
সকলে উড়তে থাকি মুক্ত বিহঙ্গের মতো,
আমাদের মন স্বপ্ন বুনতে থাকে প্রজাপতির পাখায় ভর করে;
ইট-কাঠ-পাথরের জীবনের কথা বিস্মৃতির অতল গহ্বরে ফেলে।
চেয়ে থাকি বিস্ময়াভিভূত নয়ন খুলে-
বিস্ময় থেকেই জন্ম হয়েছে অমিত শক্তির দর্শন!


চারিদিকে ফসলের মাঠ
হলুদ শরক্ষেপ ক্ষেত
ক্ষুধার্ত গাঙচিলেদের উড়োউড়ি
ছোপের বাঁশের শীর্ষে সন্ধানীর চোখে বসে থাকা মাছরাঙা
নদীর পারের খিল ক্ষেতে কাছামারা শিশুদের ক্রিকেট খেলা
জলভরা কলসি কাঁখের আলতামাখা গ্রাম্য বধুঁর চরণ
ঘোলা জলের নদীর তীর ঘেসে হাঁসেদের প্যাঁক প্যাঁক
দুষ্টু বাছুরের সাথে রাখালের চঞ্চলতা  
চরের কাদা মাটিতে পরিযায়ী পাখির সরব আনাগোনা
শীর্ণকায় জেলেদের ঝিম ধরে বসে থাকা-
জানি, নদীতে এখন মাছের আকাল
তবুও, পৈতৃক পেশা ছাড়তে পারেনি তারা।
এ সকল ছোট-বড় অনেক জীবন্ত চিত্রপট
শহুরের এ মুমূর্ষু জীবনকে আনন্দধারায় হিল্লোলিত করে তুলে।
এই সুখ ক্ষণস্থায়ী হলেও অনন্য তৃপ্তি নিয়ে আসে প্রতিটি পরানে
আশাহত এ জীবনে ভেসে উঠে অমৃতের সুধা-
জীবনের প্রত্যেক প্রবাহ অমৃতের ছোঁয়া চায়।
দিনের শেষের আলো আঁধারের পেটে ঢুকে গেলে
আমাদের এ সকল  দ্যুতিময় জীবনকে পিছে ঠেলে
নিরুপায় হয়ে নিশ্চিত আবার ঢুকে যাবো সিন্দুক জীবনে।


১১/০১/২০১৯
বদরপুর, চাঁদপুর।