(নজরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে  ৯ ডিসেম্বর
গজারিয়ার বাউসিয়া ফেরীঘাট ক্যাম্পের
পাকিস্তানী সেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন।)
---------------------------------------
সেই ছেলেটা, তেমন আহামরি নয়;
কালোপনা, ছিপছিপে গায়ের গড়ন;
তাঁর ঠোঁটের কিনারে, চোখে হাসি লেগে
থাকতো সর্বদা, চাঁদের আলোর মতো;
যেন অন্ধকারে বিমল আলোর দ্যুতি।
মুখের কথা তাঁর তীক্ষ্ম তীরের ফলা,
অনায়াসে বিঁধে যায় শ্রোতার বধির
কর্ণকুহরে। উত্তাল উনসত্তরের
অগ্নিঝরা সেই দিনে তাতালো রৌদ্রের
শাণিত উত্তাপে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো
ছড়িয়ে পড়তো প্রতিটি ছাত্রের বুকে।
আশার ফল্গুধারায় তরতর করে
বয়ে নিতো তারে মুক্তি-সাগরের দিকে।
একখানা নীলরঙা সাইকেল ছিলো,
প্যাডেল ঘুরায়ে স্কুলে স্কুলে ঘুরতো সে।
জগন্নাথ কলেজের সীমানা ছাড়িয়ে,
(সবে বলতো, জগাবাবুর পাঠশালা)
ওয়েস্ট এণ্ড হাই স্কুল, ফরিদউদ্দিন,
ওয়ারী, নবকুমার ইনস্টিটিউট,
গুলিস্তান, লালবাগ, পল্টন, পলাশী,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আজাদের মোড়,
আজিমপুর, নিউমার্কেট চষে যেতো
একা একা, কখনোওবা সদলবলে।
সমস্ত ঢাকা শহর পিষ্ট হতো সেই
দ্বিচক্রযানের বিখ্যাত চাকার তলে।
তখনকার সময়ের ছাত্রনেতা সে,
আহামরি কিছু নয়, তবুও, যেন সে
আঁধারে আলোর মতো আশার প্রদীপ।
ছেলে বুড়ো সকলের কাছে পরিচিত,
তাকে ডাকতো সবাই, নজরুল ভাই।
এই সে-ই নজরুল, যার হাত থেকে
প্রিয় মানচিত্র আঁকা প্রথম পতাকা
এ বাংলাদেশের; আকাশে উড়িয়েছিলো
আ স ম আব্দুর রব দোসরা মার্চের
অগ্নিঝরা একাত্তরে; উত্তাল সময়ে।
সম্মুখ যুদ্ধের মাঠে শহীদ হলো সে!
জগাবাবুর পাঠশালার ছাত্রটিরে
এখন কেউতো খবর নেয়ে না আর।


০২/০৩/২০২১
মিরপুর, ঢাকা।