আমার শৈশবের উঠোনে পা ফেলেছিলেন জ্যোতিরিন্দ্র দাদা—
  একবার বাঁশি, একবার বই, কখনো চুপচাপ চোখে স্বপ্ন।
  মাধুরী দিদি খোপায় গুঁজতেন ফুল,
  তাঁর হাসির শব্দে জেগে উঠত আমার লেখার আগ্রহ।
  নন্দলাল দাদা কাঁধে তুলে নিতেন বাগানে—
  পাতার ফাঁক দিয়ে আলো দেখিয়ে বলতেন, “এই আলোতেই কবিতা লেখা যায়।”

  হেমেন্দ্র দাদার হাত ধরে প্রথম ভেসেছিলাম জলপথে,
  তিনি বলতেন—জীবন এক নৌকা, বইতে হয় নিজের হাওয়ায়।
  মেয়েদের আঙিনায় ঢুকতে মানা ছিল,
  তবু শোভনাদের গান জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ত হৃদি-খোপে।
  ঠাকুরদার ধ্যানমগ্ন মুখে বুঝেছি—
  নীরবতা কখনো কখনো সবচেয়ে উঁচু সুর।

  একদিন মেজো দাদার বই চুরি করে পড়েছিলাম,
  সেই চোর-স্মৃতিতেই জন্ম নিয়েছে আমার ‘শিশু-সাহিত্য’।
  ছোট কাকা গিরীন্দ্রনাথ বলতেন—
  “ছোটরাও পারে বড় স্বপ্ন দেখতে।”
  বাইরের বাগানে গোপন খেলা, ভিতরের ঘরে ছায়া-নাটক,
  চুপি চুপি বানাতাম গল্প, নিজেদের মতো করে।

  মোহন, আমার সহচর চাকর, নীরব সঙ্গী হয়ে যেত—
  তার চোখেও দেখতাম অজানা দেশ।
  এইসব মুখ, এইসব সুর, এইসব আলো—
  আজও কলমে ফিরে আসে, সময়ের রেখা ছুঁয়ে।