ধন্যবাদ যাঁর প্রাপ্য তাঁকে দেরিতে হলেও ধন্যবাদ জানানোটাই রীতি । সেই রীতিটি মান্য করার জন্যই এই লেখার অবতারণা । অবশ্য ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত কে না গায় ? এই সুযোগে আপাত অপ্রাসঙ্গিক কিন্তু প্রকৃত-প্রস্তাবে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা বলেও নেব ।
   আমার ছদ্মনাম “কাঁচাভূত মহাকালসংহার” নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে যৎসামান্য বিতর্কের সূচনা হয়েছিল এবং এই কারণে অনেকের উপদেশ, নির্দেশ, ব্যাজস্তূতি, মাধুর্য-মণ্ডিত মিছরির ছুরি-সঞ্চালনা অনুভব করেছি,  শুনেছি ও ভৌতিক অনুভবে ঋদ্ধ হয়েছি । বন্ধুরা কৌতুক করবেই । প্রতিকৌতুক কী দুঃসহ হয় ? তা হলে আমরা এক পরিবারভুক্ত এই ধারণাটাই তো শূন্য-গর্ভ বাগাড়ম্বর হয়ে দাঁড়ায় । নাকি আমার নামটি “ফেস-ভ্যালুতেই” বিচার্য হয়েছে ?
আমি কারো মন্তব্যে এতটুকু ক্ষুব্ধ হইনি, অসম্মানিত বা অপমানিত বোধ করিনি । বরং বেশ কৌতুক অনুভব করেছি ।
আপনারা কেউ কেউ  জানেন ছদ্মনামের ঘাত-অভিঘাত বা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় মাননীয় এডমিন আমাকে সতর্ক-বার্তা দিয়েছিলেন । এটা তাঁর অবশ্য করণীয় কর্তব্যের মধেই পড়ে । গৃহকর্তা  শক্ত হাতে হাল ধরবেন । এ আর বেশি কথা কী ? যে কোনও অনভিপ্রেত বিতর্ক অঙ্কুরে বিনষ্ট করা সুযোগ্য প্রশাসক হিসেবে তাঁর কাম্য দায়িত্ব । উনি স্ব-ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন ।
    আমাকে বার্তা দিয়েছিলেন,  আপনার “কাঁচাভূত মহাকালসংহার” নামটি না বদলালে একাউন্টটি ব্যান করা হতে পারে ।
অবশ্য নামটির যৌক্তিকতা কী তা জানানোর জন্য আমাকে আত্ম-পক্ষ সমর্থনের সুযোগও দিয়েছিলেন । এতে তাঁর দূরদর্শিতা ও মহানুভবতাই প্রকাশিত হয়েছে । মোটামুটি সংক্ষেপে যেটুকু না বললেই নয় সেইটুকুই বলেছিলাম ।
    মহামান্য এডমিন সাহেব ই-মেলে আমাকে জানালেন ঃ

“প্রিয় কাঁচাভূত মহাকালসংহার
বাংলা কবিতা ওয়েব-সাইটে আপনার পাতায় এডমিনের পক্ষ থেকে নিচের বার্তাটি দেওয়া হল ঃ
ছদ্মনাম সম্পর্কিত আপনার ব্যাখ্যা যুক্তি-সঙ্গত হওয়ায় এবং আপনার ছদ্মনামটির মর্মার্থ সম্পর্কে আপনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে
আপনার নাম “কাঁচাভূত মহাকালসংহার” নামটি থেকে আমাদের আপত্তি তুলে নিচ্ছি ।
  এই নামের জন্য আপনার একাউন্ট ব্যান করা হবে না । ধন্যবাদ ।


ধন্যবাদ ।
বাংলা কবিতা কর্তৃপক্ষ ।“
(বানান অপরিবর্তিত ।)


এই বদান্যতার জন্যই আমি একান্তভাবে মাননীয় এডমিনের কাছে কৃতজ্ঞ ও অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানাই ।


কেন কাঁচাভূত ? কেন মহাকালসংহার ? কীভাবে জন্মাল কাঁচাভূত মহাকালসংহার ? অর্থাৎ এবার ভূত-জন্ম ইতিকথা । খানিকটা ছদ্মনামের মর্মার্থও বলা যায় ।


আমি মশাই প্রচুর লিখি । গল্প-কবিতা-ছড়া-উপন্যাস-প্রবন্ধ-নাটক-রম্য-রচনা ইত্যাদি । রচনা–সংখ্যা জানালে অবিশ্বাস্য বিবৃতি বলেই মনে হবে । তাই ও লাইনে যাচ্ছি না ।
  এই সাইটে পটল বটব্যাল নামে এক কবি ( কবিতা দু’ একটা পড়েছি বলে মনে হয় ) কবিতা রচনা-সংখ্যা ও গুণগত মান সম্পর্ক নিয়ে কিছু একটা বলতে চেয়েছেন । কবিতা কম লিখলেই কবিতা হবে আর বেশি লিখলেই কবিতা হবে না—এমন তত্ত্বে মশাই আমি অন্তত বিশ্বাস করি না । বরং বেশি কবিতা লিখলে যাঁর একটাও লেখা কবিতা, কবিতা হত না, তাঁরও হাত থেকে কিছু কবিতা বেরিয়ে আসতে পারে । নাকি ?
   সুবর্ণরেখা নদীর বালিতে নাকি সোনার কণা মিশে থাকে । কেউ সারা দিন নানা শোধন–পরিশোধনের মাধ্যমে যা পায় তার মূল্য সোনার মূল্যে যাচাই হয় না । প্রাপ্তি ও আনন্দ-মূল্যে যাচাই হয় । কবিতা রচনার একটা আনন্দ-মূল্য আছে । আমার রচনাটি কবিতা হয়ে উঠল কিনা তা দেখার কী দরকার । আমার আনন্দ-মূল্য প্রাপ্তি । ওই প্রাপ্তিই কবিতা লেখার যর্থার্থ মজুরী । অনেক কবিতা রচনা করতে করতে যদি একটিও কবিতা লিখে ফেলতে পারি সে হবে আমার আনন্দ-মূল্যের উপরি পাওনা স্বর্ণ-মূল্য ।


যাক । ও সব অপ্রাসঙ্গিক কথা থাক ।
ও প্রসঙ্গে যাচ্ছি না । একটিই প্রাসঙ্গিক তথ্য দেব ।
আমার লেখা বড়ো কবিতার সংখ্যা প্রায় ৪৫০ । বড়ো কবিতা বলতে আমি শতাধিক পঙক্তি-সমন্বিত কবিতা বোঝাতে চাইছি ।
অবশ্য এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে ।
অনেকের মতে ছোটো কবিতা > ১৫-২০ পঙক্তি ।
মাঝারি কবিতা > ২০/২১ থেকে ৫০/৬০ পঙক্তি ।
দীর্ঘ কবিতা > ষাটোর্দ্ধ...।
আমার সমস্ত দীর্ঘ কবিতাই শতাধিক পঙক্তি-সমন্বিত । না এই তথ্য জানাটা আমার বন্ধুদের ততটা জরুরী নয় ।
আমার সমস্ত দীর্ঘ কবিতার মধ্যে  তিনটি কবিতার পঙক্তি-সংখ্যা প্রায় ৬৫০০ ।
তিনটি কবিতার নাম   ১) মহাকালসম্ভব ( প্রায় ২৭৫০ পঙক্তি )
                           ২) কাঁচাভূত  ( প্রায় ২০০০ পঙক্তি )
                           ৩) মহাকালসংহার  ( প্রায় ১৮০০ পঙক্তি )
এই তিনটি কবিতার মধ্যে "মহাকালসম্ভব" প্রকাশিত । "কাঁচাভূত" কবিতাটিও প্রকাশের অপেক্ষায় আছে । কিন্তু অত বড় কবিতা ছাপার যোগ্য শ্লট পাওয়া যাচ্ছে না ।  তা ছাড়া কবিতা তিনটিই অত্যন্ত দুরুহ বলে অনেকের মনে হয়েছে ।  মশাই অনেকের কেন আমারই এখন বেশ দুরুহ বলে মনে হয়। ( ভয় নেই, ওই কবিতাগুলির একটিও এখানে পোস্ট করব না । “ছদ্মবেশ” পোস্ট করতে গিয়ে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত । )
     এই সব সাইটে কবিতার পাতায় বেশির ভাগ পাঠক কয়েক সেকেণ্ডের জন্য চোখ বুলিয়েই ক্ষান্ত থাকেন ।  সব কবিতা ওভাবে পড়া যায় না ।( ধরলে কোনও "কবিতাই" ওভাবে পড়ে মন্তব্য করা যায় না ।  শর্ত >রচনাটি সত্যকারের ভাব-ঋদ্ধ কবিতা হতে হবে । )
আমার “মহাকালসম্ভব “ থেকে কয়েকটা পঙক্তি উদ্ধার করে দিই । কেন এ কবিতায় চোখ বোলালেই পাঠ-ক্রিয়া শেষ হয় না, সেই দাবির সারবত্তা বোঝা যাবে  ঃ


“ঢেউ শান্ত তাপ শান্ত ঘনবস্তুপ্রতিবস্তুঘূর্ণ্যাবর্তশিখর শিখরে দাঁড়ায় উপক্রম
ছিন্ন অগ্নিধূলিবালিভস্মমেঘ  নব-সঞ্জাত তমসামাতৃকাস্তন্যদুগ্ধপুষ্ট বৃদ্ধিশীল উপক্রম
ঘূর্ণমান  মহাচক্র চক্রকেন্দ্র লুপ্তসংজ্ঞাভারাক্রান্ত ঘনভার অতিভার ক্রমসঞ্চরণশীল
অন্তর্বেগ অতিবেগ বেগশীর্ষে বেগশীর্ষে উল্লম্ফন ছিন্নমুণ্ড গন্তব্য অনিশ্চিত ...
                                               ইত্যাদি... ( ১৭৫৮-১৭৬১ পঙক্তি )


আমি আমার “মহাকালসম্ভব “ কাঁচাভূত  মহাকালসংহার ছদ্মনামে ছাপাতে বলেছিলাম । কবিতায় এমন কিছু অনুষঙ্গ আছে ওই নামটি রচনাকারের হলে আলাদা একটা আবহ তৈরি হয় । তো এই সাইটে নাম রেজিস্ট্রি করার সময় ওই নামটির কথাই মনে এসে গিয়েছিল ।