এবং একার সংসার,
ভাড়া করা এক চিলতে কামরা।
একটা গুদামঘরের দরজা ছাড়া কোন জানালা বা
বারান্দা কিম্বা চিলেকোঠা নাই সে ছোট্ট বসতি ঘরে,
দরজা বরাবর ঠিক উপরে গ্রিলবেষ্টিত কিছুটা ফাঁকা।

ক্ষুধার্ত মশাগুলো দল বেধেই
আসতে পারে অনায়াসে প্রয়োজনে
ধুলোবালি হাঁড়ি-পাতিল-কড়াই, চামচ-খুন্তি মাখামাখি,
সকাল বিকাল ঝাড়াপোঁছাতে কি আর আসে যায়!
বিছানা-মশারি-বালিশ বালি আর বালিতে একাকার।

এখন রাত বাড়লেই তড়িঘড়ি
অনেকেই শীতের কাপড়ে শরীর ঢাকে
অথচ দেখ কেমন দিব্যি টেবিলফ্যানের সোঁ সোঁ শব্দ
সারারাত বিছানার পাশে, শরীরও ঘামে একটু আধটু,
কবুতরের খোপ যেন বাথ-কিচেন সহ পা'রুটির চুলো।

কখনো এসব কাউকে বলা হয়নি
বলা যায়না ইনিয়ে বিনিয়ে সব গোপনীয়তা।
ব্যক্তিগত বিষয়গুলি সব প্রকাশ্যে না আনাই মঙ্গলময়,
সহ্যের লক্ষনরেখা অতিক্রান্ত হলে জীবন অসহনীয় হয়
মধুর সম্পর্কে বিষের সন্ধান মিলতে থাকে ছালেছুঁতোয়!

বই আর বউ যদি হয়ে ওঠে প্রতিদ্বন্দ্বী
সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হতে সময় লাগে না,
'আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ' শুনেছি, মাষ্টার মশাই বলেছেন,
জীবন যদি ফুলে ওঠে তাহলে কি হয় কোন ধারনা নাই
শুধু বুঝতে পারি অনিয়ম আর উশৃঙ্খলতা পেয়ে বসে।

ওষুধের শিশিতে ধুলোবালি ফ্লাক্সে দুধ পঁচা গন্ধ
হাড়ি কড়াইয়ের তলায় কালি রান্নায় ভীষণ অনিয়ম
কবিতা গল্প উপন্যাস আবৃত্তি চর্চা সব অনিয়মের দখলে
ধুস্ শালা, এই কোন জীবন হলো! চাঁদের গুড়ো কুড়িয়ে
তালুতে জোনাকিপোকার মালা; হাসিতে আত্মাজুড়ে ধড়ফড়ানি!

বেআব্রু শ্মশান সামনে সটান দাঁড়িয়ে
কুড়ি থেকে পাপড়ি তারপর তিলে তিলে বুড়ী
চিমসে যাওয়া লেবুর মত রসকষহীন মাধুর্যহারান স্তন,
জল স্বল্পতায় জীবন অতিষ্ঠ! ইদুর আরশোলা পিঁপড়ে  উইপোকা
ঘুনপোকা কাটুরকুটুর করলেও কারো কোন দোষ নাই।

বাঁধন ছেড়া আঁচল উড়ানো ললনা,
পাঞ্জাবীতে পরকিয়া ছাপ বোতামে জড়ানো-
ইয়ালম্বা চুল,  অচেনা সুগন্ধির আড়ালে শরীরি সুগন্ধটা
প্রকটভাবে বুঝিয়ে দেয় অন্য যোনীতে বীর্যপাতের সত্যতা।
কে কাকে কি বলবে? কেউই নয় এ জগতে দুধে ধোয়া তুলসীপাতা!

একটানা খাটুনী শেষে শাড়ী-ব্লাউজ-ব্রা
সকালের অতি যত্নে করে নেয়া ত্বকপ্রসাধনী,
চুলের কাঁটা বেণী লিপষ্টিক কোনটাই থাকে না ঠিক যথার্থ,
নির্দিষ্ট  মাইনে বাঁধা মাসহিসেবী কোন কর্মজীবী নারীর,
দিনের শুরু আর শেষ উজান ভাঁটার চেয়েও বড় বেশী অপরিচিত।

কালিন্দীর জলে আছাড়-পাছাড় খায়
নবীতুনের দীর্ঘশ্বাস; শুকনো বুক চুষে শিশু
সারেং শক্তহাতে হাল ধরে উজানে যেতে হবে দূরের পথ
তুফানে দোল খায় জাহাজ, দোলে স্বপ্ন, কেঁপে ওঠে বুক
আচমকা তলা ফেটে দোফালা হয় সমুন্দরে স্বপ্নবিলাসী  সাম্পান!

পানের খিলি পড়ে থাকে বাটার পাশে
শুকনা চুন কাঁচা শুপারি খয়ের হাকিমপুরী
আর কেউ রাঙ্গায় না ঠোঁট, দেয় না সোহাগী হাতে তুলে মিষ্টিখিলি,
সাঁঝ রাতে দাওয়ায় বসে পড়ে না পুঁথি গায় না মরমী ভাটিয়ালি
শুনায় না একলা রাতে দেখা কোন খোয়াবের সম্ভাব্য মানে।

কবিতার খসড়া খাতায় জমা ধুলো-বালি
বালিশের তলে রাখা 'পরাণের গহীন  ভিতরে'
সিথানে পড়ে আছে কবে থেকে 'মানুষের মানচিত্র', 'জিয়ন্তকাল'
আর একা পোড়া পরাণ নিয়ে পড়ে আছি বিচ্ছিন্ন বিরহী
এক চিলতে কবুতর খোপে নেই কোন বাকবাকুম গান।

মেঝের উপর একা থাকার ছোট্ট বিছানা
ময়লা পড়া মশারী, অসুস্থ হৃদয়বিকার শরীর
ভেজাচুল মুখে ঝাড়া দিয়ে কেউ ভাঙ্গায় না ঘুম খুনসুটিতে,
বলে না, আরে ওঠো ওঠো কতো বেলা হলো বেরুবে না!
ও বাড়ীর রাঙ্গা বুড়ীর বিয়ে কিছুতো হাতে করে নিতে হবে।

বারোমাসি হালখাতা চিড়ে-দই-রাজভোগ
থাক না বাজে প্যাচাল, কালি পুজোর সার্কাস
পুতুল নাচের কলাবউ, পকেটের বারোটা বাজলেই তবে
রাত বারোটায় বাড়ী ফেরা; চোখেমুখে জলের ঝাপটা শেষে
চিরায়ত সেই চিরচেনা নৈমিত্তিক আদিম বিছানা বালিশ!

দুর্গা কালি লক্ষ্মী সরস্বতী জাগ্রতচিত্ত
এখনো মাঝে মাঝেই স্বপ্নে আসে আর যায়
আকারে ঈঙ্গিতে কি যেন কি বলে যায় ঘুম ভাঙ্গলে ভুলে যাই,
কখনো মাথায় হাত রাখে, বুকে টানে, মুহাম্মদ(সঃ)ও একবার,
ভাগ্যের খেরোখাতায় হিজিবিজি লেখা বুঝে শুধু ভাগ্যবিধাতা!

বড় ঘেন্না ধরে গেছে পরমুখাপেক্ষী এই
অগোছালো নিঃসঙ্গ ব্যাথাতুর জীবনের প্রতি
কেন যেন বার বার মনে হয় ছুটির ঘন্টায় একমাত্র এর নিস্কৃতি,
মনুষ্যক্ষমতার আওতাধীন নয় বলেই অসহায়ত্ব নিয়ে পড়ে থাকি,
হাতের কর গুনে হিসাবের চেষ্টা করি আর কতদিন বাকি!

স্বজন সুজন বন্ধু বান্ধব পাড়াপড়শি
বিজ্ঞের মত শান্তনা আর সহানুভূতির সাথে
ধৈর্য্য ধারনের উপদেশ দিয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে যায়,
এতটা ব্যক্তিগত বিষয়তো আর সবাইকে ব্যাখ্যা করা যায় না
অগত্যা সেই মন খারাপ,  দুশ্চিন্তা আর দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে বসবাস।

কবে এই মেঘ গলে বৃষ্টিপাত হবে
কে জানে সে খবর, সবাই ঈশ্বরের মত চুপচাপ,
নিশানা বরাবর ধনুক বেকে বসে আছে কেউ একজন কোথাও,
সর্বশক্তিমানের আদেশ পাওয়ার অপেক্ষায় বয়স বয়ে যাচ্ছে,
তবু অপেক্ষা আর অপেক্ষা কবে বাঁজবে মুক্তিকামী ছুটির ঘন্টা!
-------------- -------------- ---------
০৭/১২/২০১৯, শনিবার, রাতঃ০৮ঃ৪৪ মিনিট, (+৬)
Unauthorized use or reproduction for any reason is prohibited.