কল্পনার আবেশে আজ ঘোর লেগে যায়,
শব্দের খোঁজে আমি দিকভ্রান্ত হায়!
চোখ বুজতেই আবার আসে সেই প্রহর, দেই অন্ধকারে ডুব;
কিছু দূর পার হলেই সেই পুঞ্জীভূত চির চেনা কালো মেঘের স্তূপ!
আমি ঝাঁপ দেই কুহক মেঘের মেলায়,
আধার-কাল ছাড়িয়ে চলে যাই অন্য জগতে,
শব্দহীন এই অবেলায়।


কোথায় খুঁজবো সব শব্দ, যা দিয়ে লিখবো সুখ-দুঃখের কাব্য?
মেঘে ভেসে চলে যাবো রূপকথার ইচ্ছাপূরণ কুয়োর কাছে?
চাইবো অনুগ্রহ, যাতে হয়ে যাই কোনো সব্যসাচী শব্দশিল্পকর?
নাকি যাবো শব্দকল্পদ্রুম নামক সেই অচিন কল্পতরুর খোঁজে?
মেঘ ছুঁয়ে ভাবলাম আজ চলে যাই ওই প্রাচীন বৃক্ষের কাছে।


এক নিমেষে পৌঁছে গেলাম ধুধু বিজন প্রান্তরে,
গোধূলি শেষে যখন নেমেছে আঁধার,
হাটছি যেন চিরদিনের মতো কোনো অচেনা পথে আবার!
শুভ্র শ্মশ্রুমন্ডিত এক বৃদ্ধ পথরোধ করে দাঁড়ায়-
বললো আমায়, 'ওদিকে যেতে পারবে না আর,
আছে যক্ষ, আছে তেনারা যারা পাহারা দেয় ওই অচিন বৃক্ষ!'


আচমকা শুরু হয় এক প্রচন্ড ঝড়!
কিন্তু যাবোই আমি ওই বৃক্ষের কাছে, আজ আমি বদ্ধপরিকর!
অশরীরী চিৎকার ভেসে আসে,
শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের স্রোত নেমে যায়।
প্রচন্ড ঘূর্ণি আমায় উড়িয়ে নিয়ে যায় কোনো এক অজানায়।
অপলক নেত্রে দেখি আঁধারের মাঝে উজ্জ্বল এক প্রাচীন তরু।
দেখে মনে হয় যেন কোটি তারা জ্বলছে জোনাকির মত!
ভূতুড়ে অবয়বগুলো চরকির মতো ঘুরপাক করে চলেছে চতুর্দিক।
চমকে দিয়ে কল্পতরু শব্দকল্পদ্রুম সুরেলা কণ্ঠে বলে ওঠে-
‘কেন এসেছো এখানে?'
ভেবে বললাম, 'আছে অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, আছে অনেক চিন্তা,
শব্দহীন আজ, কিভাবে লিখবো এক কালজয়ী কবিতা?'
অচিন শব্দকল্পদ্রুম আবার বলে ওঠে-
''জগতের সব শব্দ যদি তোমায় করি দান,
তাতে হবে না কবিতা, হবে এক অভিধান।
যদি চিন্তাকে ছড়িয়ে দাও পৃথিবীর আনাচে কানাচে,
তাহলেই হবে কবিতা, তাতেই তো সমাধান।''


মেঘ সরে যায়, আবার ফিরে আসি এই পৃথিবীতে;
আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠি।
জানালা দিয়ে উঁকি দেয় শুভ্র আলোকোজ্জ্বল সবিতা,
শুরু হয় নতুন একটি দিন, নতুন একটি কবিতা।