- এই! এসো, আজ কবিতার জাল বুনি।
- কবিরা শুধুই কথা বলে বেশি, কর্মেতে ঠনঠনি।
- কবিতা হলো যে সময়ের সাদা ফুল।
- কবিরা কাব্য কথায় তুলে আনে এ জীবনের সব ভুল।
- কবিতা যে হলো জীবনের কথা রঙের তুলিতে ছবি আঁকা।
- তারা যে মিথ্যার বেসাতি করি' জীবনকে করে ঝাকানাকা।
- কবিতায় ভাসে পদ্মপুষ্প পঙ্কিল কাদা-জলে।
- কবিরা সত্য পাশ কেটে গিয়ে কালোকেই নীল বলে।
- কবিতা যে হলো মানুষের প্রেম, প্রকৃতির শুভ্রতা।
- কবিরা ছড়ায় শব্দ-ছন্দে জীবনের বাতুলতা।
- কবিতা বোঝ না সুন্দরী তুমি, অন্ধ তোমার দৃষ্টি।
জেনো, কবি আনে দারুণ খরায় ভাবনার তলে বৃষ্টি।
- বৃষ্টিতে করে অতুল সৃষ্টি জীবন-গোলাপ ফুল।
সেখানে কবিরা দাঁতালো কীটের দংশনে মশগুল।
- কবি দেখে নারী, মানবী প্রেমের সোহগী অরূপ ধারা?
- ও সকল মিছে, কল্পনায় আনে, সকল সৃষ্টিছাড়া।
- তুমি যে আমার কবিতার সুর, তুমি যে আমার প্রেম।
- এক রাধিকায় মন ভরে না তাই, আরো চাহে গোপী-শ্যাম।
- দুত্তরী ছাই! উল্টা পাল্টা তোমার সকল কথা।
- কবিতা ছাড়িয়া সংসারী হও, পাবে তুমি অমরতা।
- তুমি যদি এসো কবির হৃদয়ে, আন্ধার কেটে যায়,
শাপলার বনে জোছনার মেয়ে প্রাণ কাড়া গান গায়।
- কথার মালায় বন্দী করার কৌশল দেখে, হায়!
হারিয়ে ফেলেছি নিজের চেতন অজান্তে অজানায়।
- গভীর পিরিতি যেখানে প্রবল, সেখানে যে ভাষা মূক;
নয়নে আমার স্বপ্নের ঢেউ, ভুলে যাও ভুলচুক।
- কবিরা কতোই ন্যাকামী যে জানে, জানিনেকো আমি আগে,
উষর ভূমিতে পুষ্প ফোটায় শব্দের অনুরাগে।
- তোমাতে আমার স্বপ্ন-বিলাস, কাব্যের কারুকাজ,
শরীরে তোমার শব্দেরা নাচে, ছেনে নেবো আমি আজ।
- কি হলো আমার জানিনে গো কবি! বিবশ যে হয়ে যাই,
ক্রমশঃ অবশ হয়ে যাচ্ছি আমি বুকে বড়ো ব্যথা পাই!
- তুলে ধরো তুমি সরলতা আর সুন্দরতার আলো,
কবির চোখের জ্যোতির ছটায় ঘুচিয়ে দেবো যে কালো।
- থাকো তুমি আজ কবি প্রাণ নিয়ে জলবতী নদীজলে,
চাহিব না আর বাঁধিতে তোমায় উষ্ণ করের তলে।
- আজ হতে তুমি কবিলক্ষ্মী হে, রাজ-নন্দিনী মানি,
তুমিই আমার কাব্য-বিলাস, প্রিয়তম-অভিমানী।
- হায়রে, কবির প্রাণ!
যুগে যুগে এসে নারীর হৃদয়ে রহো তুমি অম্লান।
- আমি তো এসেছি জগতের মাঝে পুজিতে মানবী প্রাণ,
ভগ্ন হৃদয়ে ঝংকারি ওঠে অরূপ সুরের গান।
যতো সুন্দর এই পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,
সবকিছু ধরা পড়িয়াছে আজ মহা-মানবীর কাছে।
- অনেক বলেছো চাটুকার কবি! তুমিতো সহজ নও,
কালিমার মাঝে রাংতা মিশিয়ে সোহাগী কথন কও।
যতো বলি ওগো, হাত দিয়ে দেখো বুকেতে আগুন জ্বলে.
সোহাগা বিহীন স্বর্ণ-হৃদয় উথলিয়া যায় গলে।
- তুমি যে আমার মহা-মহিয়সী উজ্জ্বলতর প্রভা!
স্বর্গ হতে নেমে এসেছো তুমি মনোহরা মনোলোভা।
একটি জীবন করি বিসর্জন তোমার নামেতে, রাণী!
পরভৃত সব করে কলরব, অন্যেরা কানাকানি।
- আজ হতে কবি, মুক্তি দিলেম ছিঁড়ে সব ভালোবাসা,
বুঝবে সেদিন চলে গেলে দুরে, আমি নই তামা-কাঁসা।
পরশ পাথর লুকিয়ে রেখেছি যতন করিয়া বুকে,
আঁধার সরাতে ঝড়োয়াল রাতে রাখতে পরম সুখে।
- তা'কি হয় রাণী! কবিতা বাখানি বন্ধ হইলো আজ,
প্রয়োজন নেই অলস সময়ে কবিতা লেখার কাজ।
আঁচলের তলে ঢেকে রেখো মোরে, সোহাগের জল ঢালো,
কাব্য কথার উজ্জ্বল আলো হয়ে যাক এলোমেলো।
- তোমায় আমি রাখবো বেঁধে আঁচলতলে, কবি!
দুঃখবোধের সরলতায় জীবন ছায়াছবি।
অলস ক্ষণে যদিবা আসে বিষন্নতার রাগ,
তোমায় স্মরি' সুখ লভিবো এইতো অনুরাগ।
নাইবা হলে, জগতমাঝে প্রাণ-পাপিয়া তুমি,
তোমার নামে বাজবে বাঁশি হৃদয় রুমিঝুমি।
ঝংকার জাগে জগত মাঝে ওঙ্কার সুর উঠি'-
কম্পন পেয়ে ত্রস্ত হৃদয় করছে তা' লুটোপুটি।
- আজকে আমার সফল হলো সমস্তদিন শেষে,
ভয় সকলি কাটলো যেন তোমায় ভালোবেসে।
যেথায় অতি প্রেমের ধারা সেথায় বহু দুখ,
দুঃখ মথিয়া এনেছি এই কাব্য কথার সুখ।
প্রিয়তি তুমি! নও গো নারী মর্ত্যলোকের 'পরে,
শুভ্র আলো ভুবনে ছড়াও কবিদের অন্তরে।
তোমার ছোয়া উষর ভূমি সাজায় রঙিন ফুলে,
সকল যুগে কবির প্রাণে ভাবনা আনে তুলে।
-বন্ধ কর কবি, তোমার কাব্য কথার ছল,
জলের ধারা নয়ন তলে বইছে অনর্গল।
-চুম্বনখানি রেখে গেলাম তোমার হস্ত দেশে,
মানুষ হয়ে আসবো ফিরে, নয়কো কবির বেশে।
- দুঃসাহসী জোয়ানের প্রশস্ত বিশাল বুকে
লুটিয়ে দিতে চাই আমার সৌন্দর্য নির্ভাবনায়;
তীক্ষ্ম কামনাকে পরিপূর্ণ করে ভরে দিতে পারে
আদরে সোহাগে চুমুর যাদুতে
যে-ই বেপরোয়া বলিষ্ঠ পুরুষ!
তাকেই বিলিয়ে দেবো দেহের বিস্তৃত প্রান্তরে
ইস্পাতের কঠিন বলয়ে সঞ্চিত কুমারীত্ব।
-হাহাকার করা বুকের ভেতরে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
ছড়িয়ে আদিমকালের উদ্দামতা
চরণ তলে লুটিয়ে দেবো জীবনের স্বাধীনতা,
সফলতার অহংবোধ;
অন্ধকারে খুঁজে নেবো চাঁদের তরল রজতধারা;
তারপর, কুয়াশার নদীতে আকাশ ঝামরে বৃষ্টি নামাবো।
(মরালীর মতো গ্রীবাখানি বাঁকায়ে, প্রশ্ন করলো মেয়ে)।
-তোমার প্রেমিকা আছে না কি ?
(বিশুষ্ক বদনে আনত নয়নে বিনীত উচ্চারণ, শব্দ-শ্রমিক বলে)।
-আমি একদিন এক ঈশ্বরীকে দেখেছিলেম, তোমার রূপের ভেতর,
যে এসেছিলো অদৃশ্যমানতার কোন স্বর্গলোক থেকে;
যার ঠিকানা অলৌকিক মেরুপ্রভার উজ্জ্বলতম কোন দেশে;
পথ দেখালো আমারে সে, চোখের ইশারায়;
দীর্ঘতর অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষ সীমানার অদ্ভুুত স্ফটিক আলোর দিকে;
আজও চলেছি সেই পথে সম্মোহিত প্রাণে, তার আহ্বানে।
- আমার রূপ! আমার রূপে খুঁজে পেয়েছো তুমি, ঈশ্বরীর প্রতিচ্ছবি?
(মাথা নিচু করা বিনীত প্রজার মতো, উর্ধ্বপানে তুলে দুই হাত, শব্দশ্রমিকের দৃপ্ত উচ্চারণ)।
-প্রেম দাও তুমি, দাও করুণাহীন ভালোবাসা।
দেখেছি জলের প্রপাতে,
জলের আঘাতে কঠিন পাষাণ ক্ষয়ে ক্ষয়ে লীন হয়ে যায় জলাঙ্গী জলে,
অথচ, আমার অশ্রুর ঘাতে একটুখানিও টললো না তোমার হৃদয়।
এতোই নিঠুর তুমি! এতোটাই কী নির্দয়!!
শব্দ-প্রেমিক ছিলেম; তুমিই করেছো আমায় শব্দ-শ্রমিক।
তাই, লীলার মাঝেই বেঁচে থাকি অনন্তকাল অবলীলায়
তোমারই নামে, তোমারই ধ্যানে, হে ঈশ্বরী!
(তারপর, ক্ষাণিক চুপ করে থেকে শব্দ-শ্রমিক
আদ্রকণ্ঠের ক্ষীণস্বরে বিগলিত নয়নে বলে,)
দু'হাত বাড়ায়ে বললে না তুমি, ''হে কবি!
আমি যে তোমার, আমার যা কিছু আছে, সব তোমারই''।
ছায়াতুর প্রাণ ধূসর মরুতে বপন করে প্রেম-মহীরুহ বীজ,
অপেক্ষায় আছি সুশীতল ছায়ার প্রত্যাশায়।
(এই কথা শোনার পর হাই তুলতে তুলতে কবির ঈশ্বরী বলে যায়)।
- বড্ডো ঘুম পেয়েছে আজ, এবার চলি, এই নিশুতি বেলায়।
ভালো থেকো তুমি, হে কবি।
২৭/১০/২০২০
মিরপুর, ঢাকা।