(প্রেম প্রতারিত সকল নীরবে কান্না করা প্রেমিক প্রেমিকাদের করকমলে)

কেউ যদি প্রেমে পড়ে যায়, বলছি যদি পড়েই যায়-
কী আর বলার থাকে!
                      কী-ই বা বলা যেতে পারে, বল?
প্রেমতো সনাতন; সবার জীবনেই আসে খুব সন্তপর্ণে।
গুটি গুটি পায়ে নিঃশব্দে,
                      হেঁটে হেঁটে আসে বুকের ভিতরে।
জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণভেদ ধনী-গরীব বয়স কিছুই মানে না।


কার সঙ্গে প্রেম হবে, কার সঙ্গে বা সংসার কেবা জানে?
কেউ কি নির্ধারণ করে রাখতে পারে?
               পূর্ব নির্বাচনও তো পরিবর্তন হয়ে যায়।
দশজনের দেখাশুনা দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পরেই,
একজনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
          প্রেম পুরোপুরি অন্ধ এসবের ধার ধারে না।
ভিতরে ভিতরে লম্বা শেকড় ছাড়ে খুবই নীরবে নিভৃতে।


বুক ভরা চাপা ঘাসের মতই প্রেমের সাদা সাদা শেকড়,
ঘিরে রাখে কোমলমতি কদম তুলতুল মন-
          তবু ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায় দুর্ভাগ্য বশত!
ওই যে 'বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না' দুঃসহ যন্ত্রনাকাতর!
তবু মুখ ফুটে যারা বলেই ফেলে কুসংস্কারের পর্দা ছিঁড়ে
চাঁদের গামলা উপুড় করে হলুদজ্যোৎস্নায় স্নান সারে
লাজবতী পদ্মকলি! প্রকৃতি তার কানে বলে দেয় রহস্য।


এক সাগর ঢেউ বুকে ধরে মুঠি মুঠি ফেণারাশি ছড়িয়ে
কেউ যদি নিংড়ে দেয় জীবন নির্যাস,
               বিরহের বিপরীতে এক সঙ্গসঞ্জিবনী!
কি করে ফিরাই তারে? বল কি করে ফিরাব তারে!
আজন্ম প্রেমের কাঙ্গাল ভালোবাসার সর্বহারা ভিখারি,
বিরান উঠোনে চড়ুই-শালিক কোকিল-কাকাতুয়া ময়না,
নাচুক প্রেমোল্লাশে সকাল সন্ধ্যা জীবনসমৃদ্ধ নাচগানে।


কেউ যদি জেনেশুনে ছায়া চায় আধমরা গাছের কাছে,
পাতার আড়ালই একমাত্র সম্বল তার,
আর পারে মুঠো ভরা ছাল-বাকলের কষ্টগুলো বিলাতে।
ডালপালা নুয়ে দিতেই পারে শেষ ফোটা ফুলের সুবাস!
কিম্বা ভ্রমর-প্রজাপতি চুমে যাওয়া সোহাগী এঁটো পাপড়ি
গঙ্গার বুকের ঢেউ আছড়ে পড়ে কুলভাঙ্গা নায়রকুলে,
ছইঘেরা নাওখানি বাঁধা দেয় হিজল তলার শানবাঁধানো ঘাটে।


বুকভরা অকৃত্রিম ভালোবাসা দিতে ও পেতে,
কার না মন চায় এই জগতে,- প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে!
বেদের মেয়ে জোছনা লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিলেও-
মনে মনে ভালোবাসার জোয়ারে কুল ভাসায় মৌনতায়,
পারু কি পেরেছে ভুলতে তার আরাধ্য দেব দা'কে
মূলত কেউই পারে না বুকের মধ্যে প্রেমের প্রথম আঁচড়
মন থেকে মুছে দিতে স্মৃতির ভাণ্ডার ভেঙ্গেচুরে চুরমার করে।


গভীর অন্ধকার রাতে আপন জনের বুকে শুয়ে থেকেও,
মন চলে যায় বিশেষ বয়সের সেই বিশাল নদীর পাড়ে,
ছাড়া ভিটে,
            বাসষ্ট্যাণ্ড,
                       রেলষ্টেশন, পার্ক রেঁস্তোরা,
ঝুম বৃষ্টি, ঝড়ের রাত, শপিংমল, সিনেমা হল, কাশবন, বেত বন, সবুজ ঘাসের গালিচা অথবা গোহাটা ব্রিজে।


আবার কখনো দূর্বার ছুটে যায় একান্তে সময় কাটানো,
কোন অতি বিশ্বাসী বন্ধু বা বান্ধবীর গোপনতম আশ্রয়ে।
রাত কেটে যায়, শরীর শুধু শরীর খোঁজে,
                      মন পড়ে থাকে মনের বারান্দায়।
আহা প্রেম! ও তো দেহে থাকে না,
                     থাকে মনে, চেতনার চৌরঙ্গীতে।
স্বপ্ন-সাধ কামনা-বাসনা আর ইচ্ছের আবিরে জড়িয়ে।


প্রথম বা শেষ বলে কিছু নাই পবিত্র এই প্রেমের জগতে,
আত্মার কোন বিনাশ নাই,
               না, প্রেমের বিনাশ হয় এমনও শুনিনি।
আত্মা রূপান্তরিত হয় নব জন্মে নব দেহে,
        প্রেমের রূপান্তর পুনর্জন্মে নতুন প্রাণে প্রাণে।
প্রথম বা শেষ বলে প্রেমে কিছু নাই, থাকেও না কখনো।
বুকের মধ্যে লালিত মূর্তি মূর্তমান হলেই গলে যায় মন।


সব ইচ্ছে বা বাসনা সবার কাছে প্রকাশ্যে আনা যায় না
সবাই বুঝে না, মন বড় স্পর্শকাতর অল্পেই সুখ খোঁজে,
হলুদ জ্যোৎস্না ঢেলে দিয়ে,
                চাঁদও যেন মিতালী করে মনের সাথে।
বুকের বনে ফোটা  মালতী,
                       জুঁই-চামেলী, রজ্ঞন-রজনীগন্ধার রূপে। যৌবন প্রতিস্থাপিত হয় রক্ত সম্পর্কজাত প্রজন্মান্তরে।


একই মশারীর নিচে জীবন কাটিয়েও কেউ পায় না কারো মন,
মনের দূরত্ব কতটা থাকলে এমন হতে পারে! প্রেম থাকে না সেখানে।
জীবন যন্ত্রণাময় হয়ে ওঠে বোবা কান্নায়,
                যে  কান্নার নোনা জল বুক ভাসায় না।
ভিতরে ভিতরে ক্ষতের সৃষ্টি করে গোপনে হৃদয় গহ্বরে।
এক ছাদের নিচে কত কি অভিনব সুনিপুণ নাট্যাভিনয়!
যে যতটা কৌশলী তাকে ততো বেশী সুখসারী মনে হয়।


মাঝে মাঝে দেখি সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে কেউ কেউ খুব
ভেঙ্গে পড়ে মানসিক ভাবে; স্বেচ্ছা নির্বাসনে যেতে চায়
কষ্টগুলো ভুলতে, ঘনিষ্ঠ স্পর্শের দাগগুলো
          সম্ভব হলে ব্লেড দিয়ে চেঁছে তুলে ফেলতে,
চুমুর দাগটকু শিরিষ কাগজে ঘষে ঘষে নিশ্চিহ্ন করতে।
ঘুমহীন সারাটা রাত বালিশে মুখ গুঁজে ফুফিয়ে কাঁদে।
একবারও বুঝতে চায় না ঝরা পাতা ডালে জোড়া লাগে না।


কাউকে না পেলে কেউ বাঁচবে না এমন হাস্যকর কথার
কোন মানেই হয় না, দেখিনি কোনদিন
                 কাউকে না পেয়ে কেউ মরেই গেছে।
যারা আত্মহনন করেছে তাদের সম্পর্ক নিষ্কলুষ ছিলই না,
নিজের ভুল বুকে নিয়ে তারা তিরোধান হয়েছে কর্মফল ভোগে।
ভালোবাসা বলো প্রেম বলো শরীর সর্বস্ব হলে সর্বনাশ!
শরীরতো অবলীলায় আসে ভালোলাগার গভীরতা থেকে।


পড়ার টেবিল ডাইনিং ড্রেসিং শোবার ঘর রান্না গোসল,
সবগুলো ঘরই আজকাল নিরাপত্তাহীন
        মুখে হাসি ফুটলেও মন মরে থাকে ভিন্নতায়।
মোবাইল মানিব্যাগ ভ্যানিটি প্যান্টের পকেট ও পাঞ্জাবী,
সন্দেহের ঊর্ধে আজ আর কিছুই নাই; শান্তির প্রতিকূলে
উজানী ঢেউ যেন বুকের পাঁজর ভাঙে, লবনাক্ত গর্জণে।
বিশ্বাস ভেঙে গেলে প্রেম বা সম্পর্কের কিছুই থাকে না বাকী।


অগনিত প্রতারিত নারী-পুরুষের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়েছে
পৃথিবীর আকাশ বাতাস গাছপালা,
              প্রাণীকুলে নাভিশ্বাস প্রলয়ের দামামা!
প্রেমহীন প্রবঞ্চিত বুকের হাহাকার ভরা প্রতিটি নিঃশ্বাস,
রাসায়নিক অস্ত্রের চেয়েও  মারাত্মক জীবন বিধ্বংসী!
মুহুর্ত্বে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় ব্যক্তিগত সর্বস্ব।
তারাই বুঝে যারা সব বিলিয়ে দিয়েও কুলহারা নাবিক!
--------------------- ---------------------
২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০ই আশ্বিন ১৪২৭, ৬ই সফর ১৪৪২, শুক্রবার, সকালঃ০১ঃ৩২ মিনিট, (+৬), শুরু
১৬ই অক্টোবর ২০২০, ৩১শে আশ্বিন ১৪২৭, ২৭শে সফর ১৪৪২, শুক্রবার, রাতঃ১১ঃ২৭ মিনিট, (+৬), সম্পূর্ণ হলো।
Unauthorized use or reproduction for any reaasin is prohibited.