আখর :


কুঞ্জবনে ছিল দুই          শুক-সারীর কথা কই
          ভবিতব্যজ্ঞাত পক্ষী দুইজনে
সারী রাধার অনুগত          শুক শ্যামের প্রিয়পাত্র
          দেখিল রাই চলিছে কৃষ্ণ সনে।


দেখিয়া তাদের:


          আনন্দ যে ধরে না -
এ-ডাল সে-ডাল লাফায় খালি
         আনন্দ যে ধরে না -
বলে,"আসবে ভ্রমর ফুটবে কলি"
          আনন্দ যে ধরে না -
মিলন হবে যে রাই-বনমালী
          আনন্দ যে ধরে না -
করিবে তাহারা জলকেলি
          আনন্দ যে ধরে না -


আনন্দে মাতোয়ারা শুক সারীকে বলে -


"মোদের জনম সার্থক হোলো দেখিব দোঁহারে
এতকাল তপস্যার ফল মিলিবে এবারে
বঁধু চাহিয়া দেখো ওই গগনে সমভিব্যহারে
আসিয়াছেন দেব-দেবীগণে পুস্প লইয়া করে।"


সারী উত্তর করে,


"সত্য বটে প্রানসখা          এবার মিলিবে দেখা
          কত পুণ্যবলে মোদের
কি করিব তাই ভাবি           আনন্দেতে শুধু কাঁদি
          বারিধারা বয় শ্রাবণের।
ভাবিয়া না পাই কিছু          হেরিব দোঁহারে পিছু
         গান গাহিব মিলনের
অদ্য এই পরমক্ষণে          এইটা বুঝিয়াছি মনে
          মুক্তি শীঘ্র ঘটিবে মোদের।"


-------------------------------------------------------


ওইদিকে সখীগণ দেরী হইয়া যাইতেছে ভাবিয়া দ্রুতপদে অগ্রসর হয়।  কিয়ৎক্ষণ পরে লক্ষ্য করে, 'আরে! রাধারাণী কোথায়!' পিছনে ফিরিয়া দেখে সে রাধারাণী মুখ কালো করিয়া গজেন্দ্রগমনে আসিতেছেন।  সেই দেখিয়া ক্ষোভ স্বরে সখীরা বলেন, -


"একি তব ছলনা রাই          কাজের মোদের অন্ত নাই
          তোমা লাগি তাই করি ত্বরা -
তুমি কিনা শেষকালে          মই কেড়ে নিয়ে নিলে
          ছাদে পড়ে রহিলাম মোরা !"


রাধারাণী নিজ ভুল সম্পর্কে অবগত হইয়া লজ্জিত বদনে সখিগণের সহিত মিলিত হইয়া বলেন -


"ক্ষম মোরে সখীগণ          হইয়াছিলাম আনমন
এত সময় পার হইল          কোথা তব বৃন্দাবন?"


দূরে কদম্ব-বৃক্ষের চূড়াখানির পানে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া বিশাখা বলিয়া উঠে -


"ওই দেখো রাধারাণী             কদমগাছের শিরোমণি
না হেরিলে দেখো পাশে          কৃষ্ণকলি জ্বালায় বহ্নি।
যেনো সেই তরুতলে             বাজায় বেণু জগৎভুলে
মোদের সেই রাখালরাজা        যে নামে চিনে সকলে। "


আখর:


কদম্ব বৃক্ষখানি          মোদের রাই কমলিনী
          যেই ক্ষণে দরশন করিল
তদুপরি সুমধুর          মদির বেণুর সুর
          সারা অঙ্গভরে বাজিল
খাড়াইয়া পড়ে রাই          দেহে যেন বল নাই
          সখীগণে ডাকিয়া কহিল,


"ওলো সখী শুনে যা  - গিয়াছি ভুলিয়া
যেতে হবে ত্বরা করি এখনই ফিরিয়া -
একখানি জরুরি কাজ পড়িয়াছে মনে
নইলে রাগ করিবেন ভারী পিতৃ-মাতৃগণে,
তোমরা গিয়ে দিও তাহারে মোর সন্দেশ -
বংশী-বাদন বন্ধ করো, নইলে হবে শেষ। "


সখীগণ শুনিয়া কূপিত হইয়া সমস্বরে বলে, -


"ওসব কথা শুনবো না -
মোদের লইয়া ইচ্ছামত
খেলা খেলিতে দেব না
তোমা কারণ আমরা আগাই
তুমি কহিছ যাবো না
বুঝি তুমি শুধু একটি বটে
আর আমরা সবাই ফেলনা !
তুমি যদি না আসো তবে -
মোদের মনে রাখিও না।"


নিজ ভুল বুঝিয়া রাধারাণী বলেন, -


"চল চল সখী ভাই          তোমাদিগের সাথে যাই
          হইবে যাহা ভাবিব পশ্চাতে
দরকারী এক কাজ          মনে হটাৎ এল আজ
          তাই কহিনু তব সমীপে।"


আখর:


যেমন ঘূর্ণিপাকে পড়লে ভাই          বাঁচার কোনো আশা নাই
          সর্ব অঙ্গ হইয়া যায় অবশ,
মোদের কমলিনী রাই             সেই দুরবস্থা ভাই
          বেদের বাঁশি করে নাগিনীরে বশ।
না হেরিয়া কারে          শুধুমাত্র শ্রবণ করে
           যদি প্রাণ হয় উতলা,
জ্ঞানী-গুনী সর্বজনে            পূর্বরাগ বলে মানে
          নায়িকা হয় সদা চঞ্চলা।


(তৃতীয় অঙ্ক সমাপ্ত)