'ইমু' গৌরবর্ণ মেয়েটা সালাম ও কুশল বিনিময়ের পর
নামাজে দাঁড়িয়ে গেল সুনসান লাইব্রেরীর এক কোনে।
শান্ত'র সাথে কথাবার্তা ও বিভিন্ন আলোচনার ফাঁকে
এখানে চা বিস্কুটের আপ্যায়ন মনে রাখার মত বিষয়।
আজ মুন্সী ছিল না, বড় অমায়িক ছেলে রসিকও বটে
জীবন সংগ্রামী হাসিমুখটা তার ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।
হীরা'কে হাসি মুখে বিদায় জানিয়ে দুজন নেমে এলাম
বিজু ভাইয়ের অনন্য এক সৃষ্টি 'পাঠক সমাবেশ' থেকে।


বাহির দরজার পাশে দাঁড়িয়ে পর পর কয়েকটা ক্লিক,
ক্যামেরা একবার এই হাতে একবার ওই হাতে সচল।
ছবির মানুষ দুজনই, কবিতারও; প্রেম আর ভালোবাসা
স্রোতের শেওলা, এই আছে এই নাই, যেন  লুকোচুরি।
বিচিত্র বর্ণিল জীবন এই নশ্বর জগতের প্রতিটি মানুষের
প্রকাশ্যে আসে না সব অতিশয় গোপনীয় কিছু থাকেই।
পর্দা সরালেই অবাক, বিস্ময় লাগে কত শত অজানায়-
মানুষতো ফেরেশতা নয়, হয় না, তবুও নিজেকে ভাবে।


যাদুঘরের পাশ দিয়ে দুর্বল পা চালাতে চালাতে হঠাৎ
চোখ পড়ল চাঁদের দিকে, আজ কোজাগরী পূর্ণিমা।
খুব ইচ্ছে হলো তার এই মায়ারূপ ক্যামেরাবন্দি করতে
ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকটা ক্লিক করলাম।
আজকাল সাধারনত এমন হয়ই না, তিন চারটে মেয়ে
পাশ থেকে বলল, আংকেল একটু দেখাবেন প্লিজ।
কলেজ বা ভার্সিটির মেয়ে বলেই মনে হলো তাদেরকে
এ হয়ত নিছক কৌতূহল, ওরা দেখল সাধুবাদ জানাল।


গন্তব্য দূরে, দেশের চলমান পরিস্থিতি ভেবে তাড়াতাড়ি
রজনীগন্ধা'র আসনে আসীন। চাকা ঘুরছে, গাড়ী ছুটছে
ঢাকা যেন রাতের রাণী, তার রূপের পসরা মেলে দিচ্ছে
মন ছুটছে অতীত স্মৃতির বাঁকে বাঁকে আলো আঁধারে!
বেলা'র হাসি, নিগার'র অভিমান, রোজী'র বিস্ময় দৃষ্টি
বুকের মধ্যে কাঁসার ঘন্টা বাজিয়ে যাচ্ছে, সেই সব মুহুর্ত্ব  
অনুরণিত হচ্ছে স্নায়ুকোষে, আনমনা হচ্ছি, আর ভাবছি
কী দূর্বল মনুষ্যমন! 'লোপা' বলে সব রং তামাশা কাকা!


দারোগার মেয়ে 'মিলি' বলেছিল, 'নদী মরে গেলেও দাগ থেকে যায়',
সব কি আর মুছে ফেলা যায়! তুমি মামা অনেক কিছু বুঝো না।
ক্লাশ এইটের মেয়ের এই ভৎসর্না
আজও বদ হজম হয়ে আছে, কারণ দ্বিতীয়বার একই
উচ্চারণ শুনেছি ক্লাশ সেভেনের শ্রীমতি লাভলী'র মুখে।
তৃতীয় 'শিলা', চতুর্থ 'আমীন' কলেজ পড়ুয়া ছেলের মুখে
'জ্যোতি' তার প্রভা ছড়িয়েও তাড়াতে পারেনি অন্ধকার।
এই ব্যক্তিগত সত্তাটুকুই আমাকে আলাদা করে ভাবায়।


জীবন চলার পথে দেখেছি কত পায়ের, গায়ের, বিচিত্র ছাপ,
কোনটা মানুষের, প্রাণীর, কাল কেউটে গোখরার।
আজও অবুঝই রয়ে গেলাম, অনেক কিছুইতো বুঝি না,
সে আমার নিজেরও মনে হয় আজকাল। বুঝতে চাই না
মাকালের ভিতরের কুরুপ, পর্দার আড়ালের অন্ধকার-
হাসি মুখের আঁচলে যে কান্না গুমরে গুমরে বুক কাঁপায়
তাকে খুঁজি না, হাসিটুকুই থাকুক বিশ্বাসের এ ঘরজুড়ে।
কারু দূর্বলতায় উল্লাস, উচ্ছ্বাস আজন্ম চরিত্র বিরোধী।


সুদুর ভবিষ্যতের আহা মরি ভাবনা পায় না কোনকালে,
অতীতের শিক্ষা থেকেই পথ চলা স্বপ্নের নিয়ন আলোয়
বর্তমানই জীবনের সবচাইতে বড়ো এবং পাহাড়ী সিঁড়ি,
এই সিঁড়ি অতিক্রম করতে পারলেই বেঁচে থাকা সার্থক।
পথ চলতে চলতে এই কোজাগরী সন্ধ্যায় নীল সাগরের
ঢেউ যেন গর্জন করে মিলিয়ে যাচ্ছে এ বুকের পাঁজরে।
বাস ছুটছে, মন ছুটছে তারও অধিক গতিতে অজানায়,
পাশের সিটের মেয়ের চুল উড়ে এসে পড়ছে চোখেমুখে।


কেউ ঘুমাচ্ছে, ঝিমাচ্ছে, ক্লান্তিতে কাতর কর্মস্থল ফেরত
কেউবা, কারো কানে ইয়ারফোন ডিজিটাল হালফ্যাশন।
দুএকজন সতর্ক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নেমে যাবার আগে,
বাদাম চানাচুর ঠাণ্ডা পানি ফেরী করছে সুদর্শন যুবক।
যুবতীর করুন কান্না স্বামী তার হাসপাতালে; দুর্ঘটনায়
একটা পা কাটা গেছে, অন্য পা জন্ম বিকলাঙ্গ, অন্ধও।
দেখতে দেখতে ঘরে ফিরতে রাত অনেকটা হয়ে যায়,
নাকেমুখে ঠাণ্ডা ভাত ডাল মুখে তুলে ক্ষুধা মিটিয়ে নেই।


তখন ছোট্ট পরিসরে অস্থায়ী আবাসে এক চিলতে ছাদ,
মায়াবী পূর্ণিমা-জ্যোৎস্নায় যেন রূপের পসরা মেলেছে।
কাঠমালতী, রঙ্গন, অলকানন্দা, কামিনী, কাটামুকুট-
বেলী, জুঁই, সাদা, নীল অপরাজিতা হেসে লুটোপুটি খায়
এ ওর গায়, কী রূপ! কী সুবাস! আহা! মন উতলা করে
প্রকৃতি আর পূর্ণিমার এমন পসরা যার নজর কাড়েনি
ভাগ্যের কাফেলায় তার নিশ্চিত প্রচণ্ড ভরাডুবি নির্ঘাত।
জাম ডালে মিষ্টি কুহুতান কুটুম আয় কাঁঠালের ডালে।


তানভীর ভাইয়ের আমগাছে ঠিক দুপুর রাতে একসাথে,
সমস্বরে ডেকে ওঠে টুনাটুনি কারো মনে হয় জন্ম প্রহর।
শুভেচ্ছা আর শুভ কামনায় স্বর আর সুরে অপূর্ব শ্রুতি,
খুব উপভোগ করলাম একাই চাঁদজ্যোৎস্না গায়ে মেখে।
এমন সন্ধ্যা হয়তো আর আসবে না জীবনে হয়তো বা
আসবে, ভবিতব্য কে জানে ষোলো আনা সঠিক ভাবে!
আয়ুর সীমা বর্ধিত হলে কোন বসন্তে কোকিল ডাকবে,
বুকের মরা গাছে স্বপ্নের সবুজ পাতা গজাবে পূর্ণিমায়।
------------------- --------------------
৩০শে অক্টোবর - ৬ই নভেম্ববর ২০২০, ২১শে কার্ত্তিক ১৪২৭, ১৯শে রবিউল আউয়াল ১৪৪২, শুক্রবার, রাতঃ০৮ঃ৩৩ মিনিট, (+৬),
Unauthorized use or reproduction for any reaasin is prohibited.