শোন না রে,
এই দ্যাখ কাউকে বলিস না যেন, ওই যে তোকে যা বলেছি
কাল রাতে ও ঘরের বিছানায় পাশে শুয়ে গল্প করতে করতে
যা করে ফেলেছি! একদম সত্যি, সত্যি।
জানিসতো বাবা জানলে সব্বোনাশ হয়ে যাবে, মা হয়তো
কিছু বলবে না; কারন তারও ছিল ওই বয়সে
বড়দা’ ওতো বলবেই না,
ওর সব টুকটাক নটিঘটি তো আমার হাতে
রোদে টাঙ্গিয়ে দেব না!


পরীক্ষাটা হয়ে যাক,
তারপর দেখিস একদিন ধুম করে কামটা সেরে নেবক্ষন।
আজকাল কেই বা কার জন্য বসে থাকে-
রেজাল্টটা ভাল করতে পারলে বাবাকে বুঝাতে তেমন
কষ্টই হবে না, অনেক আদর করে।
আমি বললে না করবে না।
বাসন্তীর বড় দা যেদিন ওড়নায় টান দিয়েছিল, জানিস
বাবা শুনেই তেলেবেগুন!
বন্দুক নিয়েই বের হবে, বললাম বাবা, থামো, থাক না।


অবাক হয়ে গেল,
কি বলিস তুই! বলেই আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছিল
সে কি চেহারা মানুষটার!
পিছন থেকে ডেকে বললাম , বাবা
কুকুর চেতিয়ে দিলে তো তোমার মেয়েকে পথে ঘাটে কামড়াবে,
আমি না হয় পথঘাট দেখ চলব বাবা, যথাসাধ্য সাবধানে
থাকবো, তুমি ভেবো না।
সে যাত্রা রক্ষা হল। লম্পটটাকে বড়দা’ শাষিয়ে দিয়েছিল বলে
আর কোনদিন পথ আগলায়নি।


মনটা আজকাল কেমন জানি করে,
এসব বুঝায় কেমনে, বুঝান কি যায বল, গলে যায়
বুকের ভিতরটা ও বুকে টেনে নিয়ে আদর দিতে দিতে
নিজেও কেমন জানি হয়ে পড়ে!
মৃতঞ্জয়ী সঞ্জিবনী যেন ওর ঠোঁটের আদরটুকু; না করতে
পারি না, মেলে দেই গোলাপ, ছড়িয়ে দেই সুবাস,
মুগ্ধতায় চোখ বুজে সে কি প্রলাপ!
বুঝবি না, বুঝলি বুঝবি না তুই, কত করে বললাম
একটা ধরে ফেল, না, কি যে ন্যাকামি!


বুঝবি! মনে পড়বে
যেদিন ঘুমাতে পারবি না রাতে, কুটুস-কাটুস কামড়ে।
বলতেও পারবি না, দেখিস বলে দিলাম। সেদিন বুঝবি।
চোখের স্বপ্ন গলে গলে বালিশ ভিজাবে,
মন গলে মিছরি হলে তবেই দেখবি হাজার স্বান্ত্বনার বানী
চারিপাশে; ধৈর্য্য ধরো, এইতো ওটুকু মেঘ কেটে গেলে
ফর্সা আসমান, আঙ্গিনায় রোদ ঝলমল-
নেইলপলিশ মুছে মেহেদী রং, তামাশার শেষ নেই জীবনে
এতটুকু অঙ্গে কত কি রঙ্গ!


পুস্কুনির দক্ষিন পাড়ে নলবন।
একদিন ওখানেই বসেছিলাম ঝিরেঝিরে দক্ষিনা বাতাসে।
ওড়না নিয়ে খেলছিল ও, মাঝে মাঝে ছুঁয়ে দিচ্ছিল
কুসুমকুঁড়ি। সে কি শিহরণ! হঠাৎ বেণীতে খোট দিয়ে
বলল, দ্যখ দ্যাখ, নলবনের পাতার আড়ালে
ডাহুক আদর করছে ডাহুকী’কে।
কি যে লজ্জা পেয়েছিলাম; ও তাকিয়েছিল চোখে অপলক।
সে ভাষা বুঝতে খুব কষ্ট হয়নি,
শুধু ডাহুক-ডাহুকী হতে পারি নি সেদিন।


বৃষ্টির বিকেলটা আজও
ভীষনভাবে মনে করিয়ে দেয় ক্লাশ নাইনের নতুন প্রেম।
সবে কয়েকদিন হলো ওর ডাকে সাড়া,
সেদিন ছুটির পর আকাশ কালো করে সে কি মেঘ!
উত্তড়পাড়ার জেলেবাড়ীর বারান্দায় ভিজতে ভিজতে
কখন যে ওর বুকে সেঁটে দাঁড়ালাম।
বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো। ও বুঝল কিনা
জানি না, হঠাৎ খুব জোরে বুকে চেপে ধরে
চুমুতে চুমুতে ঠোঁট লাল।


মন কিছু বুঝল কিনা জানি না,
শরীর বুঝে গেল শরীরের ভাষা। কাপড় বদলাতে গিয়ে
বুঝে গেলাম ছোট শরীরটাও সোমত্ত হয়ে গেছে;
সেইতো খাবারে অনিহা, ঘুমে ব্যাঘাত,
পড়তে বসলে বইয়ের পাতায় তার হাসিমুখ, দুষ্টুমির মুহুর্ত্ব।
দিন দিন এতটুকু মনে জমা হতে থাকল
কতি কি স্মৃতি! তুই তার কি বুঝবি!
পুরুষের হাত গায়ে পড়লেই নারী সত্যিকারের নারী হয়ে ওঠে।
শরীর জানান দেয় সাহসী উচ্চারণ।


বিয়ে বাড়ীরে দাওয়াতে
চাঁদনী রাতে খড়ের পালার আড়ালে একচাদরে বসে গল্প য্নে
আর শেষ হয় না, কোথা থেকে যে অত কথা মনে আসে
এটা না ওটা, ওটা না এটা, মাঝে মাঝে আবেগে
জড়িয়ে ধরে বুকে বুক চেপে রাখা।
ওসব একবারই হয়, ও আর দু’বার আসে না,
প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষন যেন নতুন নতুন জীবন
শরীরের ভূগোলে গুলিয়ে যায় পথঘাটের নিশানা।
ভুল পথে মশগুল; তাতেও তৃপ্তমন।


দক্ষিনবাড়ীর নতুন বৌঠান
দিন পচিশের মাথায় যখন অক অক করতে শুরু করল
সবাই কানাকানি করে, মুখ টিপে হাসে
কিছুতেই বুঝছিলাম না এতে হাসার কি হলো?
সবারইতো এটাই হয়। কিন্তু মাঝে মাঝে বৌঠানের কাছে
যখন শুনতাম ভয় হতো জানিস!
যেদিন বাবুটা হলো আমারতো গলা শুকিয়ে কাঠ! কি কষ্ট!
মনে মনে ভাবলাম না বাবা, কোনদিন এসব করব না
ওই ভাবা ই সার, ও কি আর না করে থাকা যায়!


সুরেশ্বরীর বুকে ঝাপ দিয়েও
মন জুড়ায় না, ওর বুকের ছোঁয়া পেলে শীতল প্রলেপ যেন
দগ্ধহৃদয়ে দেয় শান্তির পরশ। আধফোটা কলি যেন
মেলতে থাকে লাজবতী পাপড়ি; দেখিস যেদিন তোর বুকে
মাথা রেখে খুনসুটিতে মাতবে কেউ
তুইও বুঝবি; ভালবাসা কাকে বলে। শরীর শরীর চায়
কোন ভাষায়। কারো বলে দিতে হবে না
আপনা থেকেই সরে যাবে লজ্জার আচল, খুলে যাবে
গোপন রহস্যগহ্বর! সারা অঙ্গে শিহরণ।


প্রকৃতি শেখায় সব বুঝলি,
শুধু তুই বুঝলি না, তোর যে কি গতি হবে দেখিস, বুঝবি!
বর আদর করতে গেলে যদি মোড়ামুড়ি করিস
কপাল পুড়বে, মা’র বুকনি, দিদির ঝাড়ি
বৌঠানের ক্ষ্যামটা ভেংচি, কত যে তোর কপালে আছে!
আমি বাপু অতসব বুঝি না;
সোজা সাপটা কথা মেয়ে হয়ে জম্মেছি, বউ, মা, শ্বাশুড়ী
চান্দের বুড়ীর সুতো কাটা চরকির চাকা।
জীবনইতো অদল বদল, বাপের বাড়ী, শ্বশুরবাড়ী, চন্দনচিতা।
===============  ========
০২ মে ২০১৬, সোমবার