রাধারাণী আনমনা হইয়া বাতায়ন সম্মুখে আসীন, এমতবস্থায় সখীগণ প্রবেশি কহে -


"চল চল রাধারাণী
যমুনা হতে জল আনি
ওদিকে বয়ে যায় বেলা
কাজের কি শেষ আছে গুনি"?


রাধারাণী শশব্যস্ত ভাবে কলসি লইয়া সখী-সমাবৃতা হইয়া গমন করেন।  পথিমধ্যে ললিতা নামী জনৈক সখীরে ডাকিয়া কহেন -


"শোন ললিতে বলি তোরে
আবার যদি বাঁশির সুরে
করে কান ঝালাপালা
তার বাঁশি দিব গুঁড়ো করে"।


কথা শেষ হতে না হতেই সেই মন-কাড়া  বাঁশি উতলা হইয়া বাজিয়া উঠে। সেই শুনিয়া ললিতা উত্তর করেন -


"ওই শোনো হে রাধারাই
কদমতলে বসিয়া কানাই
বাজায় মন-ভুলানো সুরে
তোমার যদি দেখা পাই"।


আখর :


বাঁশি শুনে রাধারানীর কি যেন কি হইল
রক্তিম বরণ হইল বদন, বিরক্তি ভরিল
ভাবে - 'মোর লাগি বাজে বাঁশি কেন অপরে শুনিল'
ক্রোধভরে একস্থানে দাঁড়াইয়া পড়িল।


সেই দেখিয়া সখীগণ ভীত ও উদ্বিগ্ন মুখে বলে -


"ছেড়ে দে ভাই ছেড়ে দে
শুনিস না ওই মোহন বাঁশি
ছেড়ে দে ভাই ছেড়ে দে
সে আপন মনে বাজায় বাঁশি
ছেড়ে দে ভাই ছেড়ে দে
কি দোষে সে হল দোষী
ছেড়ে দে ভাই ছেড়ে দে"।


পরন্তু বংশীধারীর দর্শন লাগি রাধিকা চিত্ত অতিশয় ব্যাকুল, কিন্তু সেই ভাব গোপন করিয়া তিনি বলেন -


"আর সহ্য হয় না ভাই, কত করি যতন
তোমরা মোর প্রানসখা করি নিবেদন
চল যাই ত্বরা করি ওই দুষ্টের নিকটে
এমন শিক্ষা দিব যাতে মনে দাগ কাটে"।


সখীগণ প্রত্যুত্তরে বলে -


"গিয়া কি কহিবি তারে
সে বাজায় বাঁশি মোহন সুরে
আপন মনে কদম তলে,
বংশীবাদন কি দোষ ধরে" ?


রাধারাণী হতবাক হইয়া কহেন -


"কি কহ হে সখী আমার
কোনো দোষই কি নাহি তাহার ?
সকল দোষে দোষী আমি
এই কি তোমাদের বিচার" ?


পরে দুঃখিত হয়ে (ঢিমেতালে)


"আমার কোথায় গেল মুখের হাসি
সদা চোখের জলে ভাসি
ঐ বাঁশির ডাকে আমার এ মন
হারায় কোন স্রোতে ভাসি"।


অতঃপর ক্রোধান্বিত হইয়া (মধ্যমতালে)


"ঐ বংশীধারী এত সাহস কথা হতে পেল ?
বিনা অনুমতিতে মোর পরাণে উদিল
মোর মন মোর বশে নাই, সে বশ করিল
মনকে বলি ডাঁয়ে যেতে, বাঁয়েতে ফিরিল
আমি রাজ-রাজেশ্বরী সকলে নমিল
শুধু ওই গোয়ালার বেটা দুঃসাহস করিল" !


এরপর কৌতুক ও ক্রোধ মিশ্রিত করিয়া (দ্রুতলয়ে)


"করিব একটা হেস্তনেস্ত
ভাঙ্গিব তার বাঁশি আস্ত
দুই-চারিটি চড় মারি
করিব তাহারে পরাস্ত।
শুন শুন সখীগণ তোমাদিগে বলি
তোমরা যদি না আস আমি একা একা চলি"।


এই শুনিয়া সখীগণ একে অপরের উদ্দেশ্যে বলে -


"চল মোরা যাই সবে
নইলে সখীর গোঁসা হবে,
প্রানাধিকা প্রিয় সখী
কি করিতে কি করিবে"।


জনৈকা সখী রাধারানীর দিকে ফিরিয়া বলে -


"তবে তুমি শুন রাধারাই
মোরা কথা কইব নাই
শুধু রহিব তব সাথে
যা করার কোরো দুইজনাই"।


রাধারাণী উত্তরে কহেন -


"তবে তোমরা রয়ো চুপটি করে
আমি ছাড়িব নাই তাহারে
বুঝায়ে দিব ভালো করে
কত ধানে কত চাল বাড়ে"।


আখর :


অতঃপর বংশীধারী দরশনে
রাধিকা সাথে চলে সখীগনে
যমুনাতীরে উত্তর পানে
শ্রীরাধিকা যায় পিছনে।


পুনঃ


অঙ্গ করে ঢলঢল কুতুকী নয়ন
কি হেরিবে ভাবি লাগে শিহরণ
পদযুগল হয় ভারী সরে না চরণ
অন্তর্যামীকে করে মনেতে স্মরণ
বলে - 'রেখো মোর লাজ প্রভু এই নিবেদন
সখী-সমীপে যেন না যায় সম্ভ্রম'।


(দ্বিতীয় অঙ্ক সমাপ্ত)