উনবিংশ শতক বিদায় কালে বিংশ শতকের
               হাতে দিয়েছিল একটি ফুল;
     জাতির দুর্দিনে তাইতো মোরা পেয়েছিলাম
            প্রেমিক কবি বিদ্রোহী নজরুল।


      রবির বর্ণচ্ছটায় বিমোহিত বাংলার আকাশে    
          অতর্কিতে নেমে এল জৈষ্ঠ্যের ঝড়!
     বঙ্গোপসাগর থেকে 'দজ্লা' 'ফুরাত্' হয়ে
   'শা'তিল আরব', ------- বাংলার বুলবুলি শান্তি খুঁজে  
    নিলে ইরানের গুলিস্তানে, হাফিজ আর খৈয়ামে!


          'প্রলয় শিখা'য় সব দুঃখ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে      
       'সৃষ্টিসুখের উল্লাসে' মেতে উঠলো নতুন কবি।
   'বাঁধন হারা' ঝড়ে এলোমেলো জীবনে কখনো হাতে
     তুলে নিল 'বিষের-বাঁশী' কখনো বা 'অগ্নি-বীনা'।
    'সাম্যবাদী' কবি 'লাঙ্গলে'র কর্ষণে উঁচুনিচু এক করে 'ধূমকেতু'র অগ্নিসেতুতে এক করে দিল হিন্দ-মুসলমান।
'রিক্তের বেদনে' ব্যথাতুর কবি প্রেমের অভাবে 'সর্বহারা'। তাঁরই 'ব্যথার দানে' পূর্ন হল বাংলা ধন্য হলাম আমরা।


      শতবছরের পথ পরিক্রমায় আমি বিস্মিত হই ----
'মৃত্যু ক্ষুধা'য় বুভুক্ষু নজরুল কোন দুঃসাহসে বলতেন,
   ----" বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত ,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না।যবে অত্যাচারীর খড়্গ কৃপান ভীম রণভূমে রণিবে না,  
   বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত ------। "
    
       শান্তির ছায়াতলে তুমি চিরশান্ত হলেও হে কবি!
      উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল শেষ হয়নি যে আজও!  
          সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে কণ্ঠাগত জীবন;
      যান্ত্রিক সভ্যতার পদাঘাতে দিশেহারা পৃথিবী  
        প্রতিনিয়ত দেখে যাচ্ছে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরন!
  মানবতার শ্মশান-যাত্রায় কাণ্ডারী বেহালা বাদক নিরু!  
  নিষ্ফলা সময়ের সিঁড়ি বেয়ে কংক্রিটের জঞ্জালে জন্ম
  নিচ্ছে অফুরান বিষবৃক্ষ। অবিশ্বস্ত চরাচরে আতঙ্কবাদ,
পুঁজিবাদ বিকাশবাদ কিংবা বিনাশবাদের ভিড়ে তোমার
  মতো  'বিদ্রোহী'রা আজ যে দেশদ্রোহীর তকমা পায়!
   বিশ্বাস করো হে কবি, --- একমুঠো শান্তির লোভে
    হজার চেষ্টা করেও আমি সাম্যবাদী হতে পারিনি!  
   অনেক কষ্টেও ফুটাতে পারিনি একটি 'দোলনচাঁপা'  
     কিংবা গাঁথতে পারিনি একগাছি 'শিউলি-মালা'!
      বিশ্বাস করো, ----- জন্মসূত্রের দস্তাবেজ নিয়ে  
          নাগরিক পঞ্জীর লাইনে দাঁড়াতে দাঁড়াতে
            এক বৃন্তের সেই সেই ফুলগুলো কখন
                   যেনো বৃন্তচ্যূত হয়ে গেছে!
       মনুষ্যত্বহীন ধর্ম আর দেশবিহীন দেশপ্রেমের
              তাণ্ডবে আমি আজ বড়ো অসহায়!


         আজ অবসন্ন জ্যৈষ্ঠের এগারোয় থেমে গেছে  
  'সিন্ধু- হিন্দোল'; ---- 'ভাঙ্গার গানে' সেই সুর জাগে না
    তাই তোমার 'খেয়া পারের তরনী'তে বসে কায়মনে  
       প্রার্থনা করি---- "বাঙ্গালির জীবনে আর কোন
        'তিথ্লী', 'ফণী' বা আমফান্ নয় হে স্রষ্টা,  -----  
           বাংলার আকাশে আরও একবার
              নেমে আসুক একটা জ্যৈষ্ঠের ঝড়,
                           অন্তত আরও একটিবার!"
                    
                                       ---- খছরুজ্জামান্