কবি শেখ সামসুল হক, আমাদের বাংলা কবিতার আসরের কবি। বয়সের কারণে ইদানিং তিনি কবিতার আসরে লেখালেখি করতে পারছেন না। অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট হবার পর থেকেই কবির সাথে আমার পরিচয় ঘটে। তিনি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন সজ্জন ও অমায়িক মানুষ। নিরাহঙ্কারী এ মানুষটিকে যতোই দেখেছি, ততোই অবাক হয়েছি। তার কথায়- শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তিই কবি। আমি তার জীবনে এ গুণের প্রতিফলন দেখেছি। আজ কবির জন্মদিন। আমাদের সহযাত্রীর জীবনের কিছু কথা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি।


কবি শেখ সামসুল হক ১৯৪৯ সালের ২২ নভেম্বর, ফরিদপুর জেলার কোতয়ালী থানার পশ্চিম চর টেপাখোলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ জয়নাল আবেদীন এবং মাতার নাম কুলসুম বিবি। ৪ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বর্তমানে তাঁর পারিবারিক জীবনে একমাত্র স্ত্রী-শেখ বাবলি হক; এক পুত্র- শেখ সামিউল হক এবং এক কন্যা- অয়ন হক নিয়ে তার সংসার জীবন। তিনি বিংশ শতাব্দির ষাটের দশকের কবি, একজন মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও সম্পাদক। ঢাকা ও ফরিদপুরের সাহিত্যাঙ্গনে তার সাবলীল এবং শক্তিশালী বিচরণ বাংলা সাহিত্যে বিশেষ করে কাব্য সাহিত্যে ব্যাপক ও মর্যদাসম্পন্ন ভূমিকা রাখে। কবি শেখ সামসুল হক ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ফরিদপুর যাদুঘর স্থাপনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।


১৯৫৫ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ময়েজ উদ্দিন হাইস্কুল হতে মেট্রিক (এসএসসি) পাশ করে ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর সরকারী রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশুন করতে থাকেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসে পারিবারিক কারণে ভর্তি না হয়ে ফরিদপুর ফিরে যান। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ইতিহাস বিভাগ থেকে এম এ পাশ করেন।


স্কুল জীবন হতেই কবি শেখ সামসুল হক সাহিত্যের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তাঁর প্রথম লেখা কবিতা- শীতের বুড়ি প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। এরপর, তিনি নিয়মিতভাবে সাহিত্য চর্চা করতে থাকেন। কবির  প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম- চমৎকার সাহস (১৯৮৫); যাই ফিরে যাই (১৯৮৯); রমণীয় স্বাধীনতা (২০১৪); রূপালী জলের করাত (২০১৬) ইত্যাদি।


কলেজ জীবনেই কবি সামসুল হক পড়াশুনার সাথে সাথে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতিতেও সংযুক্ত হয়ে যান। ১৯৬৮-৬৯ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ)এর ফরিদপুর শহর কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৬৯ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তরুণ শেখ সামসুল হকের ভূমিকা প্রণিধানযোগ্য। এ সময় তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাভোগও করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সময় শেখ সামসুল হক আলবদর বাহিনী কর্তৃক ৩রা ডিসেম্বর ধরা পড়ে কারাভোগ করেন। এ কারাভোগের অভিজ্ঞতায় তার লেখা- ''একটি বুলেটের জন্য শীর্ষক কবিতা'' একটি কালজয়ী কবিতা।


কবি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ স্কাউটসে চাকুরীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় চাকুরী ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যে সকল পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তা হলো- মাসিক নীলাঞ্জ; দৈনিক সোনালী বাংলাদেশ;  মাসিক অগ্রদূত:  মাসিক অনুপ্রাস; মাসিক গণমন; দৈনিক বিকাল বার্তা; সাপ্তাহিক আমাদের কথা; সাপ্তাহিক দীপ্ত বাংলা; দৈনিক দেশ বাংলা; মাসিক মেঘনা; সাপ্তাহিক চিত্রালী; দৈনিক সমাচার;  দৈনিক ভোরের ডাক; দৈনিক বাঙ্গালী; সাপ্তাহিক যুবশক্তি;  দৈনিক নব অভিযান; দৈনিক সোনালী বার্তা; দৈনিক রূপবানী ইত্যাদি।


সাহিত্য পুরস্কারঃ কবি শেখ সামসুল হক তাঁর সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতস্বরূপ অনেকগুলো সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার মাঝে প্রণিধানযোগ্য কয়েকটি হলো- বিকাশ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮); পারাবত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯); চৌধুরী রিয়াজউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯); চয়ন সাহিত্য স্বর্ণপদক পুরস্কার (২০১১) ইত্যাদি।


কবি শেখ সামসুল হক অনুপ্রাস জাতীয় কবি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। যা ১৯৮৬ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি সেই কবি সংগঠনের নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। কবিতার অবিনাশী মিছিল দেশ ও দুনিয়াতে এগিয়ে নিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাতেই তিনি আজও নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাঁর ৭১ তম জন্মবার্ষকীতে আমরা তাঁর জীবনের সুস্থতার সাথে দীর্ঘায়ু কামনা করছি।


২২/১১/২০২০
মিরপুর, ঢাকা।