এই শেষবার, এই শেষ জন্ম আমার।
তারপর বৈতরণী পার।
শেষবার শুনে যাব নিষ্পাপ শিশুর খলখল হাসি।
শেষবার ফুল ফোটা দেখে যাব।
শেষ চুমু এঁকে যাব প্রেয়সীর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে।
তারপর,
তারপর ঘোলাটে হয়ে আসবে দৃষ্টি।
আবছা আবছা মনে পড়বে কয়েক জন্ম আগের
এক পুনর্জন্মের কথা।
অনাথ আশ্রমের দরজায় সিস্টারের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
সিস্টার আদর করে বলছে,
"দ্যাখো খোকা, তোমার বাবা মা এসেছেন।
নতুন বাবা মা।
অনেক খেলনা পাবে, অনেক জামাকাপড়,
অনেক খাবার,
অনেক অনেক আদর।
যাবে?"
আবছা আবছা মনে পড়বে,
তারও আগের জন্মের কথা;
আমি বাঁচবো বলে, মানুষ হবো বলে,
কেউ একজন আমাকে শুইয়ে দিয়ে গেল
আশ্রমের দরজায়।
কেমন দেখতে ছিল ওকে?
মনে পড়েনা।
সে মুখে কি নতুন মায়ের মত এত মমতা ছিল,
নাকি নিষ্ঠুর ছিল সেই মুখ?
মনে পড়েনা।
দুঃস্বপ্নের রাতেও তো অবগুণ্ঠিত সেই মুখ
জেগে জেগে উঠে অভয়বাণী শোনায়।
তারপর অনেক জন্মই তো পেরিয়ে এসেছি।
দুধেল জ্যোৎস্নাভরা নিশুতি রাতে পাঁজর ভাঙার শব্দে
জন্মে জেগে উঠে দেখেছি,
নিকানো উঠোন লালে লাল।
আদ্যিকালের চিরচেনা ন্যাকড়া দিয়ে মোছার চেষ্টা করিনি।
চামড়ায় শুকনো রক্তের দাগ,
ফাটলে রাগের আগুন,
ঝুলিভরা অর্জিত ঘৃণা,
সবকিছু সযত্নে সৃজন করে,
এক জন্মেই অনেক জন্ম পেরিয়ে আজ এসে দাঁড়িয়েছি বৈতরণী তীরে।
অনেক জন্ম বেঁচেছি।
এই শেষবার মৃত্যুর কাছাকাছি বাঁচবো।


*******************************