ছোটো গল্প ,


রফিকের বয়স পনেরো বছর হবে হয়তো।  
নাদুস নুদুস চেহারা খুব চালাক চতুর সে ।
তার  অনেক ধরনের বুদ্ধি  বুদ্ধিমত্তা ইতিমধ্যে  প্রকাশ ঘটেছে ।
যেটা  কে বলা হয় মেধা সম্পন্ন  ।
পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিল  সালটা ছিল ১৯৭১ ।
রফিকরে বাবা বয়স ৩৫ বছর হবে আনুমানিক।
রফিকের  বাবা একদিন বাজারের উদ্দেশ্যে বের হলো সেই যে গেল আর ফিরে এলোনা।
এই নিয়ে কান্নাকাটি করতো  সব সময় তার  মা।
রফিক তোর বাবা আর ফিরে এলো না।  এখন আমি চলবো কিভাবে,  কি ভাবে  সংসার চালাবো।  আমার তো আর কেউ নেই আল্লারে ওরে বাবারে ওরে মা। আমি এখন কি নিয়ে বাঁচব।
তার মাকে সান্তনা দিতো।  মা তুমি চিন্তা করো না বাবা একদিন ঠিকই ফিরে আসবে। যেখানেই থাকুক বাবা আমার  মনে হচ্ছে ভালো  আছে । এই বলে তার মায়ের চোখের পানি মুছে দিতো।
এর মধ্যে সারাদেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো।  ছকিনা বিবি বলছে মনে হয় তোর বাবাকে পাকহানাদারেরা গুলি করে মেরে ফেলেছে।
  মা  তুমি এইসব চিন্তা করোনা, আমার বাবা বেঁচে আছে  দেখবে নিশ্চিয় একদিন ফিরে আসবে আমাদের বাড়িতে।
তার দাদা খুব রসিক ধরনের লোক ছিল । চা এর প্রতি মারাত্মকভাবে   আসক্ত ছিলেন । একদিন চা না খেলে দিনটাই যেন  বৃথা ।  বট তলায় বসে চা খেতে গল্প করতো,  পুরনো দিনের কথা বন্ধু বান্ধবদের সাথে বসে।


হঠাৎ একদিন উনি শহরে গেলেন ।
শহরে যাওয়ার পরে হলো বিপত্তি।
দুই হাত দিয়ে দুটি ইট ধরিয়ে দিলো হানাদাররা।
তা নিয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে  হেটে হেটে রেখে আসতে হলো  । এভাবে তাকে দিয়ে দুই-তিনবার নেওয়ার পর  রফিকের দাদা খুব বিরক্ত বোধ করছিল ।
সে বাড়িতে এসে সবাইকে ডেকে সব ঘটনা খুলে বললো। আমিতো পাকিস্তানের পক্ষে ছিলাম,  কিন্তু  এখন মনে  হচ্ছে  এই দেশটা পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশি হয়ে যাবে । মনে হচ্ছে আর পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন আর করতে পারবোনা আমি।
তারা যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন শুরু করেছে ছোট্ট  বড় বৃদ্ধা মহিলাদের কে নিয়ে যেভাবে ইট গুলো টা নাচছিল । একথা শুনে রফিক মনে মনে রাগ গুস্সা  খুব  জন্ম নিয়েছিল ।
  সে ভাবল কি করা যায় মনে মনে। সে বুদ্ধি করে তার মাকে বলল মা আমি মুক্তি যুদ্ধে যাবো ।
সখিনা বিবি বলেন।  বাবা তুমি ছোট এই বয়সে যুদ্ধ কিভাবে যাবে।  তুমি যেওনা না বাবা তোমাকে যেতে দিব না । তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো তুমি তো আমার একমাত্র অবলম্বন। এই আল্লাহর জমিনে তুই ছাড়া আমার কে আছে আপন। বলতে পারাবি  বাবা।
মা আমাদের পাশের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে ওখানকার লোকজন কে  দরে নিয়ে যাচ্ছে ।
  সুন্দরী মেয়েদেরকেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ঘরে  চাউল গরু-ছাগল পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। তার নর পিশাচ তারা মানুষ না এর প্রতিরোধ করতে হবে আমাকে এবং এলাকার  সবাইকে।
মা তুমি খোঁজ নিয়ে দেখো সবাই যুদ্ধে যাচ্ছে,  আমিও যাব । তার মা কিছুতেই রাজী হচ্ছিল না।  মা দেখ দেশের যে পরিস্থিতি যদি মা-বোনের ইজ্জত না থাকে তাহলে আমার বেঁচে থেকে কি করব ।  এরকম হতে পারে না।
  আমার তোমার উপর যেকোন সময় হামলা হতে পারে। হতে পারে  যেকোন সময় মৃত্যু। এইভাবে মৃত্যুর চেয়ে যুদ্ধ করে মরল অনেক ভালো ।  তারচেয়ে যুদ্ধে যায়ও উত্তম।  দেশের জন্য যুদ্ধ করে মারা গেলে শহীদ হবো মা।
আমার জন্য দোয়া করো বেশি করে ।
তার মা তাকে অনুমতি দিলো, কিন্তু তার মায়ের কান্না থামলো না।  অনবরত কান্নাকাটি  করে যাচ্ছিল।   রফিক তার মাকে বোঝাচ্ছিল,  মা তুমি কেদনা তুমি কাঁদলে আমরা দেশ স্বাধীন করবো কিভাবে । তুমিতো আমাদের ভরসা।  তোমার দোয়া অবশ্যই আমরা দেশকে স্বাধীন করবো ইনশাআল্লাহ।  
পাড়ার কয়েক জনকে নিয়ে লুকিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে গেল।
সেখানে দুই মাস থেকে যুদ্ধের কৌশল শিখে আবার দেশে ফিরে আসলো।
এই  যুদ্ধের রণকৌশল  শিখতে তার কত কষ্ট যন্ত্রনা হয়েছে।  
কতবার তার মায়ের কথা মনে হয়েছে । আদর স্নেহ ভালোবাসা সব সময় মনে পড়তো।  আর মা হাতের রান্না কথা কখনো  ভূলতে পারেনি ।  কিন্তু সে দেশমার মায়া জন্য দেশ ত্যাগ করেছিল। সেই কথা  ভাবতো।
  সেখানে সে যুদ্ধ কৌশল শিখে দেশে ফিরল কেউ তখন বুঝতে পারেনি ।
অনেকে ভাবছে হয়ত সে নানার বাড়িতে দেশে  যুদ্ধের শুরু  হয়েছে সেই  জন্য চলে গিয়ে ছিলো হয়তো ।
  তাদের বাড়ি কাছে  শহর। এই শহরের  ক্যাম্পে প্রায় চলে যাইতো ।    সে বুদ্ধি করে এলাকা থেকে ডিম চাউল মুরগি বিভিন্ন শাক সবজি ফলমূল নিয়ে যেতে।  সেগুলো নামে বিক্রি করে আসতো।
এসব পেয়ে তারা বেজায় খুশি হতো।
এভাবে একসময় পাকিস্তানের হানাদার সাথে তার ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল । এক দিন  সে বলল দেখেন আমরা তো পাকিস্তানের পক্ষের লোক। আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধব আছে আপনাদের সাথে যোগ দিতে চাই।
মানে আপনাদের যদি  কোন কাজে  আসে ।   আপনাদের এখানে তো অনেক কাজ রয়েছে।  যেমন  হাত ফরমায়েশের কাজ আছে কাপড়চোপড় ধোয়া ইত্যাদি। তুমি যখন বলছো বেশ ঠিক আছে। তাদেরকে  এক সময় নিয়ে আসো ।
চারজন  কে এক দিন নিয়ে  গেল । এবং  তারা সেখানে থাকতে লাগলো।  এই চারজন নানান কৌশলে ক্যাম্পের ভিতরে খবর নিতে থাকলো।  তারা কি করে কোথায় যাবে তাদের প্রোগ্রাম কি তারা সামনে দিয়ে কি করতে চাই।
এসব খবর তারা ভিতর থেকে বাহিরে পাঠাতে  শুরু করে।  এভাবে ক্যাম্পের ভিতরে খবর  রফিক বাইরে পাচার করে।  
ইতিমধ্যে সারা দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল ।
রফিকের বিষন চিন্তা শুরু হয়ে গেল। কিভাবে  এই শহর গ্রাম রক্ষা করা যায় ।
কারণ যেভাবে মুক্তিযোদ্ধারাই  এই দিকে এগিয়ে আসছে ।  তখন সে মনে মনে বুদ্ধি কষলো ।   পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মেজর কানে কানে বলল।
  দেখেন  এইটা একটা ছোট্ট শহর, আপনারা এখানে  সৈন্য  সংখ্যাও কম।  মনে হয় না ওদের সাথে পেরে উঠবেন বা নিরাপদ থাকবেন  ।   যে ভাবে  বিমান হামলা শুরু হয়ে গেছে চারপাশে । তারা  চিন্তায় পড়ে গেল।  সে তো সত্যি বলছে এখন কি করা যায়।  
যেই কথা সেই কাজ সবাইকে নিয়ে বসলো।  অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো  এখান থেকে চলে যাবে পাশে ভর্তি শহরে । এই
কথা রফিকের কানে চলে আসলো,  রফিক বেজায় খুশি।
হানাদারেরা রফিককে ডেকে পাঠালো ।   রফিককে সেনাবাহিনী বলতেছিল তুমি সাচ্ছা পাকিস্তানি হাই তুমি আমাদেরকে জান-মাল রক্ষার জন্য আমাদের  ভালো পরামর্শ দিয়েছ।  তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
সে খবর মুক্তিযুদ্ধের কাছে পাঠালো ।
বিনা যুদ্ধে হানাদার কে বোকা  বানিয়ে, এই এলাকায়  স্বাধীন হলো ।  
এভাবে বুদ্ধি খাটিয়ে রক্ষা করল, দেশ মা বোনের ইজ্জত, সম্পদ।   একসময় দেশটা স্বাধীন হয়ে গেল। সারাদেশে লাল-সবুজের পতাকা  উঠলো । রফিক  বেজায় খুশি, এলাকার মানুষ সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল এত বুদ্ধি এত কৌশল শিখলো কিভাবে।
রফিক বলল আমার মায়ের দোয়া, দেশবাসীর দোয়া,  মহান আল্লাহপাকের দয়া আমি  এই সব করেছি।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন । ইতিমধ্যে তার বাবা ফিরে আসলো সেও মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। সিলেট অঞ্চলে  সে কথা সবাইকে জানালো সবাই আরো মহাখুশি  হয়ে পড়লো।
আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল রফিকের মা মনে হচ্ছিল মেঘ না চাইতে বৃষ্টি   এসে গেল।
মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছিল ছকিনা বিবি।
দেশ স্বাধীন হলো,  আমরা সকলে মিলে সোনার বাংলাদেশ যেন গড়তে পারি । সেই কথায় উপস্থিত সবাইকে বলল  রফিক।