দেখা হল কিশোরবেলার সায়ন্তনীর সাথে,
সবাই যখন ব্যস্ত ভীষণ বাণী-বন্দনায়।
মাঘী সকাল হঠাৎ যেন স্মৃতিমেদুর হয়ে,
একঝাঁক কিশোর-স্মৃতির ভীড়ে হারিয়ে যায়।


সায়ন্তনীর কপালে আজ ছোট্ট একটা টিপ,
বাসন্তী-রং আঁচল জুড়ে মিঠে রোদের আলো।
ঠোঁটে হয়ত লাল ছোঁয়ালে আরও ভালো হত,
না:! যেমন আছে তেমনটাতেই মানাচ্ছে বেশ ভালো।


চোখাচোখি, হাই-হ্যালো, আঁকল দেখি মুখে,
চোখ জুড়ানো, দুখ্-ভুলানো, বুক পুড়ানো হাসি।
"ভালো আছিস?" - এর জবাবে আর বলা হলনা,
আজকাল তো দুঃখ নিয়েই বাঁচতে ভালোবাসি।


ক্ষতবুকের খবর নাহয় নাইবা দিলাম ওকে,
বলতে হল ভালোই আছি, ধরা পড়ি পাছে।
সামলে আঁচল, চুল সরিয়ে কানের পাশে পাশে,
বলল হেসে সায়ন্তনী, সেও ভালোই আছে।


একটা দুটো চেনা প্রশ্ন, আরও চেনা উত্তর,
কোথায় থাকি, কোন মুলুকে, কেমন কাটে দিন,
কেমন করে বোঝাই ওকে ছদ্মসুখেই বাঁচি!
জটপাকানো জীবনটা যে নিতান্ত সঙ্গীন।


বঙ্গনারীর আড়ালে সেই কিশোরীকে খুঁজি,
যেমনটা ঠিক দেখেছিলাম ফাগুন বেলাশেষে।
ড্যাবড্যাবে চোখ, বিনুনী, ফ্রক, আমার প্রথম প্রেম,
বড্ড বেশী বদলে গেছে সময়স্রোতে ভেসে।


কিশোরী দিন, ক্যাডবেরি আর চিঠি খাতার ভাঁজে,
সে ও কি আজ খুঁজলো নাকি আমায় জরিপ করে?
রোগাপাতলা, বইয়ের পোকা, লাজুক লাজুক ছেলে,
আমিও তো আজ বদলে গেছি এতগুলো যুগ পরে।


"টাচ্-এ থাকিস, ভালো থাকিস, আবার কথা হবে"
বিদায় নিল সায়ন্তনী, স্বল্প কথার পরে।
যে প্রশ্নরা নিশুত রাতে হানা দেয় মগজে,
জবাবগুলো বড্ড বেশী জানতে ইচ্ছে করে।


আমাদের সেই কিশোরদিনে ছাড়াছাড়ির পর,
কেঁদেছে কি মুখ লুকিয়ে আড়ালে আবডালে?
আজও কি কোনো একলা দিনে, ঘুম-না-আসা রাতে,
হু হু করে বুকের ভেতর, স্মৃতিরা খোঁচালে?


মনে আছে ওই পাগলামি সব করেছি একসাথে?
মনে আছে কি, কষ্ট পেত আমার কষ্ট দেখে?
হয়ত সবই ভুলেছে ও, ওটাই স্বাভাবিক।
কিশোরবেলার ছেলেমানুষী কি লাভ মনে রেখে?


আমার আছে কপাললিখন ব্যথা নিয়ে বাঁচা,
বাঁধভাঙা এই স্মৃতির জোয়ার আটকাবো কিকরে?
হতচ্ছাড়া বাতাসটাও উড়িয়ে শুকনো পাতা,
উস্কে দিলো চিন্তাটাকে বৈরাগী আদরে।


হাঁটতে হবে একলা একা, স্মৃতির ভারে ঝুঁকে।
সময় কি আর কাটবে এখন যেমন কাটে রোজ!
গুলিয়ে গেল চেনা রুটিন, এই অবেলায় এসে,
হঠাৎ কেন পেলাম আবার সায়ন্তনীর খোঁজ!


******************************