(কৃতজ্ঞতা: শ্রদ্বেয় নন্দিত আবৃত্তিকার আশরাফুল আলম ভাই, যার অনুপ্রেরনায় এই লেখা)


মায়ের হাত ধরে বছর ছয়েকের ছেলে হেঁটে যাচ্ছে,
ছোটবেলা শীতের রোদে পাটি বিছিয়ে পড়ার মতো-
‘শান্ত ছেলেটির কণ্ঠস্বরে ছিল মৃদ্যু উচ্চারণের স্বরলিপি।’
‘- মা, তুমি না কইছলা এইবার ঈদে কিছু দিবা না।
- কইছলাম তো কি হইছে ? অহন খুশি তো হইছস!’
- খুশীতে ডগমগ ছেলেটি আবার বলে,
‘মা, স্যন্ডেলের লাল রঙ খুব সুন্দর হইছে।’


একটু থেমে মনে মনে  কি যেন ভাবে ছেলেটি-
কিছু না বুঝেই মায়ের কাছে আবদার জানায়,
‘কিন্তু মা,  জামা কিনা দিতে কইলাম, দিলা না ক্যান?’


- চোখের পানি চেপে রেখে অসহায় মা বলে, ‘বাজান ট্যাহা আছিল না ।
তুইতো খালি স্যান্ডেল স্যান্ডেল করোস। দিসি তো কিইনা।’


মায়ের চাপা কান্না বুঝবার বয়স হয়নি ছেলেটির,
-,সে খুশীতে আবার বলে, ‘মা রে স্যান্ডেলডা খুব সুন্দর হইছে।
আমি বাসাত গিয়া আজই পইরা বাইর হমু।’


মায়ের মন ছেলের খুশীতে খুশী, এ খুশী বুঝানো যায় না অনুভবে থাকে!
শান্ত অথচ এক আবেগী গলায় মা ছেলেকে বলে,
‘-না বাজান ঈদের লাইগ্যা কিনছি ঈদের দিন পরবা।’


ছেলের মন তবু কাঁদে একটি নতুন জামার জন্য,
মায়ের ময়লা শাড়ীর প্যাঁচে নিজেকে আঁড়াল করতে করতে বলে,
-‘আমারে জামা কিইন্ন্যা দিলা না, ক্যান? ক্যান দিলা না? ক্যান দিলা না?’
মা’র মুখে আর কোন জবাব আসে না, কি জবাব দিবে সে এইটুকু ছেলেকে!


মা চোখ মুছে, নাক মুছে, কপাল মুছে, ছোট্ট ছেলে মায়ের শাড়ীতে মুখ লুকায়।
মায়েরওতো ইচ্ছে করে একমাত্র সন্তানের আবদার মিটাতে,
কিন্তু তার যে সে সামর্থ্য নাই। আঁচলে চোখ মুছে ফুপিযে ফুপিয়ে কাঁদে
বুক ভাঙ্গা কষ্টের ঢেউ যেন উথলে উঠে তার চোখের সাগরে।
মায়ের মন মা ছাড়া পৃথিবীর অন্য কেউ বুঝতে পারে না,
বুঝবার সেই বোধ সবার থাকে না। একমাত্র মা হলেই সে বুঝে অনায়াসে।


বিড়বিড় করে অসহায় মা বিধাতাকে মনে মনে বলে,
ঘর-সংসার যদি দিলা তয় এইটুকু সামর্থ কেন দিলা না আমারে!
এইটুকু বাচ্ছার কান্দন তোমারও কি ভালোলাগে!
তুমিও কি খুশী হও এই অবুঝ প্রাণের কান্নায়!


পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন বর্ষীয়ান সংস্কৃত মনা সুখ্যাত আবৃত্তিকার।
শুনছিলেন মা-ছেলের কথোপকথন; ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিল, ছেলেটিকে
একটি জামা কিনে দিতে। কিন্তু তারাতো অপরিচিত; কি করে সম্ভব!
আমাদের সমাজের চোখ সব সময় বাঁকা, হিতে বিপরীত হয় সর্বদা।
ঝামেলা এড়াতে তাই ইচ্ছেগুলোকে বুকে চাপা দিয়ে পাশ কেটে যান।


চলে গেলেন ঠিকই কিন্তু তার চোখের পাতায় আটকে থাকলো
গরীব ছেলেটির কাকুতিমাখা মুখ, আর মায়ে অসহায় ভেজা চোখ।
বিবেকবান মানুষের এই এক জ্বালা; তাড়িত হয় বিবেকের কাছে।
সংস্কৃতমনা মানুষেরা, কবিতা ভালোবাসা মানুষেরা অন্যায় করতে পারে না,
তাদের মন হয় কুসুম-কোমল। তাই যন্ত্রনাও তাদের ভিতরে ভিতরে বেশী।
বর্ষীয়ান আবৃত্তিকার নি:শব্দে নিরবে একা একা মনে মনে আবৃত্তি করেন,
-‘ মা, আমারে জামা কিইন্ন্যা দিলা না, ক্যান? ক্যান দিলা না? ক্যান দিলা না?’
------------ ০ -----------
২৪ এপ্রিল ২০২২. ১১ বৈশাখ ১৪২৯, ২২ রমাদান ১৪৪৩, রবিবার, সকাল: ১০:১১, কাব্যকুঞ্জ, (স্বত্ত্ব সংরক্ষিত)