হাজার বছরের এক মৃতপ্রায় বৃদ্ধ
করুণ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে
প্রাণের তলানিটুকু নিয়ে।
মানবতা নাম তার।
ওর চোখ দিয়ে সমাজটাকে আর একবার দেখার চেষ্টা করলাম।


দেখলাম এক পৈশাচিক বিষপূর্ণ অন্ধকার
কিভাবে ঘিরে ধরেছে আমাদেরকে।
চারিদিকে কামার্ত নেকড়ের দল ওৎ পেতে আছে
আর ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে কোমল শরীরগুলো।


দেখলাম ঐ বিষের স্রোতে ভাসতে ভাসতে
কিভাবে আমরা বিকিয়ে দিচ্ছি নিজেদেরকে।
শাসনব্যাবস্থার চোখে ঠুলি, কানে তুলো।
রুদ্ধদ্বারে আশার আঘাত করে করে ক্লান্ত আমরা।


আমরা তারাই,
যারা নিজেদের বাস্তববাদী বলি,
যারা সবক্ষেত্রেই দক্ষ গোয়েন্দাসুলভ তৎপরতায়
সমাস্যার পাহাড় বানিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলি;
কিন্তু সমাধান দিতে পারিনা।
সমাধান দিলেও, নিজেরা ঠিক সরে পড়ি।


আমরা তো তারাই,
যারা অসহ্য উত্তপ্ত সব স্মৃতি, দুঃখ, ক্ষোভ আঁকড়ে বেঁচে থাকি।
শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচতে এতই ইচ্ছুক যে,
অন্যায়কে দিনের পর দিন প্রশ্রয় দিয়ে চলেছি,
পাছে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয় সেই ভয়-এ।
হাত বেঁধে রেখেছি নিজেদের।


মৃতপ্রায় মানবতার ঐ করুণ দৃষ্টি দেখে,
মনটা যেন বাধাভেদী লক্ষ্যস্পর্শী তীক্ষ্ণ অস্ত্র হয়ে উঠলো।
ইচ্ছে করল টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিই মুখোশ সবার।
রুখে দাঁড়াই অন্যায়ের বিরুদ্ধে।


দেওয়ালে টাঙানো মহাপুরুষদের মুখে হঠাৎ দেখলাম
আস্ফালনের ফিচেল হাসি।
বুঝলাম, নিজেও যে মুখোশ পরে আছি।
বুঝলাম, মানবতার অর্থ এখন বদলে গেছে।


এখন মানবতার মানে
মানব আর নীরবতা......


যেসব আলোর দিশারী এখনো বাচিঁয়ে রেখেছে
বৃদ্ধ মানবতাকে,
আর কদিনই বা টিকে থাকবে...
বিষের স্রোত এতই তীব্র।


আহা রে,
তাজা তাজা ফুলের মত নিষ্পাপ শিশুরা।
বিষ সাজিয়ে রাখছি ওদের জন্য।
ওরা পান করবে;
তারপর সাজিয়ে রাখবে ওদের উত্তরসূরীদের জন্য।



© Kanak Kanti Bera