রাত সাড়ে বারোটা,
আহা! মৃত্যুপুরীতে কি শান্ত রাত নেমেছে ভয়ার্ত অন্ধকারে।
রাস্তার মোড়ে একটি
নেড়ী কুকুর, - কুকুরীর গন্ধ নিচ্ছে আর হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়াচ্ছে।
কি ভয়ানক রাতটি,
ছেলেটির হাতের মুঠোয় মেয়েটির হাত; প্রায় জনশূন্য রাস্তায় ওরা
হেঁটে যাচ্ছে, কোথায়?
কেউ জানে না, ওরাও কি জানে? মনে হয় না! নাকি জানতেও পারে।
বার বার মেয়েটি,
ছেলেটির মুখের দিকে তাকাচ্ছে, কি যেন বলতে চাইছে, সম্মতি!
দেহের কোষ থেকে,
এক এক করে ছিটকে পড়ছে অদম্য বাসনার ফুলকি; পা টলছে।
নেশা-টেশা করেছে বুঝি!
নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত সবখানেই সুখ আর সুরার সহাবস্থান।
হাসতে পারছে না,
না, কাঁদতেও পারছে না, হাসি-কান্না সব ভুলে চলে যাচ্ছে ওরা।
কোথায় যাচ্ছে ঠিক!
ঘরে নাকি উদোম শহরে কোন ফুটপাতে শুয়ে পড়বে গায়ের উপর পা তুলে।
এত রাতে এলো কোত্থেকে!
গার্মেন্টসকর্মী হবে হয়তো, ওভারটাইম ছিল তাই বুঝি এত দেরী।
এখন তো লকডাউন!
করোনা'র থাবা বিস্তারিত বিশ্বব্যাপী, ধুলোবালি, বাতাসও দূষিত।
তাহলে কি ওরা
বিশেষ ব্যবসার দালাল? পেটের ক্ষুধা মেটাতে বিশেষ ধান্ধায় রত!
মাতালের শিকার বুঝি,
মাস্তানের রাতের নাগরী? চৌকিদারের দু'শ টাকার মাসোহারা মক্কেল!
রাত একটা পাঁচ,
পুলিশের গাড়ী হর্ণ বাঁজিয়ে চলে যাচ্ছে সাঁইসাঁই মহল্লা ছেড়ে মহল্লায়।
ওরা লুকিয়ে পড়েছে,
পাশেই কোন বাড়ীর কেঁচি গেটের কোনায় মেয়েটি, ছেলেটি অন্য গলিতে।
দূরে ঝিমাচ্ছে চাঁদ,
জীবন ছুটে যাচ্ছে জীবনের খোঁজে, নাড়ীতে ক্ষুধার আগুন দাউ দাউ।
শরীর শরীর চায়,
রাতের নির্জনতায় ছিঁড়েখুঁড়ে খায় নোনারক্ত আহা শিয়াল শকুন।
ঘুম আসছে না,
এইসব দৃশ্য দেখার পরে চোখের পাতায় আর ঘুম আসে না রাতে।
সারারাত ঘুণপোকা,
চিন্তার সিঁড়ি বেয়ে হাঁটাহাঁটি করে, পাঁজরের হাড় তুষ করে দেয়।
বইয়ের পাতায় আর-
মন বসে না, চোখ জ্বালা করে বুকে চিন চিন ব্যথা খুব বেড়ে যায়।
প্রকাশ্যে বলা যায় না,
সব কথা সবার কাছে, ব্যক্তিগত ইগো সবারই আছে কম কিম্বা বেশী।
জীবন যতক্ষণ সচল,
একে বয়ে নিতে হবে বাজারের থলের মত; উভয়সংকট সম্পর্কের মত।
আড়া-আড়ি বাড়াবাড়ি,
সমাজ মানে না, সমাজ জানে না বুকের মধ্যে কিসের আর্তি! কান্না!
তবু তার লালচোখ,
শাসায় কায়দা-বেকায়দায়, সত্য-মিথ্যা, বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই।
সমাজপতি পোষাকুকুর,
ফ্যাণ আর বাসি ভাত পেলেই ঘেউ ঘেউ করে পাড়া উদ্ধার করে।
দেখেছি-শুনেছি-বুঝেছি,
নামের জন্য হন্যে হয়ে ছুটে কেউ কেউ বেনামী চামচামি দরবারে।
তবু আশাবাদী ভীষণ,
আবার শান্ত হবে পৃথিবী; দূষিত রক্ত ঝরে গিয়ে মানুষ পবিত্র হবে।
পথেঘাটে নিরাপত্তা
শান্তির বাণী শুনাবে গানে গানে, প্রার্থনায়, মসজিদ-মন্দির-গীর্জায়।
মানুষ মানুষ হবে,
বর্ণবিভেদ, ধর্ম-জাতি সব গোড়ামী ভুলে মানবিক হবে মনুষ্যত্ব।
আয়ু ফুরালে সেদিন,
এমন রাতের দৃশ্য আর দেখব না,- তবু জানব পৃথিবীতে সেদিন আর,
এমন রাত-বিরেতে,
উদ্যেশ্যহীন পথ চলবে না কোন জনম দুঃখী,  কাঁদবে না পেটের ক্ষুধায়।
মানুষ মানুষের পাশে,
দাঁড়াবে দু'হাত বাড়ায়ে, মানবতার সেবাশুশ্রূষায় নিবেদিতপ্রাণ।
-------------- -------------- --------------
১৩/০৪/২০২০, ৩০/১২/১৪২৬, সোমবার, সকালঃ০১ঃ২৫ মিনিট, (+৬)
Unauthorized use or reproduction for any reason is prohibited.