প্রনোদনা
.......
ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছি  
আদৃত অক্ষরগুলো ছড়ানো ছিটানো
নিদ্রালু অক্ষরবৃত্তের সুরম্য মায়াজালে
অনুভূতি একটি আত্মার মতো দেহ খুঁজে বেড়াচ্ছে।
আকাশ এখন আর ছাদ নয়
একটি গহ্বর যেন গিলে ফেলতে চায় পৃথিবীকে
দরোজার কপাট ঝুলে পড়ছে
খুলে পড়ছে সামাজিক বিন্যাস...
চতুর করোনা রূপ বদল করে বার বার
যৌতুককামীর লোভের লালার মতো
টিকা পরীক্ষার সাথে পাল্লায় মৃত্যুর মিছিল
বন্দিত্বের শিকল আগলে থেকে অস্তিত্বে সরব  জীবন প্রিজম
অনাগত ভবিষ্যৎমুখী বাছুর লেজ নেড়েচেড়ে দৌড়াচ্ছে  
ছায়া-রোদে বনের বারান্দা আর জলার নালীমুখ...
আঁষ্টে সময়ের গ্যাঁড়াকলে  মনুষ্য-কূল
মনপোড়াগন্ধ পোড়াদিনরাত
ভীতিকর পথ ধরে  চলতে কি পারে আস্ত জীবন!
প্রিয় ঠোঁটের কাছ থেকে সরিয়ে রেখেছি ঠোঁট
নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন
যেন  "আড়ি আড়ি" খেলার ঘোরে অভিমানী মুখ সরিয়ে রাখা...
হাতের তালুতে টলটলে জলের মতোই এখন সময়
অথবা বাইম মাছ
কাঁটা ও পিচ্ছিল...
নিশিগন্ধা নদীর পাড়ে শকুনি জটলা
সোনালু বৃক্ষ থেকে ঝরছে মরিচার ফুল।


অস্তিত্ব মাংসের দলার মতো    
কত যে লম্প ঝম্প ছিল একদা
কালের পৃষ্ঠায় চিঁড়ে চ্যাপটা
উদ্ধার বটিকা খোঁজে সভ্যতা
যেন কিছুই শিখেনি
" এক পা যেতে দুই পা টলে তিন পা যেতে ঝুপ "
অক্ষরে অক্ষরে লিখি ভুলে যাওয়া নাম
আমরা নিজস্ব কোয়ারান্টাইনে
হাত ধুতে ধুতে ধুয়ে ফেলি সময়কে...
মুখ দেখতে গিয়ে দেখি
মৃত্যু, দহন, অন্ধকারে, চরিত্রহীন করোনা-ছায়া শোবার ঘরের  আয়নায়।



করোনা করুণ


শব্দের ঝনাৎকারে মৃত্যুর তুফান
কাল বধির
হাসি যেন ছুঁড়ে দেয়া পেন্ডুলাম।
প্রিয়জন
তোমার পদ শব্দে শিউরে উঠি
প্রিয় শব্দরা হারিয়ে গেছে
,ভুলে যাচ্ছি স্পর্শ-কাল...
পাখির ডাকের সাথে মুমূর্ষু  দিন
ভোরের ডাকের সাথে করোনা মিছিল
নিঃসঙ্গতাই কাম্য আজ
স্পর্শ নয়, নয় কাছাকাছি
ধ্যান ও মৌনতা
দোর বন্ধ ও বন্দী থেকে আমরা বুঝতে পারি পথ কত দীর্ঘ।  
কত দীর্ঘ নদীর ঘ্রাণ, মালতী লতার ঝোপ
কুন্দলের ঝুলে পড়া দোল দোল।
ততদিনে আমরা কি ভুলে যাব স্পর্শের কেঁপে ওঠা
গুন টানা সময়ের নাভিতে রাখা স্মৃতির অঙ্কুরিত বিটপ
বিশ্ব এক হয়েছে মহান একাকীত্বের
কোয়ারান্টাইন  সময় ও আমাদের আমলনামা
একই বেদনাবহ  গুচ্ছ গুচ্ছ হাহাকার



কোথাও কোন কোলাহল নেই

ভয় অবিরত তাড়া করছে
একটি অতিসূক্ষ্ম ভাইরাস  
আর মৃত্যু হাজার থেকে লক্ষ
সামর্থহীন, ভীত ঘরে আবদ্ধ মানবকূল
যদিও কিছু ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারি ভারী করছে বাতাস
সাথে দুর্নীতিবাজদের চালচিত্র
অহংকার ও অত্যাচারের দুর্দমনীয় রিপু...
শূন্যতায় ভেসে যায় যাবতীয় শব্দাবলী
এখন এখানে রাত্রির হালখাতা
নিজেরাই পুড়িয়ে দিয়েছি ভবিষ্যৎ
পরিবেশবিদগণ বলছে পরিবেশবান্ধব করোনা...
শিশুরা ভয়ার্ত চোখে দেখে পরিবর্তন এর রূপরেখা
যারা শস্য ও ফুলের চাষ করতো,  
যারা কাঁটা ও খন্দকের ধ্যান
এ বেলায় সবাইকে পাঠিয়ে দিয়েছি কোয়ারেন্টাইনে...
শহর-গ্রাম শুনসান
যন্ত্র দানবেরা পরিবেশ দূষণ ক্ষান্ত দিয়ে  জিরোচ্ছে
নিরাপদ দূরত্বে থেকে রোজকার বাজার সারে গৃহস্থ
প্রিয়জনের সান্নিধ্যে প্রিয় হোক প্রহর।
কোথাও কোলাহল নেই
কোথাও কোলাহল নেই আর...



বেলা অবেলা


বহুদনি কোথাও যাই না
এ করোনা ধরিত্রী
নদীর ধারে বেড়াবার পিলসুজ ইচ্ছাটাকে উস্কে দিও না।
ওখানে খরস্রোতা ঢেউ বইছে
স্রোতের মাস্তুলে তীরভাঙা নাদ
জলের গভীরে লঞ্চ-ডোবা ক্রন্দন
কার শোক ব'য়ে ব'য়ে কাটে কার বেলা!


কোথাও যেতে মানা আছে
স্মৃতির জাবর কেটে উড়ে যায় মহুয়া মলয়
কোথাও ঘুনে ধরা ফুল
ঢোল- কলমী ইচ্ছে অসুখ
ত্রাসের ভেতরে বার বার হাতধোয়া দিনরাত...
তবুও  মৃতরা লাইনে দাঁড়ায়!


কতদিন তুমিও আসো না
ডাক হরকরা বেঁধে নেয় আগেভাগে
পুরনো চিঠির পাঠে মৃগচোখ
গাঁট-বাঁধা ছিল শতকোটি ছায়াপথ
ঝড় কে ভেঙেছি তো বার বার…